সম্পাদকীয়

শিক্ষকদের আবাসন নীতিতে সংস্কার প্রয়োজন

দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের জন্য বাসা থাকা সত্ত্বেও অনেকেই সেই বাসায় থাকেন না, ক্যাম্পাস থেকে দূরে শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। এতে খালি পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে বিপুল ব্যয়ে নির্মিত ফ্ল্যাট ও বাসা। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের জন্য নির্মিত আবাসিক ভবনগুলোর অবস্থা ও ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগজনক বাস্তবতা দেখা দিয়েছে। বিপুল ব্যয়ে নির্মিত এসব ভবনের একটি বড় অংশ দীর্ঘদিন ধরে ফাঁকা পড়ে আছে। ক্যাম্পাসের বাসায় থাকার পরিবর্তে শিক্ষকেরা শহরে ভাড়া বাসায় থাকতে বেশি পছন্দ করছেন। এর ফলে শুধু প্রশাসনিক কার্যক্রমে নয়, শিক্ষার্থীদের জন্যও সঠিক সময়ে প্রশাসনের সহায়তা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। একই সঙ্গে খালি ভবনগুলো থেকে আর্থিক ক্ষতি এবং ভবনের অবচয়ও ঘটছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর যে ঘাটতি বাজেট থাকে, বাসাগুলোতে সবাই থাকলে ওই ভাড়া দিয়েই অনেকাংশে ঘাটতি বাজেট পূরণ করা সম্ভব। দেশের ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গড়ে প্রায় ২৯ শতাংশ বাসা খালি পড়ে আছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তা আছেন ৭ হাজার ৫০ জন। এর মধ্যে শিক্ষক ৪ হাজার ৩১১ জন এবং কর্মকর্তা ২ হাজার ৭৩৯ জন। বিপরীতে ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট বাসা রয়েছে ৯৮০টি, যার মধ্যে ২৮৫টিই খালি পড়ে আছে। এমন অবস্থায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আবাসনে বসবাস না করার কয়েকটি কারণের কথা বলছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। প্রথমত, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসনে থাকলে বেতনের বাড়িভাড়ার অংশ কেটে নেয় প্রশাসন। পদমর্যাদা ভেদে তা মূল বেতনের ৩০ থেকে ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত। এই টাকার চেয়ে অনেক কম ভাড়ায় শহরে থাকা যায়। দ্বিতীয়ত, অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস শহর থেকে দূরে। সন্তানদের পড়াশোনাসহ নানা কারণে শিক্ষকেরা শহরে থাকতে পছন্দ করেন। তৃতীয়ত, কিছু ক্ষেত্রে বাসা পুরোনো। সুযোগ–সুবিধাও নেই। তাই বাসাগুলো আরও কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। প্রথমত, বেতন থেকে বাড়িভাড়া কেটে নেওয়ার নীতিমালায় সংস্কার আনতে হবে। বর্তমান হারে কেটে নেওয়া অর্থ শিক্ষকদের জন্য আর্থিকভাবে চাপ সৃষ্টি করে। এই ভাড়া কমিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে আনা হলে শিক্ষকদের ক্যাম্পাসে বাসার প্রতি আগ্রহ বাড়বে। দ্বিতীয়ত, ভবনগুলোর মান উন্নত করতে হবে। জরুরি ভিত্তিতে ভবনগুলোর সংস্কার, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংযোজন এবং রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। তৃতীয়ত, নতুন ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করার আগে খালি বাসাগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে শিক্ষকদের শহরে থাকা বন্ধে কার্যকর নীতি প্রণয়ন করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button