ডেঙ্গু থেকে রক্ষায় মশকনিধনে জোর দিন
ডেঙ্গু বিস্তারের ইতিহাস ২০০০ সাল থেকে গত দুই যুগের। সারা দেশে রোগটি ছড়িয়ে পড়ার জন্য মশকনিধনে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন ও দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। ক্রমেই অবনতি হচ্ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতির। গড়ে ৭ থেকে ৮ জনের মৃত্যু হচ্ছে প্রতিদিন। শনাক্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তিও গড়ে হাজারের বেশি। মৃতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কর্মক্ষম মানুষ। চলতি বছর মৃত ২৩৭ জনের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই কর্মক্ষম মানুষ, যাদের আয়ের ওপর নির্ভরশীল ছিল পরিবার। ডেঙ্গু তাদের পরিবার তছনছ করে দিয়েছে। পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন রোগ-শোকে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে মশাবাহিত রোগে। একসময় মশাবাহিত রোগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাদুর্ভাব ছিল ম্যালেরিয়া জ্বরের। এছাড়া ফাইলেরিয়াও ছিল প্রাণঘাতী সংক্রামক রোগ। তবে গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে দেশে মশাবাহিত রোগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুজ্বর। প্রতিবছর দেশে কয়েকশ’ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন এডিস বাহিত ডেঙ্গু রোগে। কাজেই মশা নিধনে জোর দেয়া আবশ্যক। ডেঙ্গু সাধারণত বর্ষাকালের রোগ। কিন্তু গত কয়েকবছর ধরে এটির প্রাদুর্ভাব শীতকালেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মূলত মশা নিধনে ব্যর্থতার কারণেই এমনটি ঘটছে বলে অনুমান। ঢাকা শহরের দুটি সিটি করপোরেশনই মশা নিধনে ব্যর্থ। সিটি করপোরেশন মশা নিধন বলতে কেবল ওষুধ ছিটানোকেই বোঝে। কিন্তু ফগার মেশিন দিয়ে ছিটানো ওষুধ মশা নিধনে কতটা কার্যকর তা নির্ণয় করা হয় না। ওষুধ মশা নিধনে কাজ করছে কিনা তা নিরূপণে ল্যাব টেস্ট করার প্রয়োজন পড়ে। এক্ষেত্রে ইনকিউবেটরে মশা চাষ করে তার ওপর ওষুধ প্রয়োগ করে কার্যকারিতা নির্ধারণ করতে হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে মশা নিধনের ওষুধের কার্যকারিতা নির্ণয়ের এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে না। ফলে ফগার দিয়ে ছিটানো ওষুধ মশা নিধনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। মশক নিধনের কাজ স্থানীয় সরকার বিভাগের। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মশা মারায় জোর দিতে হবে। গত ২৪ বছরে এই কাজে চরম উদাসীনতা পরিলক্ষিত হয়েছে। এখন মশকনিধনে জোর দিতে হবে। বছরজুড়েই এই কাজ চালিয়ে যেতে হবে। সেইসঙ্গে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। রাজধানীতে বিশেষায়িত হাসপাতালে ভিড় করছেন ডেঙ্গু রোগীরা। এতে বিকেন্দ্রীকরণ করে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় ও কমিউনিটি সেন্টারে ডেঙ্গু রোগী শনাক্তকরণ পরীক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থায় জোর দিতে হবে। জটিল রোগী সামলাতে কয়েকটি বিশেষায়িত হাসপাতাল ডেডিকেটেড করতে হবে।