জাতীয় সংবাদ

দেশে ভারতীয় সব টিভির সম্প্রচার বন্ধ চাওয়া রিট, শুনবেন হাইকোর্ট

প্রবাহ রিপোর্ট : নিয়ম অনুযায়ী সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে অর্থ না দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চলতে থাকা ভারতীয় সব টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে দায়ের করা রিট শুনবেন হাইকোর্ট। আজ বুধবার রিট আবেদনটি শুনানির জন্য হাইকোর্টের কার্যতালিকায় আসবে বলে জানিয়েছেন রিটকারীর আইনজীবী। এ সংক্রান্ত বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে রিটকারীর আইনজীবী একলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, এটা জরুরি বিষয়। জরুরি শুনানি করা দরকার। এর আগে, বাংলাদেশে ভারতীয় সব টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করা হয়। গত সোমবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় অ্যাডভোকেট সৈয়দা শাহীন আরা লাইলীর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী একলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া এই রিটটি করেন। রিটে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনসহ (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) বিবাদী করা হয়েছে। রিটে আবেদনে ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন ২০০৬ এর ১৯ ও ২০ ধারা উল্লেখ করা হয়েছে। সম্প্রচার বা সঞ্চালনের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ সংক্রান্ত আইনের ১৯ ধারায় বলা হয়েছে, সেবাদানকারী ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যেসব অনুষ্ঠান সম্প্রচার বা সঞ্চালন করতে পারবে না সেগুলো হলো-
১. দেশের অখ-তা, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শের পরিপন্থি কোনো অনুষ্ঠান
২. রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি এবং রাষ্ট্রীয় নীতির পরিপন্থি কোনো অনুষ্ঠান
৩. হিংসাত্মক, সন্ত্রাস, বিদ্বেষ ও অপরাধসম্বলিত কোনো অনুষ্ঠান
৪. বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতি, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ, জাতীয় সংহতি ও রাষ্ট্রীয় ভাবমূর্তির পরিপন্থি কোনো অনুষ্ঠান
৫. জাতীয় নিরাপত্তা ও জনস্বার্থ হানিকর কোনো অনুষ্ঠান
৬. দেশের কোনো সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীর আবেগ-অনুভূতিতে আঘাত হানতে পারে এমন কোনো অনুষ্ঠান
৭. দ্য সেন্সরশিপ অব ফিল্মস অ্যাক্ট, ১৯৬৩ বা এর অধীন প্রণীত বিধি বা নীতিমালার পরিপন্থি কোনো অনুষ্ঠান
৮. অশালীন বা আক্রমণাত্মক কোনো রসিকতা, অঙ্গভঙ্গি, নৃত্যগীত, বিজ্ঞাপন, সংলাপ বা সাবটাইটেল সংবলিত কোনো অনুষ্ঠান
৯. নগ্নতা, নগ্ন ছায়াছবি, বস্ত্র উন্মোচন দৃশ্য, দেহ প্রদর্শন, অশোভন অঙ্গভঙ্গি, যৌনক্রিয়ার ইঙ্গিতসূচক বা প্রতীকী নাচ অথবা অশোভন দৃশ্য সংবলিত এমন কোনো অশ্লীল অনুষ্ঠান
১০. উচ্ছৃঙ্খলতা, ধ্বংসযজ্ঞ, শিশু-কিশোর অপরাধ বা অপ-সংস্কৃতিকে আকর্ষণীয় ও উৎসাহিত করতে পারে বা শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বিকাশে ক্ষতির কারণ হতে পারে এমন কোনো অনুষ্ঠান
১১. মূল তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা অক্ষুণ্ন না রেখে সম্প্রচারিত কোনো অনুষ্ঠান;
১২. অন্য কোন আইনের মাধ্যমে বারিত বা সেন্সরকৃত ছায়াছবি বা কোনো অশ্লীল অনুষ্ঠান
১৩. বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য বিদেশি কোনো চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন;
১৪. সরকারের অনুমতি ব্যতিরেকে সুনির্দিষ্টভাবে বাংলাদেশের দর্শকদের উদ্দেশ্যে বিদেশি চ্যানেলের কোনো অনুষ্ঠান সম্প্রচার। আইনজীবী একলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ভারতীয় সব টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ চাওয়া হয়েছে। ভারতীয় টিভি চ্যানেলে বিভিন্ন উসকানিমূলক সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়া ভারতীয় চ্যানেলে বাংলাদেশের সংস্কৃতিবিরোধী বিভিন্ন অনুষ্ঠান অবাধ সম্প্রচারের ফলে যুব ও তরুণ সমাজ ধ্বংসের সম্মুখীন। ভারতীয় সিরিয়াল দেখে ঘরে ঘরে অশান্তি ও বিবাহ বিচ্ছেদের মতো ঘটনা ঘটছে। এছাড়াও তারা কোনো আইন মানছে না। এসব কারণে ভারতীয় সব চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ চাওয়া হয়েছে। জনস্বার্থে ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্কের কার্যক্রম নিষিদ্ধকরণের ক্ষমতা সংক্রান্ত ২০ ধারায় বলা হয়েছে, সরকার যে কোনো স্থানে, যে কোনো সময়ে, জনস্বার্থে যে কোনো ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্কের কার্যক্রম সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে নিষিদ্ধ করতে পারবে। আইনজীবী একলাছ উদ্দিন ভূইয়া জানান, বর্তমানে ভারতের বিভিন্ন টিভি চ্যানেল আইনের বিভিন্ন উপ-ধারা লঙ্ঘন করে চলেছে। এ জন্য তাদের সম্প্রচার বন্ধ চেয়ে রিট করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button