গরম থেকে বাঁচতে সচেতন হন

চৈত্রের নির্মম খরায় এবার ঝড়বৃষ্টির দাপট না থাকলেও গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। গত দু’ বছরের মতো এ বছরও মার্চ থেকে রাজধানী সহ দেশের বেশির ভাগ এলাকায় গরম অসহযোগীয় হয়ে উঠেছে। দিনের তীব্র খরতাপের পর বিকেলে দমকা হাওয়া বা কালবৈশাখী হলেও তা গরমের কষ্ট খুব বেশি কমাতে পারছে না। গবেষকরা বলছেন, গত ছ’ দশকে শুধু ঢাকায় তীব্র এবং অসহনীয় গরমের দিনের সংখ্যা তিনগুণ বেড়েছে। ঢাকার বাইরের বড় শহরগুলোতেও আরমদায়ক দিন কমে, তীব্র কষ্টকর গরমের দিন সাত গুন পর্যন্ত বেড়েছে। গবেষকদের মতে, যদি কোনো একটি এলাকায় তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস পৌছায় এবং বাতাসে আর্দ্রতা বা জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ৭০ থেকে ৯০ শতাংশের মধ্যে থাকে, এমন অবস্থাকে আবহাওয়া-বিদরা তীব্র কষ্টকর দিন হিসেবে চিহ্নিত করেন। অন্যদিকে তাপমাত্রা যখন ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে এবং আর্দ্রতা ৫০ শতাংশের কম থাকে এমন অবস্থাকে আরামদায়ক দিন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বিশ্বের চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক এক গবেষণায় বলছেন, বাংলাদেশ ৬০ বছরের (১৯৬১-২০২০) আবহাওয়া এবং তাপমাত্রা ধরন ব্যাখ্যা করে বলছেন, গ্রীষ্মকাল আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে রাজধানীসহ দেশের মধ্যাঞ্চল এবং দেশের উপকূলীয় এলাকা হিসেবে চিহ্নিত দক্ষিণাঞ্চলে বড় জলোচ্ছ্বাসের পর উষ্ণতার বিপদ দ্রুত বাড়ছে। গত ২৯ মার্চ আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী আরবান ক্লাইমেট এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। গবেষনাটির শিরোনাম চেঞ্জেসইন হিউম্যান ডিসকমফোট এ- ইটসড্রাইভার ইন বাংলাদেশ। গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৯৬১ সালে ঢাকায় সারা বছরে আরামদায়ক দিনের সংখ্যা ছিল ৮০। আর তীব্র গরমের কষ্টকর দিন সংখ্যা ছিল ৭। ২০২০ সালে আরামদায়ক দিনের সংখ্যা কমে ৬৬ এবং কষ্টের দিন বেড়ে ২১। একই সময়ে সিলেট আরামদায়ক দিন ৮০ থেকে কমে ৬৭ এবং কষ্টকর দিন ১৪ থেকে বেড়ে ২০ হয়েছে। চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতেও গরমের কষ্টের দিনের সংখ্যা তিন ও দুইগুণ বেড়েছে। এদিকে সূর্য সরাসরি বিষুবরেখার উপর অবস্থান করার ফলে আগামী কয়েকদিন এশিয়ার বেশির ভাগ জায়গায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে। এ তাপমাত্রা ৩৫-৪০ ডিগ্রী পর্যন্ত ওঠানামা করবে। এর ফলে ডি-হাইড্রোশন বা পানি শূণ্যতা ও সান ষ্টোক হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এ কারণে নিজে সহ পরিবারের সবাইকে পরিমাণ মতো পানি পান করা প্রয়োজন। প্রত্যেকে দৈনিক কমপক্ষে ৪ লিটার করে পানি পান করুন। ব্লাডপ্রেসার চেক করুন। ফল ও শাক সবজি বেশি করে খাওয়া দরকার। লেবু পানি, তরমুজ, শসা, খাওয়া যেতে পারে। এবং খাবার মেনু থেকে মাংস বাদ রাখা ভালো। নিজে ঠোঁট ও চোখের মনি স্বাভাবিক আছে কি না চেক করুন। পারতপক্ষে ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো। একরঙের পোশাক পরিহার করা উচিত। নিজে সচেতন হয়ে প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে ভালো থাকুন।