এইচএসসির ফল প্রকাশ, পাসের হার ৭৭.৭৮
বেড়েছে শতভাগ পাস ও ফেলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জিপিএ ৫ ও পাসে মেয়েরাই এগিয়ে
প্রবাহ রিপোর্ট : সারা দেশের সব শিক্ষা বোর্ডের ২০২৪ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টায় স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠান এবং অনলাইনে একযোগে ফল প্রকাশিত হয়েছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড মিলনায়তনে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটি সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। গত বছর ১১টি বোর্ডে গড় পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এ বছর ১১টি শিক্ষা বোর্ডে মোট পরীক্ষা দিয়েছে ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৮ শিক্ষার্থী। মোট উত্তীর্ণ হয়েছে ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৩০৯ জন। পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মোট পরীক্ষর্থীর মধ্যে ছাত্র অংশ নেয় ৬ লাখ ৬৬ হাজার ১৩ জন, উত্তীর্ণ ৫ লাখ ৩ হাজার ৫৯৫ জন, জিপিএ-৫ ৬৪ হাজার ৯৭৮ জন, ছাদের পাসের হার ৭৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। ছাত্রী অংশ নেয় ৬ লাখ লাখ ৬৫ হাজার ৪৫ জন। উত্তীর্ণ ৫ লাখ ৩১ হাজার ৭১৪ জন, জিপিএ-৫ ৮০ হাজার ৯৩৩ জন, ছাত্রীদের পাসের হার ৭৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এ বছর মোট কেন্দ্র ছিল ২ হাজার ৬৯৫টি। এসব কেন্দ্র থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে মোট ৯ হাজার ১৯৭টি প্রতিষ্ঠানের ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৮ জন শিক্ষার্থী। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন এক লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ শিক্ষার্থী। আর ২০২৩ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ৯২ হাজার ৩৬৫ জন শিক্ষার্থী। সে হিসেবে এবার জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা বেড়েছে ৫৩ হাজার ৫৪৬ জন। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট িি.িফযধশধবফঁপধঃরড়হনড়ধৎফ.মড়া.নফ, িি.িবফঁপধঃরড়হনড়ধৎফৎবংঁষঃং.মড়া.নফ ও িি.িবফঁনড়ধৎফৎবংঁষঃং.মড়া.নফ -এ রেজাল্ট (জবংঁষঃ) কর্নারে ক্লিক করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইআইআইএন (ঊওওঘ) এন্ট্রি করে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক রেজাল্ট শিট ডাউনলোড করা যাবে। এ ছাড়া রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বরের মাধ্যমে নিজ নিজ রেজাল্ট শিট ডাউনলোড করা যাবে। পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর এসএমএসের মাধ্যমে ফল সংগ্রহ করা যাবে। ঐঝঈ ইড়ধৎফ হধসব (ভরৎংঃ ৩ ষবঃঃবৎং) জড়ষষ ণবধৎ টাইপ করে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। উদাহরণ: ঐঝঈ উযধ ১২৩৪৫৬ ২০২৪ লিখে ১৬২২২-তে পাঠাতে হবে। ওয়েবসাইট ভিজিট করে বোর্ড ও প্রতিষ্ঠানের ঊওওঘ-এর মাধ্যমে ফল ডাউনলোড করতে হবে।
বিলম্বিত, বিড়ম্বিত
এ বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ৩০ জুন। তবে বন্যার কারণে সিলেট বোর্ডের পরীক্ষা শুরু হয় ৯ জুলাই। ১১ বোর্ডের অধীনে এবার প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসে। এরপর সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে ১৬ জুলাই রাতেই সারাদেশে স্কুল, কলেজ, পলিটেকনিকসহ সব বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ১৮ জুলাইয়ের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়। পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেলে ১ অগাস্ট পর্যন্ত উচ্চ মাধ্যমিকের সব পরীক্ষা স্থগিত করে আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় কমিটি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ৪ অগাস্ট থেকে পূর্বঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরে সেই পরীক্ষাগুলোও স্থগিত হয়ে যায়। বারবার স্থগিতের পর ১১ অগাস্ট থেকে নতুন সূচিতে পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল। কিন্তু সরকার পতনের পর সহিংসতায় বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি প্রশ্নপত্র পুড়ে গেলে পরীক্ষা ফের স্থগিত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরে স্থগিত পরীক্ষাগুলো ১১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল, সেজন্য নতুন সূচিও প্রকাশ করেছিল কর্তৃপক্ষ; কিন্তু পরীক্ষা দিতে অনাগ্রহী শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। পরে অন্তর্বর্তী সরকার তা আরও দুই সপ্তাহ পিছিয়ে অর্ধেক প্রশ্নে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ২০ অগাস্ট পাঁচ শতাধিক পরীক্ষার্থী পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে ঢুকে পরীক্ষা না দেওয়ার দাবি তোলে। পরে সেদিনই সরকার তাদের দাবি মেনে নিয়ে বাকি পরীক্ষাগুলো না নেওয়ার ঘোষণা দেয়।
বেড়েছে শতভাগ পাস ও ফেলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় শতভাগ পরীক্ষার্থী ফেল করা এবং শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এবার বেড়েছে। ২০২৪ সালের উচ্চমাধ্যমিকও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৯ হাজার ১৯৭ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৫টির কোনো পরীক্ষার্থীই পাস করতে পারেনি। আর সব শিক্ষার্থী পাস করেছে এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১ হাজার ৩৮৮টি। ২০২৩ সালে কেউ পাস করতে পারেনি- এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৪২টি। সেই হিসাবে এবার শতভাগ অনুত্তীর্ণ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে ২৩টি। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সব শিক্ষার্থীই পাস করেছে, এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২০২৩ সালে ছিল ৯৫৩টি। তার মানে শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে ৪৩৫টি। শতভাগ শিক্ষার্থী ফেল করেছে- এমন কোনো প্রতিষ্ঠান বরিশাল ও সিলেট বোর্ডে নেই। শূন্য পাসের বিবেচনায় শীর্ষে রয়েছে দিনাজপুর বোর্ড, সেখানকার ২০টি প্রতিষ্ঠানের কেউই পাস করেনি। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ৮টি প্রতিষ্ঠান, রাজশাহীর ২টি, কুমিল্লার ৪টি, যশোরের ৭টি, চট্টগ্রামের ৫টি এবং ময়মনসিংহের ৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব পরীক্ষার্থী এবার ফেল করেছে। সব শিক্ষার্থী ফেল করেছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এবার মাদ্রাসা বোর্ডে ২টি, আর কারিগরি বোর্ডে ৩টি। শতভাগ পাস করা ১৩৮৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯৬১টি প্রতিষ্ঠান মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে। এ ছাড়া কারিগরি বোর্ডের ২৫০টি প্রতিষ্ঠান থেকে শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। ঢাকা বোর্ডে ৫৭টি প্রতিষ্ঠানের, রাজশাহীতে ৩৫টি, কুমিল্লায় ১০টি, যশোরে ও চট্টগ্রামে ১৩টি করে ২৬টি, বরিশালে ২১টি, সিলেটে ৮টি, দিনাজপুরে ১৫টি এবং ময়মনসিংহে ৫টি প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করেছে। মাদ্রাসা বোর্ডে গত বছর শতভাগ পাস করেছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৬৬১টি। আর কারিগরি বোর্ডের ১৪০টি প্রতিষ্ঠান থেকে গতবছর শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করে।
জিপিএ ৫ ও পাসে মেয়েরাই এগিয়ে
উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় গত কয়েক বছরের মতো এবারও পাসের হার ও জিপিএ ৫ প্রাপ্তিতে এগিয়ে আছে ছাত্রীরা। ২০২৪ সালের উচ্চমাধ্যমিকপরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রী ৬ লাখ ৬৫ হাজার ৪৫ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৩১ হাজার ৭১৪ জন বা ৭৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ পাস করেছে। আর ৬ লাখ ৬৬ হাজার ১৩ জন ছাত্রের মধ্যে পাস করেছে ৫ লাখ ৩ হাজার ৫৯৫ জন, যার হার ৭৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। চলতি বছর ছাত্রীদের মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৮০ হাজার ৯৩৩ জন; আর ছাত্রদের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা ৬৪ হাজার ৯৭৮। তার মানে, ছাত্রদের চাইতে ১৫ হাজার ৯৫৫ জন বেশি ছাত্রী পূর্ণাঙ্গ জিপিএ পেয়েছেন। এর আগে ২০২৩ সালের উচ্চমাধ্যমিকপরীক্ষায় ছাত্রীদের মধ্যে ৪৯ হাজার ৩৬৫ জন জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন। আর পূর্ণাঙ্গ জিপিএ পাওয়া ছাত্রের সংখ্যা ছিল ৪৩ হাজার ২৩০। সেবার ছাত্রদের চাইতে ৬ হাজার ১৩৫ জন জন বেশি ছাত্রী জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন।