সরকারি চাকরিতে প্রবেশ: পুরুষের ৩৫, নারীর ৩৭ বছর করার সুপারিশ
প্রবাহ রিপোর্ট : সরকারি চাকরিতে প্রবেশে পুরুষের বয়সসীমা ৩৫ বছর ও নারীর ৩৭ বছর করার সুপারিশ এসেছে। সম্প্রতি এই সুপারিশসহ প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানান পর্যালোচনা কমিটির প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী। তিনি গতকাল সোমবার বলেছেন, সরকারি চাকরির বয়সের ব্যাপারে আলোচনা করে এখন সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। মহিলারা যেন সুযোগটা বেশি পায়, সেজন্য বয়স ৩৭ দেওয়া হয়েছে; পার্শ্ববর্তী দেশেও তা আছে। আর সবার জন্য ৩৫ সুপারিশ করা হয়েছে। পর্যালোচনা কমিটির প্রধান বলেন, (বয়সসীমা) কোন গ্রেডের জন্য আলাদাভাবে বলা হয়নি, সার্বিকভাবে সব সরকারি চাকরির বিষয়ে বলা হয়েছে। অবসরের বয়সসীমার বিষয়ে মুয়ীদ বলেন, “অবসরের বিষয়ে কোনো কিছু বলা হয়নি। এখন যারা চাকরিতে ঢুকবে, তাদের অবসর নিতে অনেক সময় লাগবে- এ বিষয়ে পরে সরকার চিন্তা করবে। “যারা এখন চাকরিতে আছে, তারাই আগামী ৭/৮ বছরে অবসরে যাবে। তারা আগের নিয়মেই অবসরে যাবে।” এদিন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রথম বৈঠক হয়েছে জানিয়ে কমিশন প্রধান মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, “প্রশাসনের সংস্কারের বিষয়ে প্রথম বৈঠক ছিল। পরিচিতি পর্ব হয়েছে। সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা। দুই মাস পর একটা কাঠামোতে আসবে বলে মনে করি। কোন বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়ে সংস্কার হচ্ছে, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “সংস্কারের ক্ষেত্রে এখনো অগ্রাধিকার ঠিক করা হয়নি, আলোচনা চলছে। অবশ্যই চেষ্টা থাকবে তিন মাসের মধ্যে সুপারিশ দেবার। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা এখন ৩০ বছর। এটি ৩৫ করার দাবিতে কয়েক বছর ধরেই নিয়মিত কর্মসূচি পালন হচ্ছিল। কিন্তু বিগত আওয়ামী লীগ সরকার সেই দাবি একাধিকবার নাকচ করে দেয়। শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে সেই দাবি ফের জোরাল হলে ৩০ সেপ্টেম্বর কমিটি গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। আন্দোলনকারীদের দাবি পর্যালোচনা করে সম্প্রতি প্রতিবেদন দিয়েছে ওই কমিটি।
প্রজ্ঞাপনের দাবিতে শাহবাগে অবস্থান
সরকারি চাকরিতে প্রবেশে পুরুষের বয়সসীমা ৩৫ বছর এবং নারীর ক্ষেত্রে ৩৭ বছর করার যে সুপারিশ এসেছে, সেই অনুযায়ী অবিলম্বে প্রজ্ঞাপনের দাবিতে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন কওে আন্দোলনকারীরা। গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। পরে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে আন্দোলনকারীরা এসে তাতে শামিল হন। আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক পরিচয়ে মামুন রশিদ রতন বলেন, “আমরা দীর্ঘ ১২ বছর যাবত চাকরিতে বয়সসীমা বৃদ্ধির পক্ষে আন্দোলন করেছি। স্বৈরাচার সরকার আমাদেরকে বিভিন্ন সময় মারধর করেছে। বর্তমান সরকারেও আমরা ১৪৪ ধারা ভেঙে এ আন্দোলন করেছি। “তবে এ সরকার আমাদের দাবি-দাওয়া অনুযায়ী একটি কমিশন গঠন করে ছেলেদের ক্ষেত্রে ৩৫ ও মেয়েদের ক্ষেত্রে ৩৭ বছর চেয়ে একটি সুপারিশ করেছে। রাষ্ট্র এটা মেনে নিলে সাধুবাদ জানাই, কিন্তু যদি এর একদিনও (বয়সসীমা) কম হয়, তাহলে বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ তা মেনে নেবে না। এদিনই সরকার গঠিত পর্যালোচনা কমিটির প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, “মহিলারা যেন সুযোগটা বেশি পায়, সেজন্য বয়স ৩৭ দেওয়া হয়েছে; পার্শ্ববর্তী দেশেও তা আছে। আর সবার জন্য ৩৫ সুপারিশ করা হয়েছে। “(বয়সসীমা) কোনো গ্রেডের জন্য আলাদাভাবে বলা হয়নি, সার্বিকভাবে সব সরকারি চাকরির বিষয়ে বলা হয়েছে।” পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশের পরও কেন অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন- এ প্রশ্নের উত্তরে রতন বলেন, “আমরা কোন আশ্বাসে বিশ্বাসী নই, এর আগেও আমরা বহু আশ্বাস পেয়েছি। কিন্তু আমাদের দাবি মেনে নেয়া হয়নি। আমরা চাই কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি করা হোক। ৩২ কিংবা ৩৩ নয়, আমরা চাই নূন্যতম ৩৫ বছরই যেন রাখা হয় চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা এখন ৩০ বছর। এটি ৩৫ করার দাবিতে কয়েক বছর ধরেই নিয়মিত কর্মসূচি পালন হচ্ছিল। কিন্তু বিগত আওয়ামী লীগ সরকার সেই দাবি একাধিকবার নাকচ করে দেয়। শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে সেই দাবি ফের জোরাল হলে ৩০ সেপ্টেম্বর কমিটি গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। আন্দোলনকারীদের দাবি পর্যালোচনা করে সম্প্রতি প্রতিবেদন দিয়েছে ওই কমিটি। আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক পরিচয়ে আহমেদ তানজিল নামের একজন বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই আন্দোলন করে আসছি। তার প্রেক্ষিতে সরকার একটি সংস্কার কমিটি গঠন করে। “৫ সদস্য বিশিষ্ট সংস্কার কমিটি আমাদের সাথে আলোচনা করে, ৭ কার্য দিবসের মধ্যে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ছেলেদের জন্য ৩৫ এবং মেয়েদের জন্য ৩৭ করার একটি সুপারিশ করে। এই সুপারিশ যেন দ্রুত প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হয় এই দাবিতেই আজকের (গতকাল) এই কর্মসূচি।