সম্পাদকীয়

সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে

বাংলাদেশে অন্তর্র্বতী সরকারের মূল অ্যাজেন্ডা হচ্ছে, জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে দুর্নীতিমুক্ত, বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা এবং এ লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার নিশ্চিত করা। অন্যদিকে ভারতীয় এজেন্ট ও তাবেদাররা আওয়ামী ফ্যাসিবাদী ন্যারেটিভের আলোকে রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক বিভাজন সৃষ্টি করে ভারতের আধিপত্যবাদী স্বার্থ টিকিয়ে রেখে অর্থনৈতিক লুণ্ঠনের মৌরসি পাট্টা অব্যাহত রাখতে চাইছে। দেশে স্বাধীনতার এক উৎসব শুরু হয়েছে। যে যে দিক দিয়ে পারছে তার মন মতো স্বাধীনতা কায়েম করে ফেলছে। মন যা চায় করছে। এতে গণঅভ্যুত্থানে তৈরি হওয়া নতুন রাজনীতির সম্ভাবনা মার খেতে বসেছে। বান্দরবান থেকে সাভার-গাজীপুর, ডেমরার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ থেকে পুরান ঢাকার সোহরাওয়ার্দী-কবি নজরুল কলেজ বা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, নতুন ঢাকার তিতুমীর কলেজ অথবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ৭ কলেজ, অটোরিকশা থেকে কাভার্ড ভ্যান, পাহাড় থেকে সমতল, পাতাল আর হাসপাতাল গোটা দেশের পরতে পরতে বিরতিহীন স্বাধীনতার চর্চা, ভিন্নার্থে স্যাবোটাজ চলছে। এর মধ্যদিয়ে এ সরকারকে একদিনও শান্তিতে থাকতে না দেয়ার একটি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের নমুনা স্পষ্ট। গোটা আবহটা মোটেই সুখকর নয়। প্রশাসনে লাগামছাড়া ভাব। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিশে সংঘাত-সংঘর্ষ ছড়াচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের মাঝে অনৈক্য, সন্দেহ, অবিশ্বাস আর বিভ্রান্তি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ষোল বছর ধরে হাজার হাজার মানুষের গুম-খুন, লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার দুর্নীতি-পাচার, ছাত্র-জনতার উপর গুলির নির্দেশ দিয়ে হাজার হাজার মানুষকে হতাহত করার পরও পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার কোনো আক্ষেপ বা অনুশোচনা নেই! ভারতে পালিয়ে যাওয়ার দিন থেকেই বাংলাদেশ বিরোধী হুংকার ও ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছেন। অন্তর্র্বতী সরকারের পক্ষ থেকে হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দেয়ার বিষয়টিতে অসন্তোষ এবং তাকে সেখান থেকে রাজনৈতিক বক্তব্য-বিবৃতি দেয়া থেকে বিরত রাখতে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হলেও মানুষ হত্যার পরিকল্পনা ও নির্দেশনাসহ শেখ হাসিনা তার ঘৃণ্য অপপ্রচার চালিয়েই যাচ্ছে। একটি ফেইসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের হাজারি গলিতে ইসকনের তা-ব, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর আক্রমণ ও অ্যাসিড নিক্ষেপ, রাষ্ট্রবিরোধী উসকানিদাতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারী সেজে চট্টগ্রাম আদালত পাড়ায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকা-ের সাথে ছাত্রলীগ-যুবলীগ সন্ত্রাসীদের যোগসাজশ ও অংশগ্রহণের তথ্য ও চিত্র বেরিয়ে এসেছে। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার নিয়ে ভারত সরকারের বিবৃতি, বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর বাংলাদেশ সীমান্ত অবরোধের হুমকি এবং বাংলাদেশে নৈরাজ্য ও গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টির ধারাবাহিক উসকানি ও সহিংস ঘটনাবলীর সাথে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সংশ্লিষ্টতা একই সূত্রে গাথা। তারা যে সর্বপ্রকারে বাংলাদেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে ব্যর্থ করে দিতে চায়, তা স্পষ্ট। এহেন বাস্তবতায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার মতভেদ ও দূরত্ব ঘুচিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে অন্তর্র্বতী সরকারের পাশে দাঁড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button