স্থানীয় সংবাদ

কেসিসির দাপুটে সাবেক এসএলও ফারুখ তালুকদার দুর্নীতির দায়ে চাকুরি থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত হচ্ছেন

সাবেক মেয়র খালেকের ভাইপো পরিচয়ে ছিলেন বেপরোয়া

স্টাফ রিপোর্টারঃ খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) সাবেক মেয়র তালুদার আঃ খালেকের ভাইপো হিসেবে পরিচিত সেই দাপুটে সিনিয়র লাইসেন্স অফিসার (এসএলও) আলহাজ্ব মোঃ ফারুখ হোসেন তালুকদার চাকুরি থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত হচ্ছেন। কেসিসির সচিব সানজিদা বেগম স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে গত ২২ সেপ্টেম্বর তাকে দুর্নীতির দায়ে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হবে কি না তা এ অভিযোগনামা প্রাপ্তি ১০ কর্মদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে জানানোর জন্য বলা হয়। ওই অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক সিনিয়র লাইসেন্স অফিসার মোঃ ফারুখ হোসেন তালুকদারকে গত ১২ অক্টোবর’২৩ তারিখের ১১৩০ নং স্মারকে অটোরিক্সার আটককৃত ৪৮টি মটর কম জমা করার অভিযোগসহ উক্ত মটরের মূল্য বাবদ একলক্ষ বিরানব্বই হাজার টাকা কেসিসি’র কোষাগারে জমা প্রদানের জন্য নির্দেশনা দিয়ে ১০টি কার্য দিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। কিন্তু তিনি অদ্যাবধি উক্ত পত্রের কোন ব্যাখ্যা দেননি এবং টাকাও জমা প্রদান করেননি। যেহেতু, তার এহেন কর্মকান্ড খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কর্মকর্তা-কর্মচারী) চাকুরী বিধিমালা ১৯৯৩ এর ক, খ, ও এবং ও ধারা মতে অর্থাৎ দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অসদাচরণ, দুর্নীতি পরায়ন এবং অর্থ আত্মসাথে দায়ে দোষী তথা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তার এহেন কর্মকান্ডে কেসিসি’র ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। এমতাবস্থায়, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক সিনিয়র লাইসেন্স অফিসার মোঃ ফারুখ হোসেন তালুকদারকে খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কর্মকর্তা-কর্মচারী) চাকুরী বিধিমালা ১৯৯৩ এর ক. খ. ঙ এবং চ ধারায় বর্ণিত দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অসদাচরণ, দুর্নীতি পরায়ন এবং অর্থ আত্মসাতের কারণে একই বিধিমালার ৩৯ (১) ধারা মতে কেসিসি’র নি¤œমান সহকারী এবং সাবেক সিনিয়র লাইসেন্স অফিসার বর্তমানে কঞ্জারভেন্সি সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত মোঃ ফারুখ হোসেন তালুকদার পিতা-আব্দুস সাত্তার তালুকদারকে চাকুরি হতে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হবে না তা এ অভিযোগ নামা প্রাপ্তির ১০ কর্মদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে জানানোর জন্য বলা হলো। সাবেক মেয়র তালুকদার আঃ খালেকের সময় তিনি কোন অফিসারকে আমলে নিতেন না। ধরাকে সরা জ্ঞান করতেন। সাবেক মেয়র তালুকদার আঃ খালেকের রামপাল এলাকায় বাড়ি হওয়ার সুবাধে তিনি নিজেকে মেয়রের আতœীয় পরিচয় দিয়ে অবৈধ সুবিধা ও অবৈধ ক্ষমতা ভোগ করেন। তিনি নি¤œমান সহকারি হয়ে সকল নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে সিনিয়র লাইসেন্স অফিসার পদটি ভাগিয়ে নেন। তিনি ট্রেড লাইসেন্স শাখার ১১টি চুরি সাথে জড়িত মর্মে নগরভবনে ব্যাপক প্রচারণা থাকলেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে তা থেকে দায়মুক্তি পেয়েছেন। ওই অভিযোগের তদন্ত নতুন করে করার দাবি তুলেছে ভুক্তভোগী কর্মচারিরা। তারা বলেছেন, ট্রেড লাইসেন্স বই চুরির যে ঘটনা ঘটেছে সে ঘটনায় কয়েকজন কর্মচারিকে দায়ী করা হলেও সাবেক সিনিয়র লাইসেন্স অফিসার ফারুখ হোসেন তালুকদার দায়মুক্তি পেতে পারে না। এ কাজে সাবেক সিআরও, হিসাব শাখার ক্যাশিয়ার ও সাবেক এসএলও ফারুখ তালুকদার কেসিসির অভ্যন্তরীণ তদন্তে নিজেদের নির্দোষ করাতে সক্ষম হয়েছে। এ জন্য তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে বলে কর্মচারিরা জানান। যদিও এ ব্যাপারে দুদক আলাদাভাবে তদন্ত করছে বলে সূত্রটি জানায়। কেসিসি ট্রেড লাইসেন্স বিভাগের ৫৩ লাখ ৬২ হাজার ৯৪০ টাকা জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে। ওই বিভাগে কর্মরত চারজন কর্মচারী এ অর্থ লোপাটের সঙ্গে জড়িত বলে প্রমাণ মিলেছে। এ কারণে আত্মসাৎকৃত এ সরকারি অর্থ হিসাব বিভাগে জমা দিতে ৪ কর্মচারীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আতœসাৎকৃত টাকা চারজন কর্মচারি কিস্তি করে জমা দিচ্ছে। তবে হাবিবুর রহমান নামের একজন কর্মচারি ইতোমধ্যে সব টাকা জমা দিয়েছে। কেসিসি থেকে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ট্রেড লাইসেন্স শাখা ক্যাশ শাখা থেকে ২০৪টি এম বই গ্রহণ করে। ২০৪টি বইয়ের মধ্যে ১৯৩টি এম বই অডিট টিমের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাকি ১১টি বই জমা দিতে পারেনি লাইসেন্স শাখার কর্মচারীরা। এ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে ওই চার কর্মচারীকে ১১টি এম বই জমা দিতে কয়েকবার চিঠি দেয়। কিন্তু তারা বই জমা দেয়নি। পরে ওই ১১টি বইয়ের আওতায় জমা দেওয়া সমুদয় টাকা ওই ৪ জন কর্মচারীর কাছ থেকে আদায় করার সিদ্ধান্ত হয়। যা মূল ঘটনা আড়াল করে নিরিহ কর্মচারিকে ফাঁসানো হয়। নতুন করে বিষয়টি তদন্ত করলে বই চুরির সাথে জড়িত রাঘব বোয়ালরা বেরিয়ে আসতে পারে বলে ভুক্তভোগী কর্মচারিরা মনে করেন। তবে অভিযুক্ত ফারুক হোসেন তালুকদার নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button