২২ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ : ২৪ ঘণ্টা পাহারা দেওয়া হবে নদী
প্রবাহ রিপোর্ট : মা ইলিশ রক্ষায় গতকাল শনিবার মধ্যরাত থেকে পদ্মা-মেঘনা নদীসহ অভয়াশ্রম এলাকায় মাছ ধরার ওপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে। এ নিষেধাজ্ঞার কারণে আজ রোববার থেকে শুরু হয়ে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত নদীতে মাছ ধরা, বিক্রি ও পরিবহন নিষিদ্ধ থাকবে। অভিযান সফল করতে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। এবার থাকছে সেনাবাহিনীও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মা ইলিশ নিরাপদে ডিম ছাড়ার সুযোগ পেলে ইলিশের উৎপাদন আরও বাড়বে। আর এই সময়ে চালসহ আরও সহযোগিতা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন জেলেরা। ইলিশের ডিম পরিপক্বতা ও প্রাপ্যতায় গবেষণার ভিত্তিতে মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সরকার। এ বছর ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত পদ্মা-মেঘনার ১০০ কিলোমিটার, হাতিয়ার সন্দ্বীপের শাহবাজপুর চ্যানেল, তেঁতুলিয়া, পটুয়াখালীর আন্ধারমানিক নদীসহ ছয়টি অভয়াশ্রম এলাকায় সব ধরনের মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এই সময়ে ঝাঁকে ঝাঁকে মা ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য সাগর থেকে উপকূলীয় অঞ্চল পদ্মা-মেঘনা অভয়াশ্রমের আওতাধীন নদীগুলোতে চলে আসে। আশ্বিন মাসের অমাবস্যা ও ভরা পূর্ণিমায় মা ইলিশ প্রচুর ডিম পাড়ে। তাই মা ইলিশ অবাধে ডিম ছাড়ার সুযোগ দিতে নদীতে জাল ফেলা এবং মাছ শিকার বন্ধ থাকবে। এদিকে অভয়াশ্রম বাস্তবায়ন করতে প্রস্তুত জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ, মৎস্য বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত টাস্কফোর্স। জেলে ও মৎস্যজীবীদের সচেতন করতে জল ও স্থলপথে চলছে প্রচারণা। প্রণোদনা হিসেবে তালিকাভুক্ত প্রত্যেক জেলেকে ৪০ কেজি করে চাল দিয়েছে সরকার। তবে এ সহযোগিতা আরও বাড়ানোর দাবি জেলেদের। ইতোমধ্যে নৌকা তীরে উঠিয়েছেন তারা। অবসর সময়ে চলছে জাল নৌকা মেরামতের কাজ। অভিযানের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি, ২৪ ঘণ্টা নদী পাহারা
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক ও ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত জেলা টাস্কফোর্সের সভাপতি মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, মা ইলিশ সংরক্ষণে প্রথমেই জেলে, মৎস্যজীবীদের মাঝে সচেতনতা তৈরি করা দরকার। এ লক্ষ্যে আমরা ইতোমধ্যেই জেলেদের সঙ্গে চাঁদপুর সদর, মতলবসহ সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে সচেতনতামূলক সভা করেছি। অভিযান সফলভাবে বাস্তবায়নে আমরা পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়েছি। অভিযান চলাকালে নদীতে কোস্টগার্ড, সেনাবাহিনী, নৌপুলিশ মোতায়েন থাকবে। আমরা ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি স্পিডবোট নিয়ে এসেছি। নদীতে ২৪ ঘণ্টাই পাহারা দেবো। তিনি বলেন, এই সময়ে জেলেরা যেন নদীতে না নামে সেজন্য তাদের নৌকাগুলো থেকে ইঞ্জিন নামিয়ে ফেলবো। এ ছাড়া নিষিদ্ধ সময়ে কেউ মাছ কেনাবেচা করলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।
ডিম ছাড়ার সুযোগ পেলে বাড়বে ইলিশের উৎপাদন
ইলিশ গবেষক ও মৎস্য বিজ্ঞানী ড. আনিছুর রহমান বলেন, পরিভ্রমণশীল স্বভাবের ইলিশ মাছ প্রধানত প্রজনন এবং খাবারের জন্য সাগর থেকে মোহনা বেয়ে প্রধান নদনদী পদ্মা, মেঘনা অঞ্চলে চলে আসে ডিম ছাড়ার উদ্দেশ্যে। সময়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১৭ অক্টোবর ভরা পূর্ণিমা পহেলা নভেম্বর অমাবস্যা আছে। তাই ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর এই বাইশ দিন তাদেরকে ডিম ছাড়ার সুযোগ করে দিতে পারলে বিপুল পরিমাণ জাটকা যুক্ত হবে। অর্থাৎ মা ইলিশ মিঠা পানিতে এসে ডিম ছেড়ে নিরাপদে ফিরে যাবে- এটি একটি চ্যালেঞ্জ। কাজটি ভালোভাবে বাস্তবায়ন হলে ইলিশের উৎপাদন কাক্সিক্ষত মাত্রায় বজায় থাকবে বলে আশা করা যায়। উল্লেখ্য, নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের মৎস্য আইনে ১ থেকে সর্বোচ্চ ২ বছর সশ্রম কারাদ- কিংবা ৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয়দ-ে দ-িত করার বিধান রয়েছে।