জাতীয় সংবাদ

বরিশালে বাবা-মেয়ের গলাকাটা লাশ উদ্ধার

প্রবাহ রিপোর্ট : বরিশাল নগরের কাউনিয়া এলাকার একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাট থেকে নাঈম ও রোজা নামে বাবা-মেয়ের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, ঘটনাটি রহস্যজনক। পরিবারের দাবি, বিচ্ছেদের পরেও নিহতের স্ত্রীর নানা চাপের মুখে হতাশ হয়ে নাঈম প্রথমে তার মেয়েকে হত্যা করেন। পরে নিজে ‘আত্মহত্যা’ করেন। পুলিশ পুরো বিষয়টি খতিয়ে না দেখার আগ পর্যন্ত ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলতে রাজি নয়। গতকাল বুধবার সকালে বরিশাল নগরীর কাউনিয়া প্রধান সড়ক পানির ট্যাংকি সংলগ্ন স্বপ্ন বিলাস ভবনের চারতলার একটি ফ্ল্যাট থেকে পাঁচ বছর বয়সী রাবেয়া বশরি রোজা ও তার বাবা নাইম হাওলাদারের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তারপর ময়নাতদন্তের জন্য দেহ দুটি শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ঘটনাটি হত্যার পর আত্মহত্যা নাকি অন্য কিছু সেটি তদন্তে ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে সিআইডি ও মহানগর গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা। এসব তথ্য নিশ্চিত করে বরিশাল মেট্রোপলিটন কাউনিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান বলছেন, নাঈমের পরিবার জানিয়েছে- স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর থেকে নানা চাপ সহ্য করে আসছিলেন তিনি। সাবেক স্ত্রীর এসব চাপ সহ্য করতে না পেয়ে নাঈম ঘরে থাকা বটি দিয়ে প্রথমে নিজের মেয়েকে জবাই করে হত্যা করেন। পরে নিজের গলা কেটে আত্মহত্যা করেন। আমরা এসব তথ্যকে গুরুত্ব দিচ্ছি, তবে আদৌ তা ঘটেছে কিনা সেটি তদন্ত সাপেক্ষ। বরিশাল মেট্রোপলিটনের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আলী আশরাফ ভুঞা বলেন, ঘটনাটি নিয়ে এত দ্রুত সিদ্ধান্তে আসা যাচ্ছে না। একটু তো রহস্য রয়েছে। নিহতের পরিবার দাবির ওপর আমরা নির্ভর করছি না। বিষয়টি আরও গভীরভাবে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না। স্বপ্ন বিলাস ভবনের মালিক জাহিদুল ইসলাম বাবুলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নাঈম ও তার পরিবার গত ১ মে থেকে আমার বিল্ডিংয়ের চার তলার উত্তর পাশের ফ্ল্যাটে ওঠেন। সকালে আমার ছেলে কল করে জানিয়েছে, ওই ফ্ল্যাটে ডাবল মার্ডার হয়েছে। আমি ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখি পুলিশ সদস্যরা নিজেদের কাজ করছেন। তাদের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেওয়াসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। ঘটনা কি ঘটেছে সেটি পুলিশ বলতে পারবে। বাবুলের ছেলে পলাশ জানান, নাঈম তার বাবা-মা, মেয়ে রোজা, বোন আখি ও বোনের মেয়ে নুসরাতকে নিয়ে তাদের ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন। এ বাসায় আসার পর থেকে বিষণ্ণ দেখা যেত। পরে জানতে পারি স্ত্রীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়েছে। মেয়েকে নিজের কাছে রেখে দিলেও নাঈমের মনে বিষণ্ণতা ছিল। নাঈম চাকরি করে বলে তারা জানতেন। পরে শুনতে পান সেটি নেই। অন্য একটি চাকরিতে ঈদের পরে যোগে দেওয়ার কথা ছিল নিহতের। তিনি বলেন, ওই বাসায় বোন আখি ও তার ১২ বছরের মেয়ে নুসরাত জাহান জান্নাতি পুষ্পাকে বসবাস করবেন। আখির স্বামীর নাম মঞ্জুরুল ইসলাম। তিনি ঢাকায় চাকরি করেন, যে কারণে কখনো তার সঙ্গে আমাদের দেখা হয়নি। গতকাল বুধবার সকাল ৯টার দিকে আখি চিৎকার শুরু করেন। সেটি শুনে আমি তাদের বাসায় যাই। সেখানে দুজনের রক্তাক্ত লাশ দেখে পুলিশকে জানাই। আখি আক্তারের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা খেয়ে ভাই ও ভাতিজিকে ডাকতে তাদের কক্ষে যাই। গিয়ে দেখি তারা রক্তাক্ত, নিথর। আমাদের চিৎকার শুনে বাড়িওয়ালা এসে পুলিশকে জানিয়েছে। নাঈমের বাবা শাহজাহান হাওলাদার জানান, গত রাতে ছেলে ও নাতনির সঙ্গে ঘুমিয়েছিলেন তিনি। সকাল সোয়া ৭টার দিকে তিনি বাসা থেকে বের হওয়ার সময় নাঈমকে পান্তা ভাত খেতে দেখেন। রোজা তখন ঘুমচ্ছিল। তিনি বের হওয়ার সময় নাঈম তার কাছে ২০ টাকা চান। টাকা দিয়ে তিনি অনন্যা ফ্লাওয়ার মিলে (তার কর্মস্থল) চলে যান। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আখি তাকে কল করে নাঈম ও রোজার মৃত্যুর সংবাদ দেন। তিনি বাড়ি ফিরে দুজনের লাশ মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন। তিনি আরও জানান, প্রায় সাত বছর আগে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে দক্ষিণ পলাশপুরের বাসিন্দা নুর ইসলাম মোল্লার মেয়ে অনা আক্তারের সঙ্গে নাঈমের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে পারিবারিক নানা সমস্যা দেখা দেয়। চার মাস আগে অনা তার ছেলেকে তালাক দেন। দেন মোহরের ৫ লাখ টাকাও নেন। স্ত্রীর তালাক পেয়ে নাঈম মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। নিহত নাঈম অপসোনিন কোম্পানির গাড়িচালক ছিলেন। সেই চাকরি চলে যাওয়ার পর তিনি নতুন একটি খুঁজছিলেন। শাহজাহান বলেন, গত মঙ্গলবার রাতে অনা কল করে রোজাকে নিয়ে যাবেন বলে জানান। তারপর থেকেই নাঈম খুব বিচলিত ছিল। বরিশাল মেট্রোপলিটনের সহকারী পুলিশ কমিশনার সরোয়ার হোসেন, আমাদের প্রাথমিক ধারণা পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণেই ঘটনাটি ঘটে। বিশেষ করে নাঈমের সঙ্গে তার স্ত্রীর তালাক হয়েছে। এরপর থেকে শিশুকন্যাকে কাছে রাখেন তিনি। গতকাল বুধবার সকালে রোজার মায়ের আসার কথা ছিল। তিনি মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। এ বিষয়টি নাঈম মেনে নিতে পারেননি। সেখান থেকেই হয়ত হত্যা ও আত্মহত্যাটি ঘটে। বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ফজলুল করিম বলেন, এ ঘটনায় হত্যা মামলা হবে। তদন্ত করে না করে প্রকৃত রহস্য কি বলা যাবে না।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button