যে কারণে হঠাৎ পাকিস্তানে হামলা চালাল ইরান

প্রবাহ রিপোর্ট ঃ সম্প্রতি কয়েক দিন ধরে ইরাক ও সিরিয়ার ভূখ-ে হামলা চালাচ্ছে ইরান। মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তানের ভূখ-ে বিমান হামলা চালিয়েছে তেহরান। এতে দুই শিশু নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন। পাকিস্তান সরকার এমন হামলাকে ‘সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’ বলে প্রতিবাদ জানিয়েছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘বিধিবহির্ভূতভাবে’ হামলার অভিযোগ সামনে আনার পর প্রশ্ন উঠেছে, হঠাৎ পাকিস্তানের ভূখ-ে কেন হামলা চালাল ইরান? তেহরানের দাবি, ইরানবিরোধী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর’ বিরুদ্ধে এসব হামলা চালানো হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, ইরাক ও সিরিয়ার পর একই কারণে পাকিস্তানের ভূখ-ে ইরানের এই হামলা চালাল। হামলা নিয়ে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম নুর জানিয়েছে, পাকিস্তানের ভূখ-ে হামলা চালিয়ে জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ আল-আদলের সদর দপ্তর ধ্বংস করা হয়েছে। ২০১২ সালে জইশ আল-আদল প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ইরানে কালো তালিকাভুক্ত একটি ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ইরানের মাটিতে বেশ কয়েকটি হামলার পেছনে জইশ আল-আদলকে দায়ী করা হয় নুর নিউজ জানিয়েছে, সম্প্রতি ‘সন্ত্রাসীদের’ স্থাপনা ও তাদের ‘গোয়েন্দা সদর দপ্তরে’ হামলা চালাচ্ছে ইরান। এ জন্য সিরিয়া ও ইরাকের কুর্দিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানের ভূখ-ে হামলা চালানো হয়েছে।
ইরানের এসব হামলা আগে থেকে উত্তপ্ত মধ্যপ্রাচ্যকে নানা সংকটের মুখোমুখি দাঁড় করাতে পারে। তিন মাসের বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। অসহায় ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতিশীল ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে পশ্চিমা বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালাচ্ছে। এর জেরে ইয়েমেনে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। এখন নিজেদের ভূখ-ে ইরানের হামলার পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে বিবৃতি দিয়েছে, তাতে কোথায় হামলা হয়েছে, সে সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। তবে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম বলছে, হামলা হয়েছে ইরানের সীমান্তবর্তী বেলুচিস্তান প্রদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাঞ্জগুরের পাশে। বেলুচিস্তান প্রদেশের সঙ্গে ইরানের প্রায় এক হাজার কিলোমিটারের সীমান্ত রয়েছে। আনোয়ারুল হক কাকার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদুল্লাহিয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কাকার এখন বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনে অংশ নিতে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে রয়েছেন। সেখানেই সম্মেলনের এক ফাঁকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এই বৈঠকের রেশ না কাটতে হামলার খবর সামনে এসেছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। এর পরিণাম গুরুতর হতে পারে।’ আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশের পরপরই ইসলামাবাদে নিযুক্ত ইরানের শীর্ষ কূটনীতিককে তলব করে পাকিস্তান সরকার। গত বছরের ডিসেম্বরে ইরানের রাস্কে একটি পুলিশ স্টেশনে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ইরানের অন্তত ১১ পুলিশ সদস্য প্রাণ হারান। ওই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে নিয়েছিল জইশ আল-আদল। জাতিসংঘের দৃষ্টিতেও জইশ আল-আদল একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। ইরান ও পাকিস্তান জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার জন্য প্রায়ই পরস্পরকে দোষারোপ করে থাকে। বলা হয়ে থাকে, একটি দেশে ঘাঁটি তৈরি করে জঙ্গিরা অন্য ভূখ-ে হামলা চালায়। তবে এসব ঘটনায় দুপক্ষের সরকারি বাহিনীগুলোর জড়িত হওয়ার ঘটনা বিরল। এ বিষয়ে এক্স বার্তায় ওয়াশিংটনভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ইরান আগেও পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আন্তসীমান্ত অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু এবারের মতো কোনো অভিযানের কথা মনে করতে পারছি না। এটা পাকিস্তান ও ইরানের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে ডোবাতে পারে। এমনকি সবচেয়ে ভালো সময়েও এটা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে গুরুতর সংকট তৈরি করতে পারে।