সম্পাদকীয়

হিমাগারে তদারকি বাড়াতে হবে

কৃষকরা আলু উৎপাদন করলেও ন্যায্যমূল্য পান না তারা। তাদের কাছ থেকে তুলনামূলক কম দামে আলু কিনে মৌসুম শেষে আড়তদার, ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকরাই দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করে তোলেন। যার প্রভাব বর্তমান বাজারে ভোগ করছেন ভোক্তারা। প্রতি বছর আলুর দাম নিয়ে মূলত কারসাজি হয় হিমাগার গেটে। ব্যাপক মজুত থাকার পরও বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে আলুর দাম বৃদ্ধি করতে থাকেন হিমাগার মালিক, মজুতদার ও আড়তদাররা। মৌসুমের শুরুতে কৃষকের হাত থেকে বিক্রি হওয়া আলুর দাম এভাবেই বাড়তে থাকে। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চে কৃষকের ঘরে আলু আসে। ওই সময় স্থানীয় ফড়িয়া, আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের কাছে আলু বিক্রি করেন কৃষকরা। পরে তারা হিমাগারে আলু মজুত করেন। এরপর ২-৩ মাস আলু বিক্রি বন্ধ থাকে। বাজারে জুলাই মাসে আলুর দাম বাড়তে শুরু করে। আর সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আলুর দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে। হিমাগার থেকে বেশি দামে আলু বিক্রির প্রভাব সরাসরি পড়ছে খুচরা বাজারে। নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারে বেশি দামে আলু বিক্রি করা হলেও সরকার তা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। চাষিদের কাছ থেকে ২৩ টাকা কেজি দরে আলু কিনে তা হিমাগারে মজুত করেন ব্যবসায়ীরা। বস্তা কেনা, পরিবহণ ও শ্রমিক খরচ ও হিমাগার ভাড়ায় প্রতি কেজিতে আরও খরচ হয়েছে ৮ টাকা ১০ পয়সা। সব মিলিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রতি কেজিতে খরচ পড়েছে ৩১ দশমিক ১০ পয়সা। অথচ সেই আলু এখন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ৭০–৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর হিমাগারে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়। আলুর দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ায় সাধারণ ক্রেতারা বিপাকে পড়েছেন। আলুর দাম অযৌক্তিকভাবে বেড়ে যাওয়ার পেছনে অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট, বিশেষ করে হিমাগারের আলু মজুতদারেরা দায়ী বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলায় বাজার নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত বিশেষ টাস্কফোর্স কমিটি, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন নিয়মিত অভিযান না চালানোয় এবং তাঁরা কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়ায় আলুর মজুতদারেরা অবাধে দাম বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছেন। এ ছাড়া হিমাগারে আলুর মজুত কমে যাওয়ার কারণে দামে প্রভাব পড়েছে। দামের এই আকাশ–পাতাল ফারাকের পেছনে হিমাগার মালিকদের যেমন কারসাজি আছে, তেমনি আলুচাষিদের সরকারের কাছে থেকে যে সহায়তা পাওয়া দরকার, সেটাও তাঁরা পাচ্ছেন না। সরকার নিজে যদি আলুচাষিদের কাছ থেকে সরাসরি আলু কিনে রাখত, তাহলে ভোক্তারা কম দামেই এখন আলু পেতেন। সরকার কৃষির উন্নয়নে অনেক কর্মসূচি নিয়েছে, কিন্তু গরিব আলুচাষিদের সহায়তায় কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এ অবস্থায় বাজারে নয়, হিমাগারে অভিযান চালিয়ে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিলে বাজার স্বাভাবিক হতে বাধ্য।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button