সম্পাদকীয়

বায়ুদূষণ রোধে উদ্যোগী হন

দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এবং রাজধানী শহর হিসেবে ঢাকা প্রায় বিশ্বে বায়ুদূষণের শীর্ষে থাকে। এর ফলে এ দেশের মানুষ সবচেয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি করুণ পরিণতি বরণ করতে হচ্ছে। বায়ুদূষণের কারণে প্রধানত মানুষের ফুসফুস আক্রান্ত হয়। মধ্যযুগের বিখ্যাত চিকিৎসাবিজ্ঞানী ইবনে সিনা তার গবেষণালব্ধ ফলাফল থেকে বলেছিলেন, মানুষের ভেতরে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বা অন্য কোনোভাবে যদি ধূলিকণা না ঢুকত, তাহলে সে লাখ লাখ বছর বাঁচত। এ বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, সুস্থ জীবন নিয়ে মানুষের দীর্ঘায়ু লাভের ক্ষেত্রে ধূলিকণামুক্ত নির্মল ও বিশুদ্ধ বায়ু বা বাতাসের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। আবার উলটোদিক থেকে বিষয়টি দেখলে, দূষিত বাতাস বা দূষিত পরিবেশ আয়ু কমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, পৃথিবীতে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনা, ধূমপান ও ডায়াবেটিস-এ তিনটি কারণে যেসংখ্যক মানুষ মারা যায়, তার চেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় বায়ুদূষণের কারণে। পরিবেশ ও চিকিৎসাবিদ্যা মতে, বায়ুদূষণ থেকে ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) নামে শ্বাসতন্ত্রের যে রোগ হয়, তা বিশ্বজুড়ে মানুষের মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ। আর ২০১২ সালে শুধু এ রোগেই পৃথিবীতে যে পাঁচটি দেশে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে, বাংলাদেশ তার অন্যতম। কারণ, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ এ দেশের বড় শহরগুলোয় বায়ুদূষণের মাত্রা অত্যন্ত বেশি। সুবাতাস হিসেবে স্বীকৃত হওয়ার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণার (পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম ২.৫) যে সর্বাধিক সহনসীমা স্থির করেছে, ঢাকার বাসিন্দারা তা থেকে স্পষ্টতই বঞ্চিত। ওই মানদ- অনুযায়ী, রাজধানীবাসী তীব্র দূষণের শিকার। বাংলাদেশে বায়ুদূষণের জন্য প্রধানত দায়ী করা হয় প্রচলিত ইটভাটাগুলোকে। বায়ুদূষণের জন্য দায়ী কালো ধোঁয়ার ৩৮ শতাংশই নির্গমন হয় ইটভাটা থেকে। আর দ্বিতীয় স্থানে থাকা যানবাহন থেকে নির্গত হয় ১৯ শতাংশ। অথচ দূষণের এই প্রধান দুটি উৎস নিয়ন্ত্রণে আমরা প্রায় কিছুই করছি না। গ্রামাঞ্চলে এখনো ইটভাটার ছড়াছড়ি। রাস্তায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন। এ ছাড়া আছে নিয়ম না মানা নির্মাণকাজ, অনুন্নত কলকারখানা, গাড়ির টায়ারসহ নানা রকম প্লাস্টিক পোড়ানো, খোলা জায়গায় আবর্জনা পোড়ানোসহ আরো অনেক কর্মকা-। এসব দূষণ নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে আরো সক্রিয় হতে হবে। আর অভ্যন্তরীণ বায়ুদূষণের ব্যাপারে জনসচেতনতা বাড়াতে পর্যাপ্ত উদ্যোগ নিতে হবে। প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হয়ে পরিবেশ রক্ষার্থে এগিয়ে আসতে হবে। এক কথায়, বাস্তবমুখী, জোরালো ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক। আর তা সম্ভব হলেই ঢাকা শহরসহ সারা দেশের বায়ুদূষণ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button