পুনঃতদন্তের মাধ্যমে সাগর-রুনি হত্যাকা-ের বিচার করা হোক

একযুগ আগে নির্মম হত্যাকা-ের শিকার হয়েছিলেন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি। এই সাংবাদিক দম্পতিকে কেন হত্যা করা হয়েছে এবং হত্যাকা-ের সঙ্গে কে বা কারা জড়িত সেই রহস্য এখনো উদ্ঘাটন করা যায়নি। সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় পেছানো হচ্ছে দফায় দফায়। আদালতে মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ এ পর্যন্ত ১১১ বার পিছিয়েছে। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি নৃশংসভাবে খুন হন। সাগর মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক ও মেহেরুন রুনি এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ছিলেন। সাগর-রুনি খুন হওয়ার দিন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন (প্রয়াত) ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তার করার আশ^াস দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। প্রথমে সাগর-রুনি হত্যার ঘটনায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করা হলে তদন্ত শুরু করেন ঐ থানার পুলিশ। চার দিন পর মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার ৬২ দিনের মাথায় হাইকোর্টে ব্যর্থতা স্বীকার করে ডিবি। এরপর আদালত র্যাবকে মামলা তদন্তের নির্দেশ দেন। সাগর-রুনি মামলাটির তদন্ত করছে র্যাব। দায়িত্ব নিয়েই সাগর ও রুনির মরদেহ কবর থেকে তুলে এনে পুনরায় ময়না তদন্ত ও ভিসেরা পরীক্ষা করে র্যাব। বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও তদন্ত আর এগোয়নি। র্যাব এক যুগ ধরে এই মামলার শুধু তদন্তই করছে। সেখানে এখনো তদন্ত প্রতিবেদনই জমা পড়েনি। অবস্থা এখন এমন দাড়িয়েছে যে, এই হত্যার বিচার নিয়ে আশাই ছেড়ে দিয়েছেন খোদ সাগর-রুনির পরিবার। এটা হতাশাজনক। র্যাব যদি এই তদন্ত শেষ না করতে পারে, প্রতিবেদন দাখিল করতে না পারে, সেটাও তারা আদালতকে জানাতে পারেন। কারণ হত্যাকা-ের বিচার শুরু করার জন্য তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা জরুরি। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় বারবার বাড়ানোর ফলে বিচার বিলম্বিত হচ্ছে। এটা কাম্য নয়। সময়ক্ষেপণের ফলে ভুক্তভোগীদের পরিবার যেমন ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়, তেমনি সময়ের ফাঁক গলে বেরিয়ে যায় অপরাধীরা। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি, মামলার দীর্ঘসূত্রিতা কমিয়ে দ্রুত সময়ে অভিযোগ গঠন, বিচারিক কার্যক্রম ও মামলার রায় প্রদানের উপায় বের করে পুনঃতদন্তের মাধ্যমে সাগর-রুনি হত্যাকা-ের দ্রুত বিচার করা হোক। আর দেশে শুধু আইনের শাসন নয়, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সুশাসন প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নিতে হবে।