সম্পাদকীয়

মানুষের দুর্দশার কথা ভাবতে হবে

৬৫ পণ্যে ভ্যাট বাড়ছে

জিনিসপত্রের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে। নি¤œবিত্ত ও নি¤œমধ্যবিত্ত মানুষ কোনোভাবেই আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য করতে পারছে না। পরিবারের অতি প্রয়োজনীয় পুষ্টি চাহিদার সঙ্গেও আপস করতে হচ্ছে। এই অবস্থায় আবার আসছে বর্ধিত ভ্যাটের খড়্গ। জানা যায়, আইএমএফের চাপে ওষুধ, গুঁড়া দুধ, ফলমূল, সাবান, মিষ্টিসহ ৬৫ পণ্যে ভ্যাট বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। শুধু তা-ই নয়, মোবাইলে কথা বলা, ইন্টারনেট ব্যবহার, হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাবারের খরচেও বাড়তি ভ্যাট বসানো হচ্ছে। নতুন ভ্যাট আরোপের বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন করা হয়েছে। অচিরেই তা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হবে বলে জানা গেছে। সাধারণত বাজেট প্রণয়নের সময়ই অর্থ মন্ত্রণালয় এনবিআরকে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেয়। অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে ভ্যাটহার বাড়ানোর নজির খুব বেশি নেই। জানা যায়, এনবিআরও চায়নি এ সময় এভাবে ভ্যাট বাড়াতে। কিন্তু ঋণ প্রদানের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশকে কর-জিডিপি অনুপাত ০.২ শতাংশ বাড়ানোর শর্ত দিয়েছে, টাকার অঙ্কে যা ১২ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এই অর্থ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার (চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা) সঙ্গে যোগ হবে। তাই বাধ্য হয়েই এনবিআরকে ভ্যাট বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হয়েছে। তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) বাড়লেও জিনিসপত্রের দামের ওপর তেমন প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, অত্যাবশ্যকীয় সব পণ্যের শুল্ক কমিয়ে জিরো (শূন্য) করে দেওয়া হয়েছে। আপনারা সেই ছাড়টা দেখবেন। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সবদিক চিন্তাভাবনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষের কষ্ট হবে কি না, তা জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, মনে হয় না কষ্ট হবে। আমরাও সেটা আশা করি কিন্তু বাস্তবতার সঙ্গে তা মিললেই হলো। ভ্যাট বৃদ্ধির তালিকায় উল্লেখযোগ্য পণ্যগুলো হলো- জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, এলপি গ্যাস, গুঁড়া দুধ, বিস্কুট, আচার, টমেটো কেচাপ/সস, সিগারেট, জুস, টিস্যু পেপার, ফলমূল, সাবান, ডিটারজেন্ট পাউডার, মিষ্টি, চপ্পল (স্যান্ডেল), বিমান টিকিট ইত্যাদি। অর্থনীতি বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এই বাড়তি ভ্যাট আরোপ মূল্যস্ফীতির আগুনে ঘি ঢালার মতোই হবে। এসব পণ্য ও সেবার দাম বাড়ার পাশাপাশি সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে যেতে পারে এবং মানুষের কষ্ট ও দুর্ভোগ আরো বাড়তে পারে। পবিত্র রমজান মাস আসতে আর মাত্র দুই মাস বাকি। সাধারণত প্রতিবছরই এ সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ক্রমান্বয়ে বাড়ছে রমজানে অধিক ব্যবহৃত খাদ্যপণ্যের দাম। অন্যদিকে ব্যবসায়ী ও মধ্যস্বত্বভোগীরা রোজার আগে আগে নানা রকম কারসাজি শুরু করে। এমন সময় ভ্যাট বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্তটি অসাধু ব্যবসায়ীদের অন্যায়ভাবে দাম বাড়ানোর আরো সুযোগ করে দেবে। সাধারণত রোজার সময় ইফতারিতে মানুষ কিছু ফলমূল ও মিষ্টিজাতীয় খাদ্যবস্তু রাখার চেষ্টা করে। এগুলোর দাম বেড়ে গেলে রোজাদারদের কষ্ট আরো বেড়ে যাবে। আমরা আশা করি, অন্তর্বর্তী সরকার ভ্যাট বৃদ্ধির বিষয়টি আবারও বিবেচনা করবে। সরকারকে মানুষের দুর্ভোগ ও দুর্দশার কথা ভাবতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button