জাতীয় সংবাদ

প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কার পেলেন খুলনার গর্ব হিজড়া পাখি

প্রবাহ রিপোর্ট ঃ সমাজ ও নারী জাগরণে বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য পাঁচ নারী পেয়েছেন ‘শ্রেষ্ঠ জয়িতা সম্মাননা-২০২৩’। ৮ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অনুষ্ঠানে তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই পাঁচ নারীর একজন হলেন খুলনার পাখি দত্ত হিজড়া। প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার পেয়ে ভীষণ খুশি তিনি। প্রতিকূলতা ও চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে সামাজিক উন্নয়ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় পর্যায়ে এ পুরস্কার পেয়েছেন পাখি দত্ত। এর আগে সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখায় গত ২০২৩ সালের ৯ ডিসেম্বর খুলনা জেলা পর্যায়ে এবং চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি খুলনা বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মাননা পান পাখি দত্ত। জানা যায়, খুলনার ডুমুরিয়ার মিকশিমিল গ্রামে জন্ম পাখি দত্তের। বেড়ে ওঠা খুলনার দৌলতপুর এলাকায়। এখন থাকেন খুলনা নগরের সোনাডাঙ্গা এলাকায়। মাত্র সাড়ে ১৩ বছর বয়সে ‘হিজড়া’ পরিচয়ের জন্য তাকে বাবা-মাসহ পরিবার ছাড়তে হয়। নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলার একটা সময়ে ২০১৭ সালে জাতীয় পর্যায়ের বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন ’বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির’ একটি প্রকল্পে কাজ শুরু করেন। এ কাজের মধ্য দিয়ে হিজড়া পাখি উপলব্ধি করেন সমাজে যারা পিছিয়ে আছেন বিশেষ করে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য তাকে কিছু করতে হবে। পাখি দত্ত বলেন, মানুষ প্রায় সময় দুর্বলচিত্তের লোকের ওপর অত্যাচার করে। বিশেষ করে হিজড়ারা সব ক্ষেত্রে অবহেলা ও অত্যাচারের শিকার হয়। আমরা যদি তাদের প্রতি আন্তরিক হই তারা আরেকটু ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারে। আমার উঠে আসা খুব কঠিন ছিল। আমি হিজড়া কমিউনিটির মানুষ; ছোটবেলা থেকেই আমার পথ চলাটা ছিল অন্যরকম। কখনো কল্পনাও করিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কার পাব। হিজড়া গোষ্ঠী থেকে উঠে এসে আজ আমি এতটা সম্মানিত, এর চেয়ে জীবনে খুশির আর কী হতে পারে। তিনি আরও বলেন, মানুষ যখন পুরস্কার পায় তখন কাজের স্পৃহা আরও বেড়ে যায়। এই পুরস্কার আমাকে আরও দায়িত্ব বাড়িয়ে দিল। আমি ভবিষ্যতে সমাজের জন্য, নারীদের জন্য, আমার হিজড়া কমিউনিটির জন্য আরও ভালো ভালো কাজ করার চেষ্টা করব। আরও ভালো কাজের দৃষ্টান্ত রাখার চেষ্টা করব। এই পুরস্কার আমাকে ভবিষ্যতে আরও ভালো কাজের প্রেরণা যোগাবে। এমন একটা প্রতিষ্ঠান গড়তে চাই যার মাধ্যমে হিজড়া সম্প্রদায়ের সদস্যদের যথাযথ কর্মসংস্থান হবে। পাখি জানান, ২০১৮ সালে ঝুঁকি নিয়ে ১১ জন সমমনা বন্ধুর সহযোগিতায় ‘নক্ষত্র যুব মানব কল্যাণ সংস্থা’ নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে তোলেন তিনি । সমাজের পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ হিজড়া-লৈঙ্গিক বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীসহ সব প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও তাদের স্বাবলম্বী করা এ সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা হয়। যাতে করে তারা সমাজের মূলধারায় ফিরে এসে সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারেন। আর এ সংগঠনের মাধ্যমেই তিনি সমাজ উন্নয়নে নানাবিধ কাজ করে চলেছেন। এরই মধ্যে পাখিদের সংগঠনের সঙ্গে প্রায় ৩৫০ হিজড়া এবং চার শতাধিক পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের মানুষ যুক্ত হয়েছেন। সংস্থাটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পিছিয়ে পড়া হিজড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে কাজ করছে। বর্তমানে ‘নক্ষত্র যুব মানব কল্যাণ সংস্থার’ সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন পাখি। পাখি দত্তের সঙ্গে জয়িতা পুরস্কারপ্রাপ্ত অন্য চারজন হলেন- আনার কলি (অর্থনৈতিক), কল্যাণী মিঞ্জি (শিক্ষা ও কর্মসংস্থান), কমলি রবি দাশ (সফল মা), জাহানারা বেগম (নিপীড়ন প্রতিরোধ)। পুরস্কারপ্রাপ্তদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকার চেক, ক্রেস্ট, উত্তরীয় ও সনদপত্র দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button