জাতীয় সংবাদ

অনিয়ম হলে ডিলারদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা

# নতুন ওএমএস নীতিমালা জারি #

প্রবাহ রিপোর্ট : নানা অনিয়ম ও শর্ত ভঙ্গের জন্য ডিলারদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রেখে নতুন ওএমএস (খোলা বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রি) নীতিমালা জারি করলো সরকার। গত ৭ অক্টোবর ‘খোলা বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রয় (ওএমএস) নীতিমালা-২০২৪’ জারি করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। ২০১৫ সালের নীতিমালাটি বাতিল করা হয়েছে। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, অনিয়মের জন্য ডিলারদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা যাবে। নতুন নীতিমালায় ডিলারদের যোগ্যতার ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা হয়েছে। নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে লাইসেন্সের মেয়াদ। বাড়ানো হয়েছে ডিলারদের ফেরতযোগ্য জামানতের অর্থের পরিমাণ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাসুদুল হাসান বলেন, ‘নতুন নীতিমালার মাধ্যমে ওএমএস কার্যক্রমের যে ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল সেটি দূর হবে, শৃঙ্খলা জোরদার হবে।’ তিনি বলেন, ‘আগের নীতিমালায় ডিলারদের নানা অনিয়ম ও শর্ত ভঙ্গের জন্য কোনো শাস্তির ব্যবস্থা ছিল না, নতুন নীতিমালা তাদের অপরাধ অনুযায়ী শাস্তির কথা বলা আছে।’ এছাড়া নতুন নীতিমালার অধীনে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ওএমএস কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা যাবে বলেও জানিয়েছেন মাসুদুল হাসান। ২০১৫ সালের নীতিমালায় ওএমএস ডিলারদের অনিয়ম কিংবা শর্ত ভঙ্গের জন্য কোনো শাস্তির ব্যবস্থা ছিল না। নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোনো শর্ত লঙ্ঘন করলে বা দেশের প্রচলিত কোনো আইন অমান্য করলে, ডিলারশিপ বাতিল করা যাবে এবং অঙ্গীকারনামার শর্ত মোতাবেক তার কাছ থেকে অর্থ আদায় করা যাবে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি বা দেওয়ানি মামলা দায়ের করা যাবে। ওএমএস ডিলার তার অনুকূলে বরাদ্দ করা খাদ্যশস্য কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়া যথাসময়ে উত্তোলন না করলে তার ডিলারশিপ বাতিল বা জামানত বাজেয়াপ্ত করা যাবে। ডিলার নিয়োগকালে ডিলারের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকার ফেরতযোগ্য জামানত পে-অর্ডার আকারে গ্রহণ করতে হবে। আগের নীতিমালা অনুযায়ী, ২৫ হাজার টাকা জামানত নেওয়া হতো। খাদ্যশস্য আত্মসাৎ বা মাস্টাররোল ও মজুত রেজিস্টার থেকে বাড়তি কিংবা ঘাটতি হলে ওই পরিমাণ খাদ্যশস্যের অর্থনৈতিক মূল্যের দ্বিগুণ হারে আদায়যোগ্য হবে এবং ডিলারের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা যাবে বলে নতুন নীতিমালায় জানানো হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, ডিলার সময় মতো দোকান না খুললে বা ভোক্তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করলে কিংবা নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে অতিরিক্ত বিক্রি করলে বা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে বিক্রি করলে, ওজন/পরিমাণে কম দিলে, যথাযথ ব্যানার দৃশ্যমান স্থানে টাঙানো না হলে এবং পরিদর্শন ও মজুত রেজিস্টার, ডিও, বরাদ্দ আদেশ, চাল/আটার ভাউচার সংরক্ষণ না করাসহ বিবিধ অনিয়মের জন্য ডিলারের কার্যক্রম স্থগিত করা যাবে। ওএমএস কার্যক্রম চলাকালীন ডিলার বা তার প্রতিনিধি নির্ধারিত ওএমএস কেন্দ্রে উপস্থিত না থাকলে ডিলারশিপ কার্যক্রম স্থগিত করা যাবে। ওএমএস কার্যক্রম চলমান থাকাকালে কোনো কারণে ডিলারশিপ বাতিল/স্থগিত/কোনো ডিলার খাদ্যশস্য উত্তোলনে ব্যর্থ হলে উপকারভোগীদের স্বার্থে কমিটির সিদ্ধান্তে পাশ্ববর্তী বিক্রয় কেন্দ্রের ডিলারকে দিয়ে সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে ওএমএস কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে বলে নতুন নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, কোনো ডিলার একনাগাড়ে ১৫ দিন খাদ্যশস্য উত্তোলনে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট ডিলারের ডিলারশিপ বাতিল হবে এবং ওই ডিলারের বিপরীতে নতুন ডিলার নিয়োগের জন্য সুপারিশ করবে। নতুন ডিলার নিয়োগ না পাওয়া পর্যন্ত ওই ডিলার ওএমএসের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। সরকার প্রয়োজনে এ নীতিমালার অধীন দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় (বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন অঞ্চল, উপকূলীয় দ্বীপসমূহ, চর অঞ্চল, হাওড় এলাকা ও পার্বত্য এলাকার বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়ছড়ি পার্বত্য জেলার যে কোনো এলাকায়) ওএমএসের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করে পরিচালনা করতে পারবে। বাংলাদেশের যে কোনো নাগরিক বিশেষত নিম্ন-আয়ের জনগোষ্ঠী ওএমএসের উপকারভোগী হিসেবে বিবেচিত হবেন বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। নতুন নীতিমালায় ওএমএস ডিলারের যোগ্যতার ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। ডিলারকে খাদ্যশস্যের লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী হতে হবে। এ ছাড়া ডিলারের কমপক্ষে তিন টন খাদ্যশস্য সংরক্ষণের উপযোগী সংরক্ষণাগার থাকতে হবে। আগে দুই টন খাদ্যশস্য সংরক্ষণ সক্ষমতার নিয়ম ছিল। এছাড়া নতুন নীতিমালা অনুযায়ী ওএমএস ডিলার বা তার প্রতিনিধির স্মার্টফোন বা তথ্য সংগ্রহের ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস থাকতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট অ্যাপ ব্যবহারে সক্ষমতা থাকতে হবে। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, ওএমএস ডিলারের লাইসেন্সের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। লাইসেন্সের মেয়াদ হবে ১ জুলাই থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত। প্রতি বছর নির্ধারিত ফি দিয়ে ডিলার লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে। লাইসেন্স ইস্যুকারী কর্মকর্তাই লাইসেন্স নবায়ন করবেন। আগে এ নিয়ম ছিল না। ডিলার নিয়োগকালে ডিলারের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকার ফেরতযোগ্য জামানত পে-অর্ডার আকারে গ্রহণ করতে হবে। আগের নীতিমালা অনুযায়ী, ২৫ হাজার টাকা জামানত নেওয়া হতো। খাদ্যশস্য বিক্রির জন্য বিক্রয় কেন্দ্র ও ডিলার নির্বাচনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, অন্যান্য সিটি করপোরেশনগুলোতে এবং জেলা ও উপজেলায় কমিটি থাকবে। ঢাকায় দুই সিটি করপোরেশনের কমিটির সভাপতি হবেন বিভাগীয় কমিশনার। অন্যান্য সিটি করপোরেশনগুলোর কমিটিতেও সভাপতি হবেন বিভাগীয় কমিশনার। জেলা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং উপজেলা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। সরকার শ্রমঘন এলাকায় ওএমএস কর্মসূচি পরিচালনা করলে উপজেলার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট উপজেলা কমিটি, জেলা সদরের ক্ষেত্রে জেলা কমিটি এবং মহানগরের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মহানগর কমিটির দায়িত্ব পালন করবে বলে নতুন নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে ৯৮৬ জন ওএমএসের ডিলার রয়েছে। ঢাকায় মোট ডিলার ১৯১ জন। এরমধ্যে ওএমএসের দোকান ১২১টি ও ৭০টি ট্রাক। ওএমএস ডিলারদের কাছ থেকে একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি চাল ও দুই প্যাকেট (প্রতিটিতে ২ কেজি করে) আটা কিনতে পারেন। প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকা ও আটা প্রতি কেজি ২৪ টাকা।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button