জাতীয় সংবাদ

প্রাথমিক শিক্ষা পদক পাচ্ছেন ৫৪ জন

প্রবাহ রিপোর্ট : প্রাথমিক শিক্ষায় অবদান রাখার জন্য পদক পাচ্ছেন ৫৪ জন। আগামী বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে তারা পদক গ্রহণ করবেন। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা পদক- ২০২৩ প্রদান ও জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ- ২০২৪ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহম্মদ এ কথা জানান। তিনি বলেন, ২৭ জুন সকাল ১০টায় প্রাথমিক শিক্ষা পদক প্রদান এবং জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহের উদ্বোধন করা হবে। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতে সম্মতি দিয়েছেন। এবারের জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শিশুবান্ধব প্রাথমিক শিক্ষা, স্মার্ট বাংলাদেশের দীক্ষা’। সচিব বলেন, জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ পালনের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো বিদ্যালয়, ক্লাস্টার ও উপজেলা/থানা পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ শিশু শিল্পী, শিক্ষক, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, কর্মচারী এবং কর্মকর্তাকে পদক ও সনদ প্রদানের মাধ্যমে তাদের কাজের স্বীকৃতি দেওয়া। সচিব জানান, ১৯৮৩ সালে বোর্ড অব গভর্নরসের সর্বাধিক পদ্ধতি প্রয়োগে শিক্ষার মানোন্নয়নে অবদানের জন্য দক্ষ শিক্ষকদের পুরস্কার প্রথা অনুমোদন হয়ে পরবর্তীতে প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ উদযাপন কার্যক্রম শুরু হয়। ২০২২ সালে প্রাথমিক শিক্ষা পদক নীতিমালায় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে কয়েকটি নতুন পদক সংযোজন করে মোট ১৮ ক্যাটাগরিতে উন্নীত করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষা পদক প্রদানের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, শিশুদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের মাধ্যমে নিজ সংস্কৃতির উন্নয়ন, আত্ম উন্নয়ন, আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন এবং দেশ ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজ দেশের সংস্কৃতি উন্মোচন করা। তিনি আরও বলেন, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদেরও পুরস্কৃত করা হয়। সেই সঙ্গে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক নৈপুণ্যে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের জন্য পদক ও সনদ প্রদানের মাধ্যমে পুরস্কৃত করা হয়। এবার ৩ ক্ষেত্রে ১৮ ক্যাটাগরিতে ১২৬ জন পদক পাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে ৫৪ জন পদক গ্রহণ করবেন। বাকিদের পদক পৌঁছে দেওয়া হবে। এদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, আগামী এক বছরের মধ্যে দেশের সব কিন্ডারগার্টেন (কেজি) স্কুলকে বিধিমালা অনুযায়ী নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে। কেজি স্কুলগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনার অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে সচিব বলেন, আমরা একটা টার্গেট নিয়ে কাজ করছি। এ বছর বার্ষিক প্রাথমিক জরিপে দেখেছি নার্সারি, কিন্ডারগার্টেন বা বেসরকারি পর্যায়ে স্কুলের সংখ্যা একটু কমে গিয়েছিল। এ বছর ৮০০-এর মতো আরও বেড়েছে, সব মিলিয়ে এখন ৪৪ হাজারের কাছাকাছি আছে। সচিব বলেন, বিধিমালা জারির পরে মাঠ পর্যায়ে যে কাজ করছে, সেই অনুযায়ী ইতোমধ্যে ২০ শতাংশ বেসরকারি পর্যায়ের স্কুল (কিন্ডার গার্টেন) অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি বা নিবন্ধনের আওতায় চলে এসেছে। আমরা আশাবাদী আগামী এক বছরের মধ্যে সকল বেসরকারি প্রাথমিক পর্যায়ের স্কুলগুলোকে অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি এবং নিবন্ধনের আওতা চলে আসবে। তিনি বলেন, মাত্র দুই তিন মাস আগেও এটা ছিল ৮-৯ শতাংশ। এখন ২০ শতাংশ নিবন্ধন বা অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতির আওতায় চলে এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা সচিব বলেন, আবেদন করার ৩০ দিনের মধ্যে স্কুলগুলো সিদ্ধান্ত পাবে। নিবন্ধন হলেও সিদ্ধান্ত পাবে, না হলেও কেন হলো না সেই সিদ্ধান্ত পাবে। কম শিক্ষার্থী থাকা স্কুলের বিষয়ে সচিব বলেন, প্রায় দেড়শ’র কাছাকাছি স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে মাত্র ১০-৫০ জন। তবে হুট করে এসব স্কুল বন্ধ করা হবে না। কাছাকাছি কম শিক্ষার্থী থাকা প্রাথমিক বিদ্যালয় একীভূত করা নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে সচিব বলেন, এটি নীতিগত সিদ্ধান্ত। ৬৫ হাজার ৫৬৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে চিহ্নিত করেছি প্রায় দেড়শ’র কাছাকাছি স্কুলে মাত্র ১০-৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে হুট করে আমরা সকল স্কুল মার্জ বা বন্ধ করে দেব না। তিনি বলেন, আমরা ট্রেন্ডটা দেখছি, বিগত ১০ বছর বা ২০ বছর কোনো স্কুলে যদি ১০ বা ২০ জন শিক্ষার্থী থাকে তাহলে আমরা শুধু ওই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে স্কুল মার্জ করে দেব না। উদাহরণ দিয়ে সচিব বলেন, রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার বড়খলিয়া ইউনিয়ন ১০-২০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ১৫ বছর ধরে একটি স্কুল চলছে। কিন্তু তার আশপাশে ৭-৮ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো স্কুল নাই। সুতরাং ওই স্কুলটি আমরা মার্জ করে দেব না। আবার কোনো কোনো জায়গায় রাস্তার এপারে একটি স্কুল আছে, বিপরীতে বা পার্শ্ববর্তী স্কুল আছে। এ স্কুলে ধরেন কয়েকজন শিক্ষার্থী আবার অর্ধ কিলোমিটারের মধ্যে দুইশ’র কাছাকাছি শিক্ষার্থী। ওই স্কুলটা আমরা মার্জ করে দেব। ইতোমধ্যে আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। এটা ইন-জেনারেলাইজড সিদ্ধান্ত হবে না। চাহিদা এবং স্থানীয় বাস্তবতা বিবেচনা করে সকল অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান সচিব। এদিকে দেশের আরও ১৫৪ স্কুল অষ্টম শ্রেণি চালু করার জন্য প্রস্তুত। পাশাপাশি আগামী তিন বছরে আরও এক হাজার স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চালু করার মতো অবকাঠামো আছে বলে জানান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব। প্রাথমিক স্কুলগুলোতে অষ্টম শ্রেণি চালু করা নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ২০১০ সালের শিক্ষানীতিতে বলা আছে, প্রাথমিক শিক্ষা হবে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। এটি পর্যায়ক্রমে হবে। এটি আসলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সঙ্গে সমন্বয়ের বিষয়। এখানে নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাদের সিদ্ধান্তে আমরা ৬৯৫টি স্কুলে অষ্টম শ্রেণি চালু করেছি। আমরা সাত শতাধিক চালু করেছিলাম। একসময় সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগার কারণে নতুন স্কুল অন্তর্ভুক্ত করিনি। প্রাথমিক শিক্ষা সচিব জানান, সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের সমন্বয় সভায় ধারাবাহিকভাবে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত এবং শতভাগ অবৈতনিক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা হিসাব করে দেখেছি, ৬৫ হাজার ৫৬৬ স্কুলের মধ্যে পাঁচ হাজারের কাছাকাছি স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চালু করতে পারি। মাধ্যমিকে ২৩ হাজারের কাছাকাছি, নিম্ন মাধ্যমিক বা মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে। এসব স্কুল যদি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক করতে পারে, তাহলে সরকারের এ সিদ্ধান্ত পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব। তিনি বলেন, এটি করতে হলে তিনটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে- অবকাঠামো, শিক্ষক নিয়োগ ও পদ সৃজন এবং তাদের প্রশিক্ষণ। কারণ আমরা আমাদের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিই পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। সচিব বলেন, আমরা মাঠ পর্যায় থেকে যে তথ্য উপাত্ত পেয়েছি, তাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় চাইলে আমরা এ মুহূর্তে আরও ১৫৪ স্কুলে অষ্টম শ্রেণি চালু করতে পারি। পাশাপাশি আগামী তিন বছরে আরও এক হাজার স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চালু করার মতো অবকাঠামো আছে। এটা একটি ধারাবাহিক এবং নীতি নির্ধারণী প্রক্রিয়া। তিনি বলেন, আমরা ‘স্মার্ট প্রাইমারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম-৫’ এর দিকে যাচ্ছি। সেখানেও এ বিষয়ে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি, যাতে অবকাঠামো সুবিধা বাড়ানো যায় এবং ষষ্ঠ-সপ্তম-অষ্টমের শিক্ষক-কর্মচারীদের পদ সৃজন এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়। আমাদের পিডিপি-৫ এর কাজ শুরু হলে এ কাজ আরও তরান্বিত হবে। কবে নাগাদ সব স্কুলে পুরোপুরি অষ্টম শ্রেণি চালু হবে হবে- জানতে চাইলে সচিব বলেন, এটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এর সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত। অবকাঠামো, শিক্ষক নিয়োগ ও পদ সৃজন এবং তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয় রয়েছে। এসব কাজ আমরা শুরু করেছি। আগামী তিন বছরের একটি টার্গেট নিয়ে কাজ করছি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবদুস সালামসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button