সম্পাদকীয়

বাড়ছে ডেঙ্গু আতঙ্ক, সচেতনতা জরুরি

ডেঙ্গুজ¦র একটি ভাইরাসজনিত জ¦র, যা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। বিশ্বব্যাপী দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব। বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই এখন ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে। সাধারণত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর- এ সময়ে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব থাকে সবচেয়ে বেশি। দক্ষিণ এশিয়ার ভারত, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়াসহ প্রায় সব দেশেই ডেঙ্গুর বিস্তার দেখা যায়। গত বছর বাংলাদেশে প্রায় ৩ লাখ মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন এবং মৃত্যুহারও ছিল অনেক বেশি। এ বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরো নাজুক। দেশের পূর্বাঞ্চলে বড় বন্যা দেখা দিয়েছে। সেখানে টানা ভারী বৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ অনেক জায়গায় হয়েছে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি। ফলে দেখা দিয়েছে ডেঙ্গুর আতঙ্ক। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। মৃত্যুও হচ্ছে। ষাটের দশকে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ডেঙ্গু শনাক্ত হয়, তবে ডেঙ্গুর প্রকোপ লক্ষণীয়ভাবে দেখা যায় ২০০০ সাল থেকে। এরপর থেকে প্রতিবছরই বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে এবং ক্রমান্বয়ে তা আমাদের জন্য চরম উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে ডেঙ্গুজ¦রের প্রকৃতি, হয়েছে অধিক শক্তিশালী। পূর্বে শুধু বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর বিস্তার দেখা গেলেও এখন প্রায় সারা বছরই মানুষ ডেঙ্গুজ¦রে আক্রান্ত হচ্ছে। এডিস মশার বিস্তারের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে পরিবর্তন। আমরা জানতাম এডিস মশা পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে। কিন্তু এখন নোনা ও নোংরা পানিতেও পাওয়া যাচ্ছে এডিস মশার লার্ভা। এডিস মশা শুধু দিনে কামড়ায় বলে ধারণা করা হতো অথচ এখন দিনে-রাতে দুই সময়েই কামড়াচ্ছে এডিস মশা। বদলেছে রোগের লক্ষণ, তীব্র জ¦র, মাথাব্যথা, পেটে ব্যথা, গায়ে র‌্যাশ, কিংবা বমির লক্ষণ নেই এখন ডেঙ্গুতে। বরং অল্প জ¦রেই আক্রান্ত হচ্ছে হৃদপি-, কিডনিসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো। রক্তে অণুচক্রিকার (প্লাটিলেট) সংখ্যা কমে যাওয়ার পাশাপাশি রোগীর দ্রুত শক সিনড্রোমে যাওয়ার আশঙ্কাও বেড়েছে। শনাক্তকরণে বিলম্বের ফলে বাড়ছে মৃত্যুহার। এখন ডেঙ্গু নিয়ে সতর্ক ও সচেতন হওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। বাড়ি, অফিস-আদালত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আশপাশে ঝোপঝাড় নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে ও মশা নিধনকারী ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োজনে ব্লিচিং পাউডার ছিটাতে হবে। পূর্ণাঙ্গ এডিস মশার সম্ভাব্য লুকানোর স্থান যেমন- পর্দার আড়ালে, আসবাবপত্রের পেছনে মশা মারার ওষুধ স্প্রে করা যেতে পারে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার, স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় প্রশাসন, পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ও সিটি করপোরেশন সবাইকে তৎপর হতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button