দুর্ঘটনা রোধে উদ্যোগ নিন
পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোয় আধুনিক পদ্ধতিতে জাহাজ ভাঙা হয়। বাংলাদেশ, ভারতসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোয় এখনো প্রাচীন পদ্ধতিতে জাহাজ ভাঙা হয়। বর্তমানে বিশ্বে জাহাজ ভাঙার ১০টি পদ্ধতি চালু আছে বলে জানা যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতিটি হচ্ছে, সমুদ্রসৈকতে জাহাজ এনে স্থানীয় শ্রমিকদের দিয়ে ভাঙা। এ পদ্ধতিতে খরচ অল্প হয় আর কম মজুরিতে শ্রমিক পাওয়া যায়। বাংলাদেশে জাহাজভাঙা শিল্প বিকশিত হয়েছে সহজে শ্রমিক পাওয়া যায় বলে। শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা বা জীবনঝুঁকি এবং শারীরিক ক্ষতির দিকটিও বিবেচনায় নেওয়া হয় না। যে শ্রমিকেরা জাহাজ ভাঙেন, তাঁদের অধিকাংশই কোনো না কোনোভাবে তাৎক্ষণিক শারীরিক ক্ষতির শিকার হন। অনেকে হাত-পায়ের আঙুল হারান। শরীরের অন্যান্য অঙ্গে ক্ষতের শিকার হন। চোখ-কানের সমস্যা হয়। দীর্ঘ মেয়াদে জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। দেশের জাহাজ ভাঙা প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রমিকের জন্য অনিরাপদ রয়েই গেল। প্রতি বছর কোনো না কোনো ইয়ার্ডে দুর্ঘটনায় শ্রমিকরা আহত ও নিহত হন। গত এক দশকে চট্টগ্রামে জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ডগুলোয় ১৪২ শ্রমিকের মৃত্যু হয় এবং শতাধিক শ্রমিক আহত হন। এসব দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয়। আর ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকরা নামমাত্র ক্ষতিপূরণ পান। কিন্তু কোনো ইয়ার্ডে কার্যক্রম স্থায়ীভাবে বন্ধ হয় না। এমনকি মালিকরা শাস্তি পান না। এসব ঘটনায় তেমন মামলাও হয় না। নানা কারণেই জাহাজ নির্মাণ শিল্পের জন্য বাংলাদেশ অন্যতম স্থান হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তুলনামূলকভাবে কম খরচ। এতে বিপুলসংখ্যক দক্ষ-অদক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। চট্টগ্রামের সীতাকু-, কুমিরা, জোড়ামতল, মাদামবিবিরহাট, কদমরসুল, ভাটিয়ারী, ফৌজদারহাট, শীতলপুর, বারো আউলিয়া প্রভৃতি এলাকার সাগরপারে গড়ে উঠেছে শিপব্রেকিং ইয়ার্ডের সিংহভাগ। কিন্তু এসব জাহাজ ভাঙা শ্রমিকরা রয়েছেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। জাহাজ নির্মাণ শিল্পে পুরোনো জাহাজ ব্যবহার করা হয়। এসব জাহাজে তেজস্ক্রিয়তা ও ক্ষতিকর বর্জ্য থাকতে পারে। শ্রমিকদের নিরাপত্তায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার ছাড়পত্র পাওয়ার পর জাহাজ কাটা শুরু করার বিধান চালু করতে হবে। পরিত্যক্ত জাহাজ কাটার ক্ষেত্রে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ‘পরিবেশগত ছাড়পত্র’ বাধ্যতামূলক। এ নিয়ম ঠিকমতো পরিপালিত হলে নিয়মিত দুর্ঘটনায় শ্রমিক হতাহতের ঘটনা ঘটত না। এ শিল্পের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারি উদ্যোগ জরুরি। পুরোনো পদ্ধতিতে জাহাজ ভাঙা বন্ধ করতে আইন প্রণয়ন করা দরকার। পাশাপাশি শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আধুনিক যন্ত্রপাতি দিতে হবে, যাতে তাঁদের আর শুধু হাতের ওপর নির্ভর করে জাহাজ কাটা বা ভাঙতে না হয়।