সম্পাদকীয়

প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করা জরুরি

সত্তরের দশকে আমাদের দেশে যেসব পণ্য কাঁচের বোতলে বিক্রি হতো, সেসবের অধিকাংশই এখন প্লাস্টিকের বোতলে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচের বোতল ভঙ্গুর ও তুলনামূলকভাবে প্লাস্টিকের চেয়ে দামি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এদিকে ঝুঁকছেন। একটা সময় ছিল যখন শহর তো বটেই, গ্রাম-বাংলার ঘরে ঘরে চীনামাটি বা টিনের থালার কদর ছিল। ছিল কাঁসা, পিতল, অ্যালুমিনিয়ামের ঘটি-বাটি। ছিল ধাতব গামলা, বালতি, লোটা, মগ, বদনার ব্যবহার। কিন্তু গত তিন-চার দশকের মধ্যে এসবের জায়গা দখল করেছে প্লাস্টিকের সামগ্রী। প্লাস্টিক পরিবেশের পাশাপাশি মানবদেহেও এমনভাবে মিশে যাচ্ছে যে, তা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্লাস্টিকের কিছু রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে, যা প্লাস্টিক থেকে বেরিয়ে গিয়ে আমাদের খাবার ও পানীয়তে প্রবেশ করতে পারে। এসব রাসায়নিক দ্রব্য যেমন ফ্যালেটস ও বিসফেনলের সঙ্গে নানা রকম স্বাস্থ্য সমস্যার সম্পর্ক আছে। যেমন শারীরিক স্থূলতা, নিউরোডেভেলপমেন্টাল সমস্যা অথবা গর্ভধারণের ক্ষমতা হ্রাস। প্লাস্টিক পরিবেশদূষণের অন্যতম কারণ। এ ছাড়া প্লাস্টিক থেকে নির্গত রাসায়নিক ও মাইক্রোপ্লাস্টিক খাদ্যশৃঙ্খল এবং পরিবেশে প্রবেশ করে আরও ক্ষতি করতে পারে। বাজারে বিক্রি হওয়া প্লাস্টিকের বোতলের পানি বিশুদ্ধ-এ বিশ্বাসে তা পান করেননি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, দেশে প্রায় ৮৩ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ (১৫ কোটি ৪ লাখ ৮০ হাজার) প্রতিনিয়ত একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বোতলে পানি পান করে। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, প্লাস্টিক বোতলে থাকা পানি স্বাস্থ্যের জন্য বুমেরাং হয়ে উঠতে পারে। এ বোতল থেকে নির্গত বিসফেনল এ (বিপিএ) নামক রাসায়নিক পদার্থ শরীরের হরমোন সিস্টেমে বিঘœ সৃষ্টি এবং দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে শুরু করে ক্যানসারের আশঙ্কাও তৈরি করতে পারে। প্লাস্টিকের পাত্র তাপের সংস্পর্শে এলে সমস্যাটি আরও প্রকট হয়ে ওঠে; অর্থাৎ প্লাস্টিকের পাত্রে খাবার মাইক্রোওয়েভ ওভেনে গরম করলে ক্ষতিকর রাসায়নিকের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। একসময়ের উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার প্লাস্টিক এখন পরিবেশ দূষণ নামের দুঃস্বপ্নের শামিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর অপব্যবহার এবং অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ফলে বিশ্বব্যাপী বাস্তুতন্ত্রের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। প্লাস্টিকজাত দ্রব্যের বিস্তৃত ব্যবহারের মধ্যে থাকা একবার ব্যবহারযোগ্য পণ্য থেকে শুরু করে দীর্ঘস্থায়ী উপকরণ, সবই পরিবেশ ক্ষয়ের অন্যতম অবদান রাখে। এসইউপি বা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার এখন সর্বব্যাপী, বিশেষ করে একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বা পলিথিন ব্যাগ, স্ট্র এবং বোতলের মতো দ্রব্যাদি। সরকারকে প্লাস্টিকের উৎপাদন অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্লাস্টিকপণ্য যেখানে-সেখানে না ফেলার বিষয়েও কঠোর হতে হবে। প্লাস্টিক বা পলিথিনের উপযুক্ত বিকল্প উদ্ভাবন করতে হবে। সরকার প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা বাস্তবায়ন করতে হবে। একইসঙ্গে সবাইকে প্লাস্টিকসামগ্রীর ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button