পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস আজ

প্রবাহ রিপোর্ট : কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি পালনে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা এবং এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশে আজ রোববার ‘পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস’ উদযাপিত হবে। এবারের প্রতিপাদ্য ‘সুস্থ শ্রমিক, শোভন কর্মপরিবেশ, গড়ে তুলবে স্মার্ট বাংলাদেশ।’ গতকাল শনিবার রাজধানীর বিজয়নগরস্থ শ্রম ভবনের সম্মেলনকক্ষে জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস এবং গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড দেওয়া উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী এ কথা জানান। শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০০৩ সাল থেকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার উদ্যোগে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর ২৮ এপ্রিল ‘বিশ্ব কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য দিবস’ পালিত হয়। বাংলাদেশে ‘জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি নীতিমালা ২০১৩’ অনুযায়ী ২০১৬ সাল থেকে শুরু করে প্রতিবছর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশে জাতীয়ভাবে ২৮ এপ্রিল ‘পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস’ উদযাপন করা হচ্ছে। কর্মক্ষেত্রে পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি সংক্রান্ত বিধিবিধান পালনকে সংস্কৃতি হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এ দিবসে ঢাকাসহ দেশের সব শ্রমঘন এলাকায় প্রচারণামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। তিনি আরও বলেন, একইদিন দেশের ১২টি সেক্টরের ২৯টি কারখানা/প্রতিষ্ঠানকে ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড-২০২৩’ দেওয়া হবে। ১২টি সেক্টর হলো- তৈরি পোশাক (ওভেন), তৈরি পোশাক (নিট), টেক্সটাইল, চা, সিমেন্ট, প্লাস্টিক, চামড়া (ফিনিশড গুডস), চামড়া (ট্যানারি), ফার্মাসিউটিক্যালস, টাইলস অ্যান্ড সিরামিক, ইলেক্ট্রিক অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য প্রস্তুতকারক, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ। বিজয়ী কারখানা ও প্রতিষ্ঠানসমূহ পুরস্কার হিসেবে এক লাখ টাকা, একটি ক্রেস্ট, একটি মেডেল ও একটি সার্টিফিকেট পাবেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করছি এর মাধ্যমে বাংলাদেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানের শিল্প ও পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরি সহজতর করবে। পাশাপাশি আমাদের শ্রমিক ভাই-বোনদের জীবনমান উন্নয়ন ও কলকারখানার কর্মপরিবেশ কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নীত করা সম্ভব হবে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রোববার আলোচনা সভা, স্যুভেনির প্রকাশ, পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ, টেলিভিশনে টকশো, জেলায় জেলায় ট্রাক শো, পোস্টারিংসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কদ্বীপ ও স্থানসমূহ সজ্জিতকরণ এবং শোভাযাত্রার আয়োজন করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত অধিদপ্তরের ৩১টি উপ-মহাপরিদর্শকের কার্যালয়ের অধিক্ষেত্রে শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা এবং অন্যান্য জেলাগুলোতে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় দিবসটি পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এদিন সকাল ১০টায় খামার বাড়ি, খেজুর বাগান, থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে গিয়ে শেষ হবে। শোভাযাত্রা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং অধীন দপ্তর ও সংস্থার প্রতিনিধি, কারখানা ও প্রতিষ্ঠানের মালিক ও শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও সংগঠনের প্রতিনিধিসহ সচেতন নাগরিকরা অংশগ্রহণ করবেন। দিবসটি উপলক্ষে ২৮ এপ্রিল বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী। সভায় সভাপতিত্ব করবেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাহবুব হোসেন। এছাড়া শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সম্মানিত সভাপতি, সদস্য, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার সচিব, আইএলও, জিআইজেডসহ উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্র ও সংস্থার প্রতিনিধি, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, জাতীয় শ্রমিক লীগ নেতা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং দপ্তর/সংস্থার প্রতিনিধি, মালিক ও শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।
গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছে ১২ খাতের ২৯ প্রতিষ্ঠান: ‘পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি’ দিবসে দেশের ১২টি খাতের ২৯টি কারখানা/প্রতিষ্ঠান পাচ্ছে ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড-২০২৩’। তৈরি পোশাক (ওভেন) খাতে সাভার আশুলিয়ার এআর জিনস প্রডিউসার লিমিটেড, ঢাকাস্থ ধামরাই-এর মাহমুদা অ্যাটার্স লিমিটেড, গাজীপুর ভাবানীপুরের ইভিটেক্স ড্রেস শার্ট লিমিটেড সাভার আশুলিয়ার ডিজাইনার ফ্যাশন লিমিটেড ও আশুলিয়ার জিরাবোর সাউদার্ন গার্মেন্টস লিমিটেড রয়েছে।
তৈরি পোশাক (নিট) খাতে রয়েছে সাভারের পাকিজা নিট কম্পোজিট লিমিটেড, নারায়ণগঞ্জ মদনপুরের ইপিলিয়ন নিটওয়্যারস লিমিটেড, গাজীপুর শিকদার বাড়ির লায়লা স্টাইল লিমিটেড, কালিয়াকৈরের জিএমএস টেক্সটাইল লিমিটেড, গাজীপুর কড্ডা নান্দুনের জেনেসিস ফ্যাশন্স লিমিটেড ও গাজীপুর কাশিমপুরের অকো টেক্স লিমিটেড।
টেক্সটাইল খাতে জায়গা করে নিয়েছে চট্টগ্রাম পটিয়ার ফোর এইচ ডায়িং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেড, ময়মনসিংহ ভালুকার এনভয় টেক্সটাইলস লিমিটেড ও উত্তর পাহাড়তলীর পাহাড়তলী টেক্সটাইল অ্যান্ড হোসিয়ারি মিলস।
চা খাতে মৌলভীবাজার শ্রীমঙ্গলের মির্জাপুর চা বাগান, কুলাউড়া শমশেরনগরের চাতলাপুর চা কারখানা, শ্রীমঙ্গলের জেরিন চা বাগান ও কুলাউড়ার গাজীপুর চা বাগান পাচেছ এবারের পুরস্কার।
চামড়া (ফিনিশড গুডস) খাতে ধামরাই ইসলামপুরের বাটা সু কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড, কালিয়াকৈরের এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড, এফ বি ফুটওয়্যার লিমিটেড রয়েছে তালিকায়।
চামড়া (ট্যানারি) খাতে রয়েছে যশোর অভয়নগরের এস এ এফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
সিমেন্ট খাতে সুনামগঞ্জ ছাতকের লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড ও নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জের হাইডেলবার্গ সিমেন্ট বাংলাদেশ লিমিটেড রয়েছে।
প্লাস্টিক খাতে আছে হবিগঞ্জ শায়েস্তাগঞ্জের বঙ্গ বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস লিমিটেড।
ফার্মাসিউটিক্যালস খাতে গাজীপুর টঙ্গীপাড়ার বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।
টাইলস অ্যান্ড সিরামিক খাতে গাজীপুর কাশিমপুরের শাইনপুকুর সিরামিকস লিমিটেড।
ইলেক্ট্রিক অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য প্রস্তুতকারক খাতে গাজীপুর কালিয়াকৈরের চন্দ্রার ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ।
খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতে রয়েছে ধামরাই বারবাড়ীয়ার আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড।
সংবাদ সম্মেলনে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী, শ্রম সচিব মো. মাহবুব হোসাইন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক আব্দুর রহিম খানসহ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।