সম্পাদকীয়

শিশু বিকাশ কেন্দ্রের দায়িত্বরতরা বেতন পাচ্ছেন না: সেবায় বিঘœ ঘটছে

আমরা প্রত্যেকেই সৃষ্টিকর্তার নির্দেশই এই পৃথিবীতে এসেছি। ¯্রষ্টা প্রত্যেক মানুষকে একই আকৃতির তৈরি করেননি। বরং মানুষকে তৈরি করা হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন আকৃতির। কাউকে স্বয়ং সম্পূর্ণ আবার কাউকে অসম্পূর্ণ করেই দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছে। সৃষ্টিকর্তার প্রত্যেকটি সৃষ্টিই শ্রেষ্ঠ তাই আমাদের প্রয়োজন প্রত্যেক সৃষ্টিকে পরিচর্যা করা। তবে এক্ষেত্রে মানুষ কি সঠিক ভাবে সৃষ্টির পরিচর্যা করছে তা নিয়ে আছে সংশয়। আমাদের দেশে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এবং প্রতিবন্ধীর সংখ্যা কম নয়। তাঁদের সুচিকিৎসার লক্ষ্যে সরকার দেশের বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসার ইউনিট চালু করেছেন। এতে প্রতিবন্ধীদের পরিবারের মাঝে স্বস্তির খোঁজ মিলে। তবে তাঁরা সুচিকিৎসা পাচ্ছে কিনা তা নিয়ে আছে প্রশ্ন। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, প্রতিবন্ধী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসার লক্ষ্যে গড়ে তোলা শিশু বিকাশ কেন্দ্রের চিকিৎসক, মনোবিজ্ঞানী ও কর্মীরা ৩মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। বেতন কবে হবে, সেই নিশ্চয়তাও নেই। এসব দায়িত্বরতদের বেতন না পাওয়ার প্রভাব পড়তে পারে চিকিৎসায়। সব প্রতিবন্ধী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসা এবং ইন্দ্রিয় বিকাশের সুযোগ বাড়াতে ২০০৮ সালে শিশু বিকাশ কেন্দ্র গড়ে তোলা শুরু হয়। উদ্দেশ্য ছিল প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় এসব শিশুর সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। দেশে শিশু বিকাশ কেন্দ্র আছে ৩৫টি। ১০ টাকার টিকিটের বিনিময়ে এসব কেন্দ্রে স্বল্প সময়ে বিশেষায়িত সেবা দেওয়া হয়। ২০০৯ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত এসব কেন্দ্রে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৯৩৪ জন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু চিকিৎসা নেয়। ৩৫টি শিশু বিকাশ কেন্দ্রের মধ্যে একটি আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বহির্বিভাগে। ঢাকা ও আশপাশের জেলার শিশুরা এখানে চিকিৎসা নিতে আসে। যেকোনো হাসপাতালে এসব শিশুর সমস্যা শনাক্ত করা সম্ভব হয় না, সঠিক চিকিৎসাও হয় না। তাই অনেক জায়গা থেকেই এই মেডিকেল হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেশি থাকে। তবে এই চিকিৎসা সেবা আগামীতে চলবে কিনা তা নিয়ে আছে শঙ্কা। শিশু বিকাশ কেন্দ্রের অর্থায়ন হয় স্বাস্থ্যের উন্নয়ন বাজেট থেকে। স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাত কর্মসূচি গত জুন মাসে শেষ হয়েছে। এরপর থেকে জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর-এই তিন মাসে সারা দেশের কেন্দ্রগুলোর কেউ বেতন পাননি। এরই প্রেক্ষিতে চিকিৎসা সেবায় বিঘœ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এই চিকিৎসা ব্যবস্থায় বিঘœ ঘটলে অনেক শিশু চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হবে। পাশাপাশি সরকারকেও প্রশ্ন বিদ্ধ হতে হবে। তাই এই বিষয়ে সরকারকে দ্রুত নজর দিতে হবে। এক্ষেত্রে এখন প্রয়োজন বকেয়া বেতন পরিশোধ করে দায়িত্বরতদের আস্থা ফিরিয়ে আনা। আমরা বিশ^াস করি, তাঁদের বকেয়া পরিশোধ এবং নির্ধারিত সময়ে বেতন দেওয়ার মাধ্যমে হাসপাতালগুলোতে সুচিকিৎসা ফিরিয়ে আসবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button