ব্যাংকঋণের সুদহার কমাতে হবে
শিল্পায়ন ব্যাহত হতে পারে
ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদহারের কারণে বাংলাদেশে বিনিয়োগ ক্রমেই স্থবির হয়ে পড়ছে। শিল্প খাতের অনেক উদ্যোক্তাই মনে করেন, দেশে এখন বিনিয়োগের কোনো পরিবেশ নেই। ব্যবসায়ীরা কোনো রকমে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। ব্যাংকঋণের সুদের হার এখন ১৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এই হারে ঋণের সুদ বাড়তে থাকলে কারো পক্ষেই ঋণ নিয়ে শিল্প-কারখানা গড়ে তোলা কিংবা লাভজনকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। এতে একদিকে দেশের শিল্পায়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হবে, অন্যদিকে বাড়বে ঋণখেলাপির পরিমাণ। সরকার পরিবর্তনের পর সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। সেই সঙ্গে রয়েছে বৈশ্বিক সংঘাত-সংঘর্ষের প্রভাব। এমন অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে ক্রমাগতভাবে নীতি সুদ হার বা রেপো রেট বাড়িয়ে চলেছে। সর্বশেষ গত ২৭ অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়েছে নীতি সুদ হার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বা ০.৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত। এর ফলে রেপো সুদের হার বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর ফলস্বরূপ ব্যাংকঋণের সুদের হার ১৫ শতাংশ হয়ে গেছে। এই অবস্থায় ব্যাংকঋণের ওপর নির্ভরশীল ছোট, মাঝারি ও বড় ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এলসি খোলার হার কমেছে ৭ শতাংশ আর উৎপাদন কমেছে ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে চলমান অস্থিরতায় অত্যাবশ্যকীয় নিত্যপণ্য নয় এমন পণ্যের চাহিদাও কমে গেছে। এতে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের বিক্রিতে ধস নেমেছে। সুদহার অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসা সম্প্রসারণের চিন্তা কিংবা নতুন বিনিয়োগের পরিকল্পনা আপাতত বাদ দিয়েছেন অনেক উদ্যোক্তা। শুধু নীতি সুদ হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কৌশলের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। দীর্ঘ সময় ধরে চলা করোনা মহামারি দেশের শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যে রীতিমতো ধস নামিয়েছিল। তারপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন। এই অবস্থায় ব্যাংকঋণের সুদের হার বৃদ্ধি তাঁদের জন্য মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো অবস্থা সৃষ্টি করেছে বলে মনে করছেন অনেক ব্যবসায়ী। বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, যার মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের গলা টিপে হত্যা করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এত দিন ছয়টি কিস্তি দিতে না পারলে একজন গ্রাহক খেলাপিতে পরিণত হতো। গত সেপ্টেম্বর থেকে তিনটি কিস্তি পরিশোধ না করতে পারলে খেলাপি করার শর্ত দেওয়া হয়েছে। আবার আগামী মার্চ থেকে একটি কিস্তি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলেই খেলাপি করা হবে। আমরা মনে করি, দেশে শিল্প ও বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ বিদ্যমান থাকা জরুরি। কাজেই, বিনিয়োগ বাড়াতে হলে ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদহার কমাতেই হবে।