জাতীয় সংবাদ

বেনাপোল এক্সপ্রেসে অগ্নিসংযোগ : বিএনপি নেতা নবী কারাগারে

প্রবাহ রিপোর্ট : রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনার মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ নবী উল্লাহ নবীসহ দুজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। কারাগারে পাঠানো অন্য আসামি হলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্য মুনসুর আলম। গতকাল শনিবার তিনদিনের দিনের রিমান্ড শেষে তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগে বুধবার ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জুলহাস উদ্দিনের আদালতে আসামিদের হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঢাকা রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ ফেরদাউস আহম্মেদ বিশ্বাস। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক আসামিদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত মঙ্গলবার ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাবেয়া সুলতানার আদালতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঢাকা রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ ফেরদাউস আহম্মেদ বিশ্বাস। আদালত এ বিষয়ে শুনানির জন্য বুধবার দিন ধার্য করেন। এদিন ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জুলহাস উদ্দিন তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। এর আগে গত ৫ জানুয়ারি রাত ৯টার দিকে যশোর থেকে ছেড়ে আসা বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকায় পৌঁছালে চলন্ত অবস্থায় আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় পরদিন ওই ট্রেনের পরিচালক (গার্ড) এসএম নুরুল ইসলাম (৫৭) বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ৫ জানুয়ারি দুপুর ১টায় বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি বেনাপোল রেলস্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করে। ট্রেনটি রাত আনুমানিক ৯টার সময় সায়েদাবাদ এলাকায় পৌঁছানো মাত্র ট্রেনের ৭৯৩৭ নম্বর কোচের বগি ‘চ’ তে ধোঁয়া দেখে চিৎকার শুরু করেন যাত্রীরা। তখন ওই বগিতে ডিউটিতে থাকা মোহাম্মদ আলী ‘আগুন আগুন’ বলে চিৎকার করে যাত্রীদের সতর্ক হতে বলেন। একই সঙ্গে ট্রেনের শিকল টেনে থামানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় ভ্যাকুয়াম প্রেস করে ট্রেনটি থামানো হয়। মামলায় আরও বলা হয়, রাত আনুমানিক ৯টা ২ মিনিটের দিকে গোপীবাগ ও গোলাপবাগের মাঝামাঝি জামে মসজিদের সামনে ট্রেনটি থামে। ততক্ষণে আগুন দাউ দাউ করে ‘চ’ বগি থেকে ‘ছ’ বগিতে এবং ‘পাওয়ার কার নম্বর ৭৫২৬ ‘ভ’ বগিতে ছড়িয়ে পড়ে। তখন আমি (মামলার বাদী) তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করে ট্রেনে থাকা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করি। এ ছাড়া জরুরি ভিত্তিতে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক টিম পাঠানোর অনুরোধ করি। তিনি আরও উল্লেখ করেন, অল্প সময়ের মধ্যেই ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায়। ফায়ার সার্ভিস রেলওয়ে পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি), ডিএমপি পুলিশসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজনের সহায়তায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে ট্রেনের তিনটি বগির আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এজাহারে বলা হয়, আগুন নেভানোর পর ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল, রেলওয়ে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আরএনবি ও ডিএমপি পুলিশের সহায়তায় তল্লাশি চালিয়ে ‘চ’ বগি থেকে একজন নারীসহ চারজনের বিকৃত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ট্রেন থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ১০-১২ জন যাত্রী গুরুতর আহত হন। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানতে পারি। পরে রেলওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা লাশগুলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠায়। এদিকে ৯ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ী থানার বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় তিনদিনের রিমান্ড শেষে আসামি নবীকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। ট্রেন অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর ওই রাতেই (৫ জানুয়ারি) নবীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরের দিন ৬ জানুয়ারি তার তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button