প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি এড়াতে কাজ করছে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা
প্রবাহ রিপোর্ট : পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে জীবন ও জীবিকার ক্ষতি এড়াতে সহজবোধ্য পূর্ব সতর্কীকরণ ব্যবস্থা উন্নয়নে সরকার কাজ করছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর একটি তারকা হোটেলে ‘সবার জন্য পূর্ব সতর্কীকরণ: হাইড্রোলজিক্যাল স্ট্যাটাস এবং আউটলুক সিস্টেম’ শীর্ষক পরামর্শক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, জলবায়ু ঝুঁকির কারণে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকা সবসময় হুমকির মুখে রয়েছে, তাই একটি কার্যকরী পূর্ব সতর্কীকরণ ব্যবস্থা থাকা অত্যন্ত জরুরি। একটি কার্যকর হাইড্রোলজিক্যাল স্ট্যাটাস এবং আউটলুক সিস্টেম গড়ে তোলার জন্য সকল অংশীদারদের সক্রিয়ভাবে অবদান রাখার আহ্বান জানান তিনি। উপদেষ্টা বলেন, পূর্ব সতর্কীকরণ ব্যবস্থা হচ্ছে দুর্যোগ মোকাবিলায় স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। একটি শক্তিশালী হাইড্রোলজিক্যাল সিস্টেম ভবিষ্যৎ দুর্যোগের সঠিক পূর্বাভাস দিতে সহায়ক হবে, যার মাধ্যমে জীবন, সম্পদ ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, এ ক্ষেত্রে উজানের দেশগুলোর রিয়েলটাইম তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সরকারি সংস্থা, বৈজ্ঞানিক এবং স্থানীয় অংশীদারদের মধ্যে সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন, যাতে সবার জন্য, বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে একটি সহজপ্রাপ্য এবং কার্যকর পূর্ব সতর্কীকরণ ব্যবস্থা বাস্তবায়নে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার আহ্বান জানান তিনি। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আশরাফ উদ্দিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাজমুল আহসান, ডব্লিউএমও হাইড্রোলজি এবং পানি সম্পদ বিভাগের প্রধান ড. হুইরিন কিম। সরকারি সংস্থার প্রতিনিধি, এনজিও এবং আন্তর্জাতিক অংশীদাররাও কর্মশালায় অংশ নেন। এর আগে, অনলাইনে যোগ দিয়ে গাজীপুরে গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটির (জিইএফ) নীতিমালা এবং কার্যক্রমের ওপর অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন করেন রিজওয়ানা হাসান।
এদিকে গতকাল বুধবার রাজধানীর পানি ভবনে আয়োজিত ‘ব্লু নেটওয়ার্ক অ্যারাউন্ড ঢাকা সিটি’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, খাল দূষণমুক্ত ও দখলমুক্ত করতে কম্প্রেহেনসিভ প্ল্যান করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোকে সমন্বয় হতে হবে। ঢাকা শহরের খাল নিয়ে ভাবে এমন অনেক সংস্থা আছে তাদেরকে যুক্ত করতে হবে। ঢাকা মহানগরীর চারদিকে নদী খালগুলোতে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ সৃষ্টি করতে অংশীজনদের নিয়ে এই সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, আজকের অনুষ্ঠানের পর একটা ওয়ার্কশপ করতে হবে। সেখানে ঢাকার প্রতিটি খালের বাস্তবচিত্র নিয়ে কথা হবে। খালগুলো দখলমুক্ত ও পরিষ্কার করা যায় সে ব্যাপারে আলোচনা হতে হবে। কোন খালগুলো ইমিডিয়েট উচ্ছেদ করতে হবে আর কোনগুলো একটু বেশি সময় নিয়ে করতে সেই বিষয়ে ওয়ার্কশপে আলোচনা হবে। তিনি বলেন, সামনে আমাদের যুব দিবসে কয়েকটা খাল পরিষ্কার করা যেতে পারে। যেখানে যুবকরা সরাসরি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এই প্রজন্ম পরিষ্কার কোনো খাল দেখেনি। এখনো হাতিরঝিলের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় নাকে রুমাল দিয়ে যেতে হয়। যুব দিবসে যখন দেখবে যুবকেরা উদ্যোগ নিয়ে খাল পরিষ্কার করছে, তখন তারা বাকি খালগুলো পরিষ্কারেও উদ্যোগ নেবে। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, আমাদের একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। কোন বছর আমরা কী কাজ করবো। তবে এখানে দুই থেকে তিন বছরের বেশি সময় লাগার কথা না। এখানে আরেকটা বড় ব্যাপার হলো এই খালগুলো দূষণমুক্ত করার সহজ কোনা উপায় নেই। সেজন্য দুই-তিন মাস পর পর পরিষ্কার কার্যক্রমে নামতে হবে। আমাদের একটা খাল দূষণমুক্ত ও দখলমুক্ত করতে ৩৫০ কোটি টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু এত টাকা দিয়ে নতুন একটি খাল বানানো যায়। তাই এই কার্যক্রমে ব্যয় সাশ্রয়ী হতে হবে।