জাতীয় সংবাদ

ড. ইউনূসের ভাবমূর্তিতে দ-মুক্ত ৮৭ প্রবাসী

কপাল খুলল ১৭০০০ কর্মীর

প্রবাহ রিপোর্ট ঃ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে দ-প্রাপ্তদের দ-মুক্ত করতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন অন্তর্র্বতী সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ড. ইউনূসের দায়িত্বগ্রহণের পর প্রবাসীদের দ-মুক্ত করতে পারাটা অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক সফলতা হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া, সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরও গত ৩১ মের মধ্যে ১৭ হাজারের বেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় যেতে পারেনি, তাদের দেশটিতে পাঠানোর বিষয়ে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের কাছ থেকে আশ্বাস আদায় করতে পেরেছেন ড. ইউনূস। তবে ইতালির ভিসা প্রার্থীদের নিয়ে কিছুটা বিপাকে পড়েছে সরকার। কেননা, ঢাকাস্থ ইতালীয় দূতাবাসে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা ভিসা আবেদনকারীদের আবেদন সামলাতে হচ্ছে সরকারকে। ঢাকাস্থ ইতালীয় দূতাবাসে বর্তমানে প্রায় ৪০ হাজারের বেশি কাজ সংক্রান্ত ভিসার আবেদন বিবেচনাধীন রয়েছে। দূতাবাসে ভিসা আবেদনকারীরা তাদের সমস্যা সমাধানে সরকারকে তাগাদা দিচ্ছেন। তারই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) ইতালি ভিসা প্রার্থী প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অনিষ্পন্ন ভিসার আবেদন দ্রুত সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করবে ঢাকার ইতালীয় দূতাবাস। আগামী দুই মাসের মধ্যে ২০ হাজার ভিসা আবেদনের সিদ্ধান্ত গ্রহণপূর্বক পাসপোর্ট ফেরত দেবে দূতাবাস। দূতাবাসে বর্তমানে প্রায় ৪০ হাজারের বেশি কাজ সংক্রান্ত ভিসার আবেদন বিবেচনাধীন। ১৭ হাজার কর্মীর কপাল খুলল ঃ সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরও ১৭ হাজারের বেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় যেতে পারেনি। মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা এসব কর্মীরা প্রায় আশা ছেড়েই দিয়েছেন। আক্ষেপ ছিল মনে। মাস চারেক পর এসব কর্মীদের জন্য সুখবর এল মালয়েশিয়া থেকে। আর সেটা মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে। সম্প্রতি ঢাকা সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম আশ্বাস দিয়েছে, বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে যেতে না পারা প্রায় ১৮ হাজার কর্মী দেশটিতে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। আর এই আশ্বাস মিলেছে ড. ইউনূসের অনুরোধে। প্রসঙ্গত, চার মাস আগে ভিসা পাওয়া এবং সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরও মালয়েশিয়ার বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে (৩১ মে ২০২৪) দেশটিতে যেতে পারেননি বাংলাদেশের ১৭ হাজারের বেশি কর্মী। আমিরাতে বৈধ হতে পারবেন অবৈধ প্রবাসীরা, সুযোগ মিলবে যাদেও আমিরাতে বৈধ হওয়ার সুযোগ, বাংলাদেশিদের জন্য হেল্প ডেস্ক চালু মধ্যপ্রাচ্যের কর্মীদের জন্য বিমানবন্দরে বিশেষ লাউঞ্জ অন্তর্বর্তী সরকার মধ্যপ্রাচ্যগামী কর্মীদের জন্য ঢাকার বিমানবন্দরে বিশেষ লাউঞ্জ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। চলতি মাস থেকে মধ্যপ্রাচ্যগামীদের জন্য বিমানবন্দরে বিশেষ লাউঞ্জ চালুর কথা রয়েছে। গত ৫ অক্টোবর প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় এক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, মধ্যপ্রাচ্যে যেসব শ্রমিক ভাই-বোন যাচ্ছেন তাদের জন্য বিমানবন্দরে আলাদা স্পেশাল লাউঞ্জের ব্যবস্থা করব। আমরা ইতোমধ্যে জায়গা ঠিক করেছি, সিভিল এভিয়েশনের সঙ্গে কথা হয়েছে। আশা করি দুই সপ্তাহের মধ্যে হয়ে যাবে। আসিফ নজরুল বলেন, লাউঞ্জ হলে প্রবাসী শ্রমিক ভাই-বোনদের যন্ত্রণা অনেক লাঘব হবে। এর পাশাপাশি অন্যান্য যে ভিআইপি সুবিধা সেগুলোও থাকবে। বিমানবন্দরে প্রবেশের মুহূর্ত থেকে প্লেনে ওঠার আগ পর্যন্ত যে লাউঞ্জ থাকে সেই পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে তাদের সঙ্গে একজন লোক থাকবে সহায়তার জন্য। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে প্রবাসে সাজাপ্রাপ্তদের পুনর্বাসন করবে সরকার নিউইয়র্কে বাজিমাত ড. ইউনূসের, কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ আছে সরকারের প্রবাসে সাজাপ্রাপ্তদের পুনর্বাসন করবে সরকার গত ২৪ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বিদেশে সাজা পেয়ে দেশে ফিরেছেন আমরা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ওনাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করব। ইতোমধ্যে যারা ফিরে এসেছেন, ৮৭ জনকে তালিকাভুক্ত করতে পেরেছি। আমরা ওনাদের বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব। আসিফ নজরুল বলেন, প্রবাসীকল্যাণ স্কিম আছে, একটা ব্যাংক আছে, একটা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড আছে, বিএমইটি আছে। মোট কথা, আমাদের মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ওনাদের কর্মসংস্থান বা ব্যবসার উদ্যোগ হোক সে ব্যবস্থা করব। দরকার হলে বেসরকারি খাত আছে, যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করব। প্রবাসীদের ঝক্কি কমাতে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন বাতিল ঃ দীর্ঘসূত্রিতা কমাতে প্রবাসগামী কর্মীদের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রক্রিয়া থেকে বের হতে চায় অন্তর্র্বতী সরকার। সেজন্য প্রবাসীদের শুধু সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস এবং জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) অনুমোদন নিলে হবে। এ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, প্রবাসীরা বিদেশে যেতে চাইলে তিনটা স্তরে অনুমোদন লাগত। একটা কনসার্ন দূতাবাসের, তারপরে মন্ত্রণালয়ের এবং বিএমইটির। এখন থেকে মন্ত্রণালয় আর কোনো ভূমিকা পালন করবে না। দুইটা জায়গায় অনুমোদন নিতে হবে। রেমিট্যান্স বাড়াতে যত উদ্যোগ ঃ রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে নানা উদ্যোগ হাতে নিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে সরাসরি রেমিট্যান্স পাঠানো ও ব্যাংকের বুথ বাড়ানো এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ ব্যবস্থার নতুন উদ্যোগ গ্রহণের মতো বিষয় রয়েছে। এ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে এখন সরাসরি রেমিট্যান্স পাঠানো যাবে। যারা এই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন তারা সরাসরি রেমিট্যান্স পাঠানোর মাধ্যমে ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন। এই কাজে বেসরকারি সিটি ব্যাংকের সঙ্গে আমরা একটি সমঝোতা করেছি। যার ফলে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে রেমিট্যান্স এনে ঋণ শোধ করতে পারবেন তারা। উপদেষ্টা বলেন, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের পাশাপাশি আরও ১২টি ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমরা তাদের বলেছি, যে প্রবাসীদের ঋণের প্রয়োজন আছে, আপনারা দিন। উনারা রাজি হয়েছেন, কিন্তু ক্রেডিট গ্যারান্টি লাগবে। এটি পাওয়া গেলে এই ১২টি ব্যাংক প্রবাসীদের ঋণ দিতে পারবে। উপদেষ্টা জানান, প্রবাসীরা মানি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠান। আমরা ওই ১২টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেছি। মানি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোতে তারা যে টাকাটা দেন, সেই টাকাটা এই দেশে ওই ব্যাংক পরিশোধ করে দেবে। অর্থাৎ রেমিট্যান্স পাঠাতে বিদেশে যে টাকা দিতে হচ্ছে সেটি এই দেশে ওই ব্যাংকে পরিশোধ করে দেবে। আসিফ নজরুল বলেন, ওয়েজ আর্নার্স বন্ড কেনার ক্ষেত্রে এখন সর্বোচ্চ সীমা হচ্ছে এক কোটি টাকা। আমরা সেটা বাতিল করার প্রস্তাব করেছি। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা লাগবে। আশা করছি, বাংলাদেশ ব্যাংক করে দেবে। এতে করে আর কোনো ক্রয়সীমা থাকবে না, বন্ডের মাধ্যমে আরও বেশি রেমিট্যান্স পাঠানো যাবে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের বুথ বাড়ানোর বিষয়ে আসিফ নজরুল জানান, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মূল শাখায় অনেক দূর দূরান্ত থেকে আসতে হয়। এজন্য আমরা যেসব এলাকায় সোনালী এবং অগ্রণী ব্যাংক আছে ওইসব শাখায় প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের বুথ স্থাপনের জন্য উদ্যোগ নিচ্ছি। আসিফ নজরুল জানান, প্রবাসী কর্মীরা প্রবাসে নানা ভোগান্তির শিকার হন। সেখানে আমাদের দূতাবাসগুলোর বিরুদ্ধে ঠিকমতো দায়িত্ব পালন না করার অনেক অভিযোগ আসে। আমাদের শ্রম কল্যাণ উইং আছে, তারপরও তারা ঠিকমতো কাজ করে না বলে আমাদের কাছে অভিযোগ আসে। আমরা খুব শক্তভাবে সেটা দেখার চেষ্টা করেছি। আমরা দূতাবাসে অবস্থিত শ্রম কল্যাণ উইংকে ফর্ম ছাপিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছি। এখন থেকে তাদের কাছে কতগুলো অভিযোগ আসলো, অভিযোগকারীর নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর এবং অভিযোগের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নিয়েছে এটা আমাদের নিয়মিত রিপোর্ট করতে হবে। উপদেষ্টা বলেন, ঢাকা থেকে আমরা সরাসরি দৈবচয়ন ভিত্তিতে সেসব চেক করে দেখবো যে ঠিকমতো কাজটি হচ্ছে নাকি। যদি আমাদের প্রবাসী কল্যাণ উইংয়ের কেউ ঠিকমতো দায়িত্ব পালন না করে, সেবকের ভূমিকা নিয়ে কাজ যদি না করে তবে দরকার হলে আমরা সেখানে পরিবর্তন আনব। আমরা কোনোরকম ছাড় দেবো না।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button