সম্পাদকীয়

গৃহকর্মী নির্যাতন বন্ধ করতে হবে

গ্রামে চাকরি ও আয়ের সুযোগ সীমিত থাকার ফলে গৃহকর্মীরা গ্রাম থেকে শহরে আসেন। দারিদ্র্যের কারণে অনেক পরিবারের সদস্যকে জীবনযাত্রার খরচ বহন করতে গৃহকর্মীর কাজে নিযুক্ত হতে হয়। এছাড়া এসব পরিবারের শিশুদের শিক্ষাসহ অন্যান্য মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকতে হয়। এমনকি দেখা যায়, তাদের অনেকই অল্প বয়সেই গৃহকর্মী হিসেবে নিযুক্ত হতে। অনেক ক্ষেত্রে এসব গৃহকর্মীদের ন্যায্য বেতনটুকু দেয়া দূরে থাক বিভিন্ন ধরনের শারীরিক অত্যাচার ও যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়। আমাদের দেশে ২০ লক্ষাধিক গৃহকর্মী রয়েছে। কিন্তু তাদের অধিকাংশের জীবন আজ অরক্ষিত ও বিপন্ন। এই ব্যাপারে আমাদের সচেতনতারও যথেষ্ট অভাব রয়েছে। ফলে বর্তমানে গৃহকর্মীদের শারীরিক-মানসিক নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা দিনকে দিন বেড়ে গেছে। সম্প্রতি এক উন্নয়ন অন্বেষণের ‘ডমেস্টিক ওয়ার্কার্স: ডিভ্যালুয়েশন অ্যান্ড ডিসক্রিমিনেশন’ শীর্ষক এক গবেষণায় দেখা যায়, ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ শিশু গৃহকর্মী দৈনিক নয় ঘণ্টার বেশি সময় কাজ করে। ১২ শতাংশ শিশু গৃহকর্মীর কাজের কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমাই নাই। অথচ একজন শিশু গৃহকর্মী মাসে গড়ে এক হাজার ১৮৫ টাকা মজুরি পায়। কেউ কেউ তাও পায় না। পায় না ঠিকমতো খাবার-দাবার ও পোশাক-আশাক। প্রাপ্তবয়স্ক গৃহকর্মীদের ক্ষেত্রেও একই দৈন্যদশা বিদ্যমান। গৃহকর্মী নির্যাতন ও তাদের অধিকারকে অবজ্ঞা করা আমাদের দীর্ঘদিনের একটি সামাজিক ব্যাধি। অথচ আধুনিক বিশ্বে তাদের সম্পর্কে দৃষ্টি ভঙ্গির অনেক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। উন্নত বিশ্বে তাদের বেতনভুক্ত কর্মচারীর মর্যাদা দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশ এর ব্যতিক্রম। সমাজের এই অসংগতি দূর করতে হলে এবং একটি গণতান্ত্রিক ও সভ্য দেশে বসবাস করার দাবি করলে গৃহকর্মীদের সর্ব প্রকার আইনি সুরক্ষা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন। এমন আইন প্রণয়ন করা দরকার যাতে আমাদের যে-সব গৃহকর্মী বিদেশে কর্মরত আছেন, পরোক্ষভাবে হলেও এই আইন যেন তাদের জন্য সুরক্ষা কবচ হিসেবে কাজ করে। এই আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়াকে এখন জোরদার করাই সবচাইতে জরুরি। গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালা অনুযায়ী ১৮ বৎসরের কম বয়সী এবং হালকা কাজের জন্য ১২ বৎসর বয়সী শিশুদের (শিক্ষাগ্রহণকে বিঘিœত না করে) চুক্তি সাপেক্ষে গৃহকর্মে নিয়োগ দেওয়া যায়। কিন্তু এই নীতিমালা কেবল কাগজে-কলমেই আছে, বাস্তবে তার যথাযথ প্রয়োগ নেই। গৃহকর্মীদের জান মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে শুধু নীতিমালা করলেই চলবে না, ২০১১ সালের হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করতে হবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) আলোকে সরকার ২০২৫ সনের মধ্যে সব ধরনের শিশু শ্রম নিরসনে অঙ্গীকারবদ্ধ। সরকারের এই প্রতিশ্রুতি ও ঘোষিত অঙ্গীকার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু গৃহকর্মীর অধিকার ও সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে একটি যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন ও তার সফল বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button