জাতীয় সংবাদ

দেশের মোট আয়তনের ১৫.৫৮ শতাংশ বনভূমি : সংসদে পরিবেশমন্ত্রী

প্রবাহ রিপোর্ট : পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, দেশের মোট আয়তনের ১৫ দশমিক ৫৮ ভাগ এলাকায় বনভূমি রয়েছে। বনভূমির পরিমাণ বাড়াতে জবরদখলকৃত বনভূমি উদ্ধারের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে প্রশ্ন উত্তর পর্বে আওয়ামী লীগের সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরীর এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী এ কথা জানান। সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, দেশের মোট আয়তনের ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ এলাকায় বনভূমি রয়েছে। বন অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রিত বনভূমির পরিমাণ ১০ দশমিক ৭৪ শতাংশ। দেশের বনভূমির পরিমাণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে জবরদখলকৃত বনভূমি উদ্ধারে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনে প্রেরিত উচ্ছেদ প্রস্তাব ৭,৩৭৬ টি, জেলা প্রশাসন কর্তৃক রুজুকৃত উচ্ছেদ মামলা ১৩টি, নিম্ন আদালতে দেওয়ানী মামলা ৮৫২টি, উচ্চ আদালতে রিট মামলা ১২২টি, উচ্চ আদালতে আপিলমিস মামলা ৮৭টি, পিওআর মামলা সাত হাজার ৫৩২ টি ও অন্যান্য ব্যবস্থায় ছয় হাজার ১৩০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বন অধিদপ্তরের নিজস্ব উদ্যোগে ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত ২৬ হাজার ৪৭৪ দশমিক ০৭ একর জবরদখলকৃত বনভূমি পুনরুদ্ধারপূর্বক বনায়ন করা হয়েছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট আট হাজার ২০০ একর জবরদখলকৃত বনভূমি পুনরুদ্ধার করে বনায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, সরকারের এসডিজি এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (২০২১-২০২৫) বাস্তবায়নে বন অধিদপ্তর কর্তৃক দেশব্যাপী বনাচ্ছাদন ও বৃক্ষাচ্ছাদনের পরিমাণ ২০২৫ সালের মধ্যে যথাক্রমে ১৫ দশমিক ২ এবং ২৪ শতাংশে উন্নীত করা হবে। এই পরিকল্পনার আওতায় শালবনের জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারে সাত হাজার ২২০ হেক্টর সমতলভূমি এবং এক লাখ ৩০ হাজার ৫৮০ হেক্টর পাহাড়ি অবক্ষয়িত বনভূমিতে বনায়ন; ৫০০ হেক্টর আগর বাগান; ১৫ হাজার কিলোমিটার স্ট্রিপ বাগান সৃজন এবং স্থানীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে বন ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়াও বনায়ন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৪ হাজার ৪৯৮ দশমিক ৫ হেক্টর ব্লক ও ১,৭০১ কিলোমিটার স্ট্রিপ বাগান এবং নয় হাজার ৪০৫ হেক্টর ম্যানগ্রোভ বাগান সৃজন করা হয়েছে বলেও জানান সাবের হোসেন চৌধুরী।
আওয়ামী লীগের সদস্য নূর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে তিনি জানান, নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন উৎপাদন ও ব্যবহারের অপরাধে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ২ হাজার ৫১৬টি অভিযান পরিচালনা করে ৪ হাজার ২০৭টি মামলায় ৬ কোটি ১৭ লাখ ৮৭ হাজার ২৫০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। সাবের হোসেন চৌধুরী জানান, ১৭০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে বিনাশ্রম কারাদ- এবং ২ হাজার ৭১ দশমিক ৩৭ মেট্রিক টন পলিথিন, দানা ও কাঁচামাল জব্দ করা হয়েছে। এছাড়াও ১৬টি নিয়মিত মামলা করা হয়েছে। জনসচেতনতা বাড়াতে নানাবিধ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরিবেশমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে পরিবেশের ওপর প্লাস্টিক পণ্যের বিরূপ প্রভাব নিয়ন্ত্রণে প্লাস্টিক পণ্যের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব পচনশীল প্লাস্টিকের ব্যবহার প্রচলনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সারা দেশের কঠিন বর্জ্যরে সুষ্ঠু ও পরিবেশসম্মত ব্যবস্থাপনার জন্য ইতোমধ্যে সরকার ‘কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০২১’ প্রণয়ন করেছে। সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে হাইকোর্টের আদেশের প্রেক্ষিতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিগত ২১ জুন ২০২১ তারিখে উপকূলীয় অঞ্চলের ১২ জেলার ৪০টি উপজেলাকে কোস্টাল এরিয়া হিসেবে চিহ্নিত করে ওই এলাকায় সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে ৩ বছর মেয়াদী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। পলিথিনের ক্ষতিকর দিক বিবেচনায় সরকার ইতোমধ্যে পরিবেশ বিনষ্টকারী পলিথিনের উৎপাদন ও বিপণন কার্যক্রম এবং ব্যবহার বন্ধে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ এ বিধি নিষেধ আরোপ করেছে। আইন অনুযায়ী ক্ষেত্র বিশেষে বিভিন্ন পুরুত্বের পলিথিনের উৎপাদন ও বিপণন কার্যক্রম এবং ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরিবেশমন্ত্রী বলেন, পলিথিন বন্ধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন শপিং ব্যাগ বন্ধে অধিদপ্তরের নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট বা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা। তাছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তরের এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রমের আওতায় জুলাই ২০১০ থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন উৎপাদনকারী কারখানাসমূহ উচ্ছেদ বা কারখানার মালিকের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা হচ্ছে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button