আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে বিনিয়োগকারীদের
অশান্ত হয়ে পড়েছে পুঁজিবাজার। ভয়াবহ দরপতন হচ্ছে। অস্থির বাজারে প্রায় প্রতিদিনই মূল্যসূচক কমছে। এর চেয়েও বেশি কমছে শেয়ারের দাম। আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীদের অনেকেই যে কোনো মূল্যে শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে বের হয়ে যেতে মরিয়া। তাতে বাজারে বিক্রির চাপ বেড়ে গেছে। এতে নাজুক হচ্ছে পুঁজিবাজার পরিস্থিতি। বাজারে এখন শেয়ারসহ বিও হিসাবের সংখ্যাও কমে গেছে। সিডিবিএলের হিসাবে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর শেয়ার আছে, এমন বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৯০ হাজার ৩৫৫। গত মঙ্গলবার দিন শেষে এ সংখ্যা কমে হয়েছে ১২ লাখ ৮৫ হাজার ৯০৬। বাজার বিশ্লেষকরা বলেন, পুঁজিবাজারে উত্থান ও পতন থাকবে। কিন্তু আমাদের বাজারে নিয়মিত দরপতন চলছে। এটি স্বাভাবিক বাজারের বৈশিষ্ট্য নয়। এছাড়া টানা দরপতন পরিকল্পিত কোনো কারসাজি কিনা- তা খতিয়ে দেখা উচিত। কারণ বিগত সরকারের লোকজন পরিকল্পিতভাবে দরপতন ঘটিয়ে বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইছে কিনা; তাও দেখার বিষয় বলে মনে করছেন তারা। ছাত্র-জনতার আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে তিন কার্যদিবস পুঁজিবাজারে উল্লম্ফন দেখা দিলেও অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর পতনের পাল্লা ভারি হতে শুরু করে, যা এখনো চলমান। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ থাকা লাখ লাখ বিনিয়োগকারী এখন পথে পথে ঘুরছে। টানা দরপতনের কারণে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আস্থাহীনতায় ভুগছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। ফলে বাজারে ক্রেতার সংকট দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে ঋণগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশের শেয়ার জোরপূর্বক বিক্রি বা ফোর্সড সেলের আওতায় পড়ছে। বাজার যত নিচে নামছে, ফোর্সড সেলের চাপও তত বাড়ছে। বাজারে ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতা বেশি হওয়ায় দরপতনের পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণও কমছে। গত প্রায় দেড় দশক ধরেই নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান-কমিশনাররা বাজার কারসাজি চক্রের সঙ্গে মিলে বিনিয়োগকারীদের এমন সর্বনাশ ঘটিয়েছেন। দুর্বল ও নামসর্বস্ব কোম্পানি তালিকাভুক্তি ও এসব কোম্পানির শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অর্থ লুটে নেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় পুঁজিবাজার উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে ও আন্তর্জাতিক মানের সুশাসন নিশ্চিত করতে পুঁজিবাজার সংস্কারের সুপারিশের জন্য পাঁচ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করেছে। বিএসইসি গঠিত পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের কার্যপরিধি নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭টি। পুঁজিবাজারের গঠনমূলক ও টেকসই সংস্কার প্রয়োজন। এই অবস্থার পরিবর্তন তথা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বাস্তবমুখী নীতি ও পরিকল্পনা নিতে হবে। অনিয়ম ও কারসাজি বন্ধ করতে হবে।