জাতীয় সংবাদ

ভিকারুননিসার শিক্ষক মুরাদ একাধিক শিক্ষার্থীর যৌন নিপীড়ক

প্রবাহ রিপোর্ট ঃ এক ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে আজিমপুর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ শাখার জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন সরকারকে (৪৮) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপ তদন্তে জানা গেছে তিনি একাধিক শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন সময় যৌন নিপীড়ন করেছেন। কোচিং শেষে দীর্ঘ দিন ধরে এই শিক্ষকের চালানো এমন অপরাধের বিষয়ে ভয়ে মুখ খুলেনি কেউ। অবশেষে ওই স্কুলের অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত একজন ভুক্তভোগী ছাত্রীর মায়ের অভিযোগের পর শিক্ষক মুরাদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, ৪৮ বছর বয়সী গ্রেপ্তার শিক্ষক মুরাদ একাধিক ছাত্রীদের শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়েছে। সর্বশেষ গত বছরের ১৯ নভেম্বর স্কুলে পরীক্ষা শেষে শিক্ষক মুরাদের কোচিং সেন্টারে পড়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় একজন ছাত্রীকে। বিকেলে কোচিং শেষে অন্য ছাত্রীরা চলে গেলেও একজন ছাত্রীকে শিক্ষক মুরাদ কৌশলে বসিয়ে রেখে নামাজের রুমে যেতে বলে। এরপর তাকে যৌন নির্যাতন করে। পরে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে মুরাদ বলে- আমি তোমার বাবার মতো। এই ঘটনা জানাজানি হলে তোমার মা-বাবার সম্মানহানি হবে এবং স্কুল থেকে তোমাকে বের করে দিবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, আজিমপুর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ শাখার জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন সরকার কোচিং শেষে একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছে। অল্প বয়স্ক এসব ছাত্রীরা ভয়ে প্রকাশ করেনি। একজন ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা শিক্ষক মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন সরকারের এ ধরনের অশালীন আচরণের ঘটনা স্কুল কর্তৃপক্ষের নজরে আনেন। গত ৩ ফেব্রুয়ারি ভুক্তভোগী ছাত্রীর মাসহ আরও বেশ কয়েকজন অভিভাবক নিজ নিজ সন্তানসহ স্কুল কর্তৃপক্ষ স্কুলে ডেকে নিয়ে আসে। অভিভাবকসহ স্কুলের সাবেক ও বর্তমান অধ্যয়নরত অনেক মেয়ের সঙ্গে একই অশালীন আচরণ করে শ্লীলতাহানী করেছেন বলে বেশ কয়েকজন ছাত্রী জানায়। আরও অনেক ছাত্রীদের সঙ্গে এই ধরণের অশালীন কার্যকলাপের বিষয়টি প্রকাশ পেলে স্কুলের প্রাক্তন এবং বর্তমান অসংখ্য ভুক্তভোগী ছাত্রী ও অভিভাক শিক্ষক মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি স্কুলের সামনে মানববন্ধনসহ বিক্ষোভ এবং প্রেসক্লাবে প্রেস কনফারেন্স করেন। ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা মামলা দায়েরের পর গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাত ১টার দিকে কলাবাগান থানা এলাকা থেকে অভিযুক্ত শিক্ষক মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন সরকারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন, দুটি সিম কার্ড এবং একটি ল্যাপটপ জব্দ করা হয়। এছাড়া একাধিক ছাত্রীর বেশকিছু অডিও রেকর্ডিং ও কথোপকথনের তথ্য পাওয়া গেছে। যা যাচাই-বাচাই অব্যাহত আছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নারী ও শিশুর বিষয়ে পুলিশ অত্যন্ত সংবেদনশীল। এ ধরনের ঘৃণ্য অপরাধ যদি কেউ করে থাকে তাহলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। যেসব শিক্ষার্থী স্কুল-কোচিংয়ে যাচ্ছে তারা স্বাভাবিকভাবে যাবে, ডিএমপি এক্ষেত্রে বদ্ধ পরিকর। ভিকারুন্নেসা স্কুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পেশাগত অবহেলা রয়েছে কি-না জানতে চাইলে ড. মহিদ বলেন, ব্যক্তির দায় কখনো প্রতিষ্ঠান নেয় না। প্রতিষ্ঠানটিতে আরও অনেকে চাকরি করেন। তারা নিশ্চিয় এমন আচারণ করছেন না। একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাদের যে আচরণ করা দরকার তারা সেটাই করছেন। বিক্ষিপ্তভাবে একজন শিক্ষক যদি এ ধরনের কাজ করেন সে দায়ভার তো অন্য শিক্ষক নেবে না। একই প্রতিষ্ঠানে এমন অভিযোগে তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত হয়েছে। সেই তদন্তে তাদের দায় মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এই দায় মুক্তি পুলিশের তদন্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার মহিদ উদ্দিন বলেন, এটি একটি একাডেমিক বিষয়। তদন্তের বিষয়গুলো প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং কমিটি রয়েছে। তাদের দায়িত্বাধিন যে জায়গাগুলো আছে সেগুলো তারা দেখবেন। তবে ফৌজদারি বিষয়গুলো আমাদের অংশ। এই বিষয়গুলো আমরা দেখছি। আমাদের কর্মকর্তারা নারী ও শিশুদের প্রতি অত্যন্ত সহমর্মিতা ও ভালোবাসা দেখায়। ফলে এটা আমরা দায়িত্ব নিয়ে আমরা তদন্ত করবো। এদিকে ছাত্রীদের যৌন নিপীড়নের অভিযোগে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর দিবা শাখার সিনিয়র শিক্ষক মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন সরকারকে দুই দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসীম তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button