জাতীয় সংবাদ

ইসরাইল-হামাস যুদ্ধবিরতি : ফিলিস্তিনি মুখরিত হচ্ছে ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনিতে

বিশ্ব নেতারা যা বলছেন

প্রবাহ ডেস্ক : বৃহস্পতিবার বিশ্ব নেতারা ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি-মুক্তি চুক্তির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন। এই চুক্তির মাধ্যমে গাজায় দুই বছরের যুদ্ধের অবসান ঘটাতে থেকে পারে। প্যারিস এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার ইসরাইল ও হামাস দুই বছরের ভয়াবহ যুদ্ধের অবসান ঘটাতে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হওয়ার পর দক্ষিণ গাজার ফিলিস্তিনিরা ভোরের অন্ধকারে হাততালি, উল্লাস এবং নাচা-নাচিতে বিভোর ছিল। গাজার খান ইউনিস থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের বাইরে যখন একজন ব্যক্তি আনন্দে আত্মহারা হয়ে অন্য এক জনকে কাঁধে তুলে নিয়ে নাচা-নাচি করছিলেন। তখন প্রায় এক ডজন তরুণের ভিড় আনন্দে ‘আল্লাহু আকবর’, যার অর্থ আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, ধ্বনি দিচ্ছিল। সাংবাদিকের প্রেস জ্যাকেট পরা একজন ব্যক্তিকে ভিড়ের ওপরে তুলে মাইক্রোফোনে কথা বলতে দেখা গেছে।
ফিলিস্তিনি অঞ্চল : ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, তিনি আশা করেন, এই চুক্তি ‘স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছানোর একটি সহায়ক ভূমিকা’ হবে, যা একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে পরিচালিত করবে।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্য্যান্তোনিও গুতেরেস সকল জিম্মিকে ‘মর্যাদার সাথে’ মুক্তি দেওয়ার এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ‘যুদ্ধ চিরতরে বন্ধ করতে হবে।’ তিনি গাজায় অবিলম্বে নিরবচ্ছিন্নভাবে মানবিক সাহায্য প্রবেশের আহ্বান জানিয়েছেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশংসা করেছেন এবং ‘যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরাইলি সরকারকে উৎসাহিত করার জন্য প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি’ প্রদর্শনের জন্য তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
ইইউ’র পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কাজা ক্যালাস এই চুক্তিকে ‘একটি বড় কূটনৈতিক সাফল্য’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, এই চুক্তির ফলে সংঘাতের অবসান এবং জিম্মিদের মুক্তির ‘একটি বাস্তব সুযোগ’।
ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে, ট্রাম্পের মিত্র ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এটিকে ‘অসাধারণ খবর’ বলে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, তিনি আশা করছেন এটি ‘রাজনৈতিক সমাধানের’ পথ প্রশস্ত করবে।
জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ বলেছেন, উন্নয়নগুলো ‘উৎসাহজনক’ এবং তিনি এই সপ্তাহে একটি সমাধানের বিষয়ে ‘আত্মবিশ্বাসী’।
গাজায় ইসরাইলি আক্রমণের ইউরোপের অন্যতম সোচ্চার সমালোচক স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেছেন, বেসামরিক জনগণকে এখন সমর্থন করা উচিত এবং ‘যে নৃশংসতা আরো কখনো পুনরাবৃত্তি হবে না’।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার মধ্যস্থতাকারী মিশর, কাতার, তুরস্ক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘অক্লান্ত কূটনৈতিক প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন। সেইসাথে আঞ্চলিক অংশীদারদের ‘অক্লান্ত কূটনৈতিক প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন। এই চুক্তিকে তিনি ‘গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছেন।
তিনি আরো বলেছেন, ‘এই চুক্তিটি এখন সম্পূর্ণরূপে, বিলম্ব ছাড়াই বাস্তবায়ন করতে হবে এবং গাজায় জীবন রক্ষাকারী মানবিক সহায়তার ওপর থেকে অবিলম্বে সমস্ত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করতে হবে’।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন বলেছেন, বেইজিং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গাজায় ‘স্থায়ী এবং ব্যাপক’ যুদ্ধবিরতি আশা করে। তিনি আরো বলেছেন, ‘চীন ‘ফিলিস্তিনিদের ফিলিস্তিন শাসন করা উচিত’ এই নীতি মেনে চলার পক্ষে।’
এদিকে, বৃহস্পতিবার ইসরাইল ও হামাস দুই বছরের ভয়াবহ যুদ্ধের অবসান ঘটাতে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হওয়ার পর দক্ষিণ গাজার ফিলিস্তিনিরা ভোরের অন্ধকারে হাততালি, উল্লাস এবং নাচা-নাচিতে বিভোর ছিল। গাজার খান ইউনিস থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের বাইরে যখন একজন ব্যক্তি আনন্দে আত্মহারা হয়ে অন্য এক জনকে কাঁধে তুলে নিয়ে নাচা-নাচি করছিলেন। তখন প্রায় এক ডজন তরুণের ভিড় আনন্দে ‘আল্লাহু আকবর’, যার অর্থ আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, ধ্বনি দিচ্ছিল। সাংবাদিকের প্রেস জ্যাকেট পরা একজন ব্যক্তিকে ভিড়ের ওপরে তুলে মাইক্রোফোনে কথা বলতে দেখা গেছে।
দক্ষিণ গাজার বাসিন্দা আবদেলমাজিদ আবেদরাব্বো বলেছেন, ‘এই যুদ্ধবিরতির জন্য আল্লাহকে ধন্যবাদ, রক্তপাত এবং হত্যাকা-ের অবসানের জন্য ধন্যবাদ’।
তিনি আরো বলেছেন, ‘আমি একা খুশি নই, পুরো গাজাবাসী খুশি, সমস্ত আরব জনগণ যুদ্ধবিরতিতে খুশি।’
‘যারা আমাদের সাথে দাঁড়িয়ে রক্তপাত বন্ধে ভূমিকা রেখেছেন এবং গাজা থেকে আপনাদের ভালোবাসা পাঠিয়েছেন, তাদের সকলকে ধন্যবাদ এবং ভালোবাসা।’
ইসরাইল এবং হামাস বৃহস্পতিবার গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে যা কয়েক দিনের মধ্যে অবশিষ্ট জীবিত জিম্মিদের মুক্তি দিতে পারে। এই যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা এবং মানবিক সংকট সৃষ্টিকারী যুদ্ধের অবসানের একটি বড় পদক্ষেপ।
বৃহস্পতিবার স্বাক্ষরিত এই চুক্তিতে ইসরাইলকে কয়েকশ’ ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়ার পাশাপাশি ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরাইলের ওপর হামাসের অতর্কিত আক্রমণের ফলে শুরু হওয়া দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধের পর গাজায় সাহায্যের আহ্বান জানানো হয়েছে।- ‘আমরা খুশি’ –
আয়মান আল-নাজ্জার খান ইউনিসে এএফপি’কে বলেছেন, ‘সমস্ত আহত এবং হত্যাকা- এবং প্রিয়জন এবং আত্মীয়স্বজনদের হারানো সত্ত্বেও যুদ্ধবিরতিতে আমরা আজ খুশি’। তিনি আরো বলেছেন, ‘আমি আমার চাচাতো ভাইবোন এবং কিছু বন্ধুকে হারিয়েছি এবং এক সপ্তাহ আগে আমি আমার প্রিয় দাদাকে হারিয়েছি। তার আত্মা শান্তিতে থাকুক। কিন্তু আজ এবং এত কিছুর পরেও আমরা খুশি’।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী হামাসের ইসরাইলের ওপর আক্রমণের ফলে গাজায় যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। ইসরাইলি সরকারি পরিসংখ্যানেরওপর ভিত্তি করে এএফপি’র হিসাব অনুসারে ১,২১৯ জন নিহত হয়েছিল। এদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, গাজায় ইসরাইলের প্রতিশোধমূলক অভিযানে কমপক্ষে ৬৭,১৮৩ জন বেসামরিক ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহত হয়েছেন। যার বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
হামাস গাজায় ২৫১ জনকে জিম্মি করে, যেখানে ৪৭ জন এখনো রয়ে গেছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছে এর মধ্যে ২৫ জন মারা গেছে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি গত মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক ঘোষিত গাজার জন্য ২০-দফা শান্তি পরিকল্পনা অনুসরণ করে।
ওয়ায়েল রাদওয়ান বলেছেন, ‘আল্লাহকে ধন্যবাদ। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করেছেন। আমরা খুবই খুশি’।
‘আমরা আমাদের ভাইদের এবং যারা এই যুদ্ধ এবং এই রক্তপাত বন্ধ করার জন্য শুধু কথা বলেও অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই।’
মধ্য গাজা উপত্যকার আল-মাঘজাইতে বাস্তুচ্যুত ২৬ বছর বয়সী খালেদ আল-নামনাম বলেছেন, তিনি এই খবরটি আশা করেননি।
তিনি টেলিফোনে এএফপি’কে বলেছেন, ‘হঠাৎ, সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি অবিশ্বাস্যভাবে সুন্দর খবর পেলাম। সবাই যুদ্ধের সমাপ্তি, সাহায্য আসা এবং ক্রসিং খোলার কথা বলছিল। আমি অপরিসীম আনন্দ অনুভব করলাম’।
‘দুই বছর ধরে বোমা হামলা, ভয়, সন্ত্রাস এবং ক্ষুধার পর এটি একটি অদ্ভুত অনুভূতি যা অবর্ণনীয়। সত্যিই, মনে হচ্ছে আমরা আবার জন্মগ্রহণ করছি।’

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button