হারিয়ে যাওয়া দেশী প্রজাতির ধান সংরক্ষণে জোর দিন

এখন আর হাওরে দেশি জাতের বোরো ধানের আবাদ হয় না। বোরো ফসলি হাওরে এখন আর দেশী জাতের বোরো ধান চাষাবাদ হয় না। এখন চাষাবাদ হয় উচ্চ ফলনশীল ধান। বর্তমানে হাইব্রিড আর বহুজাতিক কোম্পানির বাণিজ্যের দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে দেশি জাতের বোর ধান। বেশি ফলনের আশায় কৃষকরা ঝুঁকছেন হাইব্রিড ধান চাষাবাদের দিকে। গত দুই যুগ আগেও সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ সহ সব কটি হাওর জেলায় চাষাবাদ হতো দেশীয় বিভিন্ন জাতের বোরো ধান। জলবায়ু সহিষ্ণু ছিলো দেশী জাতের সব কটি ধান। ফলন একটু কম হলেও অতিবৃষ্টি কিংবা খরাতে তেমন কোন ক্ষতি হত না। সেচ দিতে হত না, কীটনাশক, সার দিতে হতো না। বর্তমানে হাইব্রিড আর বহুজাতিক কোম্পানির বাণিজ্যের দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে দেশী জাতের বোরো ধান। বেশি ফলনের আশায় কৃষকরা ঝুঁকছেন হাইব্রিড ধান চাষাবাদে। খাদ্যনিরাপত্তা অর্জনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ধরে রাখতে সরকারও জোড় দিচ্ছেন হাইব্রিড ধান চাষাবাদ। হাওর অঞ্চলে দেশীয় প্রজাতির ধান যা ইতিমধ্যে হারিয়ে গেছে তার মধ্যে রয়েছে- রাতা, গুচি শাইল, নাজিশাইল, লাকাই, পানি শাইল, টেপি, রঙ্গিলা টেপি, রাজাশাইল, বেগুন বিচি, ধলাকাচাই, মৌমাইল, কালো জিরা, বাঁশফুল ও গড়িয়া ইত্যাদি। একটা সময় অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য বিভিন্ন রকমের সুস্বাদু জাতের ধানের চাল দিয়ে রান্না করা হতো। খেতেও সুস্বাদু ছিলো সে ধান। ধান কাটার মৌসুমে গ্রামে পিঠা পায়েস, চিড়া, খই, মুড়ি তৈরির ধুমও ছিল। এখন তা আর হয় না। দেশী ধান চাষাবাদ করতে কোনো বীজ বাজার থেকে কিনতে হতো না। বীজের জন্য কিছু ধান আলাদা করে ঘরে তুলে রাখলেই চলত। বর্তমানে আমরা যে ধান চাষাবাদ করছি তা বীজ রাখতে পারছি না। বছরে বছরে বাজার থেকে চড়া দামে বীজ কিনতে হচ্ছে। সেই সাথে ধান রোপণের পর জমিতে কীটনাশক, সার, সেচ প্রচুর পরিমাণ দিতে হচ্ছে। না হলে ফলন ভালো হচ্ছে না। দেশি বোরো ধান রোপণের পর তেমন কোনো যতœ করতে হতো না। এমনকি সার ও কীটনাশকও দেওয়া হতো না। জলবায়ু সহিষ্ণু ছিলো দেশি জাতের সব কয়টি ধান। ফলন একটু কম হলেও অতিবৃষ্টি কিংবা খরাতে তেমন কোনো ক্ষতি হতো না। জমিতে সেচেরও প্রয়োজন হতো না। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হারিয়ে যাওয়া দেশী প্রজাতির ধান সংরক্ষণে সরকারকে জোর দিতে হবে। তাহলে আমরা ফিরে পাব দেশী ধানের স্বাদ।