কুমিল্লায় বাস খাদে পড়ে নিহত ৫
প্রবাহ রিপোর্ট : কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যাত্রীবাহী একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। বাসটি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ছিল। গতকাল শুক্রবার সকালে মহাসড়কের বসন্তপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত নিহত তিন জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। দূরপাল্লার পরিবহন হওয়ায় বাকি দুজনের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি। নিহতরা হলেন- কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার মতিউর রহমানের ছেলে মোহাম্মদ হোসেন (৩০), চট্টগ্রামের বাশখালীর বাহারছড়া গ্রামের নুরুল আবসারের ছেলে বদরুল হাসান রিয়াদ (২৬) এবং নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার সাহাপুর গ্রামের মৃত মোখলেছুর রহমানের ছেলে নাসির উদ্দিন পলাশ (৪০)। ঢাকা থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ যাচ্ছিল রিল্যাক্স পরিবহনের ডাবল ডেকার বাসটি। পথে চৌদ্দগ্রামে দুর্ঘটনার শিকার হয়। যাত্রী, স্থানীয় বাসিন্দা ও হাইওয়ে পুলিশের সূত্র বলছে, বাসের বেপরোয়া গতির কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। যাত্রীদের বারবার অনুরোধের পরেও চালক তার বেপরোয়া গতি অব্যাহত রেখেছে যে-কারণে খালি সড়কে ঝরেছে পাঁচ প্রাণ। দুর্ঘটনাকবলিত রিল্যাক্স বাসের বেঁচে যাওয়া যাত্রী ঢাকার নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র রাঙ্গামাটির আরজ হোসেন সুমন বলেন, আমরা যাত্রীরা বারবার নিষেধ করছিলাম বেপরোয়া গতিতে যেন গাড়ি না চালান। তিনি তারপরেও বেপরোয়া গতিতে বাসটি চালাচ্ছিলেন। একসময় আমরা চিৎকার করি। চালক গাড়িটি কুমিল্লায় একটি হোটেলে পার্ক করেন। দীর্ঘ সময় সেখানে অপেক্ষার পর আবারও বেপরোয়া গতিতে চালানো শুরু হয়। এ সময় অনেকে ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু দুশ্চিন্তায় ঘুম আসছিল না। চৌদ্দগ্রাম এলাকায় এসে বিকট শব্দে গাড়িটি খালি রাস্তার পাশে উলটে যায়। সবাই সাহায্য চাইছিলেন। কিন্তু কিছুই করার ছিল না। আমি নিজেও তখন ¯্রষ্টাকে ডাকছিলাম। যেন মৃত্যুর দুয়ার থেকে ঘুরে আসলাম। সায়েদাবাদের জনপদের মোড় থেকে বাসে ওঠা যাত্রী আরজ হোসেন সুমন জানান, রাত সাড়ে ১২টায় বাসটি ছাড়ার কথা থাকলেও ২৮ জন যাত্রী নিয়ে রাত ২টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা করে। ফজরের নামাজের আগে কুমিল্লার পদুয়ার বাজার এলাকায় একটি হোটেলে যাত্রাবিরতি করে। যাত্রাবিরতির আগে গাড়িটির গতি বেপরোয়া থাকায় যাত্রীরা চিৎকার করেন। যাত্রাবিরতি শেষে গাড়িটি আবারও বেপরোয়া গতির কারণে চৌদ্দগ্রামের বসন্তপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশের খাদে পড়ে যায়। এ সময় বাসের অধিকাংশ যাত্রী ঘুমিয়ে ছিলেন। বেপরোয়া গতির কারণেই বাসটি দুর্ঘটনায় পড়েছে। অপর যাত্রী চট্টগ্রামের আযান হোসেন বলেন, বেশির ভাগ যাত্রী ঘুমাচ্ছিলেন। ঘুম ভেঙে দেখি সবাই বাসের ভেতর আটকে পড়েছেন। এ সময় আমরা কয়েকজন মিলে গাড়িটির সামনের গ্লাস ভেড়ে আহতদের উদ্ধারের চেষ্টা করি। আশপাশের কাউকে আমরা এগিয়ে আসতে দেখিনি। সময়টা ভোর হওয়ায় রাস্তা ফাঁকা ছিল। আশপাশে কোনো গাড়িও ছিল না। কিছু সময় পর স্থানীয়রা এসে উদ্ধার কাজ শুরু করেন। চট্টগ্রামের হাটহাজারির নাবিল হোসেন বলেন, গাড়ির গ্লাস ভেঙে আটকে পড়াদের বের হতে সহায়তা করি। আহতদের কয়েকজনকে টেনে বের করি। বেপরোয়া গতির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। নিহত মোহাম্মদ হোসেনের বড় ভাই আহত ফিরোজ হোসেন বলেন, ছয় ভাই, পাঁচ বোনের মধ্যে মোহাম্মদ হোসেন তৃতীয়। সে পেশায় নির্মাণ ঠিকাদার। ছোট ভাই মোহাম্মদ আকাশকে বিমানবন্দর পৌঁছে দিয়ে এক আত্মীয়সহ আমরা দুই ভাই বাসে করে বাড়ি ফিরছিলাম। পথে দুর্ঘটনায় ছোট ভাইকে হারালাম। চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রবিউল হাসান বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ১০ থেকে ১৫ জনকে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চার জনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় পাঁচ জন নিহত হয়েছেন বলে জানতে পেরেছি। মিয়াবাজার হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ এসএম লোকমান হোসাইন বলেন, বাসটি সকালে মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বসন্তপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এ সময় পাঁচ জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনার পর বাসের চালক ও হেলপার পলাতক রয়েছেন। বাসটি উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যাত্রীদের সঙ্গে আমরা কথা বলে জানতে পেরেছি, ভোরে সড়ক ফাঁকা থাকার কারণে বেপরোয়া চালাচ্ছিলেন চালক। যাত্রীদের নিষেধের পরেও গতি কমাননি। আমরা চালক ও সহযোগীকে না পেলেও তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নিহতদের লাশ পরিবারের কারণে হস্তান্তরের কাজ করছি। চৌদ্দগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সাব ইনচার্জ বিপ্লব কুমার নাথ বলেন, আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি চারদিকে মানুষের আর্তনাদ। কয়েকজন আটকে পড়া যাত্রীকে উদ্ধার করি। কিন্তু ঘটনাস্থলেই পাঁচ জন মারা যান।