১৩ বছর আগের এক গ্রাফিতি যেভাবে পতন ঘটাল আসাদের
প্রবাহ রিপোর্ট ঃ ক্ষমতা হাতছাড়া হওয়ার পর পালিয়ে রাশিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন সিরিয়ার শাসক বাশার আল আসাদ। পরিবারসহ তিনি মস্কোয় পৌঁছেছেন বলে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংস্থা ক্রেমলিনের সূত্রের বরাত দিয়ে এ খবর দিয়েছে বিবিসি। রবিবার সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাসীনদের হাতছাড়া হয়ে গেলে দেশটির ৬১ বছরের বাথ শাসনামলের লজ্জাজনক ইতি হয়। সবশেষ বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে সিরিয়ায় মাত্র ১২ দিনের মাথায় বাশার আল আসাদ সরকারের এই ‘পতন’ হয়েছে। তবে এ সরকারের পতনের অন্যতম কারণ রয়েছেন ১৪ বছরের এক কিশোর। ১৩ বছর আগে ২০১১ সালে স্বৈরশাসক বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে এক গ্রাফিতি একেছিলেন তিনি। তার সেই গ্রাফিতিতেই বদলে গেছে সিরিয়ার ভাগ্য। সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের দারা এলাকার একটি সড়কে গ্রাফিতি একেছিলেন মুয়াবিয়া সায়সানেহ নামের এক কিশোর। গ্রাফিতিতে তিনি লিখেছিলেন, ‘এজাক এল দরজা, ইয়া ডাক্তার’। যার অর্থ ‘এবার আপনার পালা ডাক্তার’। মূলত প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে নিশানা করে এ গ্রাফিতি আঁকেন তিনি। পরে এই গ্রাফিতি সিরিয়ার জাতীয় বিদ্রোহের স্মারক হয়ে ওঠে। এর ফলে ২১ শতকের ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের সূচনা হয়। এটি আকার কারণে পুলিশি হয়রানির শিকার হন মুয়াবিয়া ও তার বন্ধুরা। গোপনে পুলিশ তাদের ২৬ দিন আটকে রাখে। তাদের ওপর নির্যাতনের কারণে দারার বাসিন্দারা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ফলে মুক্তির দাবিতে বাবা-মা, প্রতিবেশী এবং আন্দোলনকারীরা প্রতিবাদ করেন। এ সময় তাদের ওপর টিয়ার গ্যাস ও গুলি ছোড়া হয়। মুয়াবিয়ার এ ছবি ছড়িয়ে পড়লে জনগণ ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে। কেবল দারা নয়, পুরো সিরিয়াতেই বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। ২০১১ সালের ১৫ মার্চ সিরিয়ায় প্রথমবারের মতো ধারাবাহিক আন্দোলন শুরু হয়। পরে তা স্বাধীনতা ও আসাদ শাসনের অবসানের দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভে পরিণত হয়। শান্তিপূর্ণ এ বিক্ষোভকে সহিংসতায় পরিণত করে আসাদ বাহিনী। তারা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। ১৩ বছর আগের সেই গ্রাফিতি দিয়ে বাশার আল আসাদকেই বোঝানো হয়েছিল। কারণ সিরিয়ার সাবেক এই প্রেসিডেন্ট দামেস্কের ইউনিভার্সিটি থেকে চক্ষুবিজ্ঞানে পড়াশোনা করেছেন। চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছা ছিল তার। এ জন্য লন্ডন থেকে চক্ষুবিজ্ঞানের ওপর উচ্চতর ডিগ্রিও অর্জন করেন তিনি। তবে বড় ভাই সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হলে তিনি বাবার নির্দেশে দেশে ফিরেন। পরে সিরিয়ায় সামরিক বিষয়ে পড়াশোনা করেন তিনি।