জলাবদ্ধতা নিরসনের নামে ৩ হাজার কোটি টাকা লুটপাট

প্রবাহ রিপোর্ট ঃ ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার আমলে রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনের নামে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা হরিলুট হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং কোনো কোনো এলাকায় জলাবদ্ধতা আরো বাড়ার কথা জানিয়েছেন নগরবাসী। বিশাল অঙ্কের অর্থ খরচ করেও বর্ষা মৌসুমে রাজধানীর জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির কোনোই উন্নতি হয়নি। ভারী বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় কোনো না কোনো এলাকা, এতে ভোগান্তিতে পড়েন এলাকাবাসী। প্রতি বর্ষা মৌসুমেই এটি যেন নিয়মতান্ত্রিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যার পর ৩০ মিনিটের ৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিতেই রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, তাতে ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী । শুক্রবার রাতে ভোগান্তিতে পড়া বিউটি আক্তার হাসু নামের মিরপুর-১০-এর এক বাসিন্দা ফেসবুক পোস্টে প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘স্থলপথে অফিসে গেলেও মিরপুর মেট্রোরেল থেকে নেমে পানিপথের যুদ্ধ শেষে বাসায় আসছি। রাস্তায় পানি জমে থাকায় রিকশা পাচ্ছিলাম না। পানিপথে কিছুদূর হেঁটে এসে অবশেষে রিকশা মেলে।’ দারুস সালামের বাসিন্দা রকিব উদ্দিন বলেন, শুক্রবার রাতে কিছুক্ষণের বৃষ্টিতেও পুরো এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। মেইন রোডসহ অলিগলি পানিতে থই থই করছিল। অনেকেই হাঁটুপানি ভেঙেই ঘরে ফেরেন। শুধু মিরপুর নয়, ওইদিন কাজীপাড়া, টেকনিকেল মোড়, মহাখালী, উত্তরা, পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার মেইন রোডেও ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, আগেভাগে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে এবারও বর্ষায় রাজধানীবাসীকে ভোগান্তিতে পড়তে হবে। এদিকে জুলাই বিপ্লবের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বতী সরকার গঠনের পর রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল খননসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্ষার আগেই রাজধানীর ১৯টি খালে পানিপ্রবাহ পুনরুদ্ধারে উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্র্বতী সরকার। এ নিয়ে বর্ষার আগেই এসব খালে পানির প্রবাহ ফেরাতে মাস্টারপ্ল্যানের পরিকল্পনা করছে সরকার। প্রথম ধাপে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন বাউনিয়া, রূপনগর, বেগুনবাড়ি, মান্ডা, কালুনগর খাল এবং কড়াইল লেকসহ ২১ কিলোমিটার জলাশয়ের সংস্কার কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এর অংশ হিসেবে চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি মিরপুর-১৩ এলাকায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির ৬টি খালের সংস্কার কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন সরকারের তিন উপদেষ্টা। এ প্রসঙ্গে পানিসম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা ৩-৪টি মন্ত্রণালয় বসে কীভাবে বর্ষার আগে খালগুলোতে পানি প্রবাহ ফেরাতে পারি, সে বিষয়ে কাজ করছি। প্রথমে খনন করব, এরপর ধাপে ধাপে বাকি কাজ এগোব। এ খালে মশা ব্যতীত কিছুই নেই। আমরা স্থানীয়দের নিয়ে কমিটি করে দিয়েছি। তারাই খাল দখল, দূষণ রোধে কাজ করবেন। খালের পাড়ে সবুজ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব, একইসঙ্গে খালে মাছ যাতে বাঁচে, সে ব্যবস্থাও করা হবে। স্থানীয় সরকার এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, খালের এ সমস্যা দীর্ঘদিনের। আমরা কিছু উদ্যোগ নিয়েছি, তার মধ্যে ব্লু নেটওয়ার্ক তৈরি অন্যতম। ১৯টি খাল উদ্ধারের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। ব্লু নেটওয়ার্ক চ্যানেল তৈরি করে পার্কের মতো করা হবে। যাতে খাল দূরে সরে না যায়, কাছে আসতে বাধ্য হয়। তিনি বলেন, অন্য যে কোনো সরকার থাকলে এই কাজ করতে চিঠি চালাচালি করতেই সময় চলে যেত। আমরা তাই কোনো প্রকল্পে না গিয়ে কর্মসূচি নিয়েছি। কাজটি শুরু করে দিয়ে যেতে চাই; দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প হাতে নিলে পরবর্তী সরকার এসে নেবে। এ প্রসঙ্গে গণপূর্ত ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, গত সাড়ে ১৬ বছরে লুটপাট ও দুর্নীতির ফলে খালগুলো দখল-দূষণের শিকার হয়েছে। ইতোমধ্যে রাজউক টোটাইল বিল দখলমুক্ত করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগে ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের মূল দায়িত্ব ছিল ঢাকা ওয়াসার। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর জলাবদ্ধতা নিরসনের মূল দায়িত্ব (খাল ও ড্রেনেজ) দেওয়া হয় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে। তাতে অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি।