জাতীয় সংবাদ

আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধের দাবিতে উত্তাল বাংলাদেশ

# আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছে রাজধানীর শাহবাগ মোড়
# দ্রুত সিদ্ধান্ত না এলে আবারও ‘মার্চ টু ঢাকা’ : নাহিদ ইসলাম #
# শাহবাগে অবস্থানরতরা খালেদা জিয়ার অপেক্ষায় !

প্রবাহ রিপোর্ট ঃ শুক্রবার (৯ মে) বিকেলে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের পার্শ্ববর্তী সড়ক থেকে সমাবেশ শেষে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করলে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এই অবরোধে যেন ফিরে এসেছে ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ের উত্তাল দিনগুলো, যা ‘জুলাই আন্দোলন’ নামে পরিচিত। এ সমাবেশে জাতীয় নাগরিক পার্টির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। দলটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তালাত মাহমুদ রাফিসহ এনসিপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এদিন বিকেল সাড়ে চারটার পর থেকেই জামায়াত-শিবির, হেফাজতে ইসলাম, গণঅধিকার পরিষদ, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ ছাত্র-জনতা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিতে শুরু করেন। তাদের কণ্ঠে ছিল আওয়ামী লীগ বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান। তার মধ্যে ‘ব্যান করো ব্যান করো, আওয়ামী লীগ ব্যান করো’, ‘দিল্লি না, ঢাকা, ঢাকা-ঢাকা’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘গোলামি না আজাদী, আজাদী আজাদী’ ‘নাহিদ, আক্তার আসছে, রাজপথ কাঁপছে’, ‘একটা একটা ছাত্রলীগ ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর’, ‘আওয়ামী লীগের আস্তানা, ভেঙে দাও ঘুরিয়ে দাও’, ‘২৪ বাংলায়, আওয়ামী লীগের ঠাঁই নাই’, ‘লীগ ধর, জেলে ভর’, প্রভৃতি বলে স্লোগান দেওয়া হচ্ছে। এদিকে অবরোধের ফলে শাহবাগের চারপাশের রাস্তায় যানজট সৃষ্টি হয়েছে। সায়েন্সল্যাব, টিএসসি এবং বাংলামোটরের দিকে যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। তবে আন্দোলনকারীরা তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
শাহবাগে অবস্থান নিতে শুরু করেছেন ছাত্র-জনতা ঃ
শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খালিদ মনসুর বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন। ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
এর আগে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উদ্যোগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের পার্শ্ববর্তী সড়কে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেই সমাবেশ শেষে এই অবরোধ কর্মসূচি শুরু করে আন্দোলনকারীরা। প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনের বিরুদ্ধে জনঅসন্তোষ থেকে জন্ম নেওয়া ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও অন্তর্র্বতী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর রাজনৈতিক পালাবদলের এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়। তবে সময় গড়াতেই আবারও সরব হয়ে ওঠে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সংগঠন। অন্তর্র্বতী সরকারের অধীনে ব্যবস্থাপনা চললেও, আওয়ামী লীগের ‘সাংগঠনিক অপরাধ ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকা-ের’ অভিযোগ তুলে এবার দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে রাজপথে নেমেছে এনসিপিসহ বিভিন্ন সংগঠন। ৯ মাস আগের আন্দোলনের সূত্র ধরে নতুন করে গতি পেয়েছে এই প্রতিবাদ, যা রাজধানীর রাজপথে ফের চাঙ্গা করেছে রাজনৈতিক উত্তাপ। অপরদিকে হার্ডলাইনে ছাত্র-জনতা ঃ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত না এলে আবারও ‘মার্চ টু ঢাকা’র মতো কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
শুক্রবার (৯ মে) চলমান ‘শাহবাগ ব্লকেড’ কর্মসূচির মধ্যেই নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
অন্তর্র্বতী সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা ফেসবুক পোস্টে বলেন, শাহবাগের অবস্থান চলমান থাকবে। দলমত নির্বিশেষে আওয়ামী লীগ ও দেশের সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে জুলাইয়ের সকল শক্তি এক থাকবে এটাই প্রত্যাশা। ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে ব্লকেড চালু হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত না এলে সমগ্র বাংলাদেশ আবারও ঢাকা শহরে মার্চ করবে। নাহিদ ইসলাম বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব বিরোধী, স্বাধীনতা বিরোধী, জুলাই বিরোধী, গণতন্ত্র বিরোধী, ইসলাম বিরোধী, নারী বিরোধী, মানবতা বিরোধী ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসী মুজিববাদী সংগঠন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধকরণে বাংলাদেশপন্থি সকল শক্তি ঐক্যবদ্ধ হই।
২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির মধ্য দিয়েই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত পতন হয়েছিল। ৮ মে রাত থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেন। রাত পেরিয়ে শুক্রবার দুপুরেও এনসিপির নেতাকর্মীরা যমুনার প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ করেন। পরে শুক্রবার বিকেলে থেকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে রাজধানীর শাহবাগ মোড়। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে চলছে ‘শাহবাগ ব্লকেড’ কর্মসূচি। অন্যদিকে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র বলছেন, ‘বেগম জিয়া, শাহবাগ ও বাংলাদেশ আপনার অপেক্ষায়’ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে উত্তাল রাজধানীর শাহবাগ। সেখানে ‘ব্যান করো ব্যান করো, আওয়ামী লীগ ব্যান করো’সহ নানা স্লোগান দিচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। এদিকে শুক্রবার (৯ মে) সন্ধ্যা ৭টায় নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সেখানে উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি। তিনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের বেগম জিয়া, শাহবাগে হাজারো শহিদ পরিবার ও সারা বাংলাদেশ আপনার অপেক্ষায়।’ ফেসবুকে দেওয়া আরেকটি পোস্টে হাদি বলেন, ‘যেই শাহবাগে ফ্যাসিবাদের উত্থান, সেই শাহবাগেই তার কবর রচিত হবে। ইনশাআল্লাহ্।’ এদিন বিকেলে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের পার্শ্ববর্তী সড়ক থেকে সমাবেশ শেষে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করলে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এই অবরোধে যেন ফিরে এসেছে ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ের উত্তাল দিনগুলো, যা ‘জুলাই আন্দোলন’ নামে পরিচিত।
এ সমাবেশে জাতীয় নাগরিক পার্টির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। দলটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তালাত মাহমুদ রাফিসহ এনসিপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button