সম্পাদকীয়

প্রাণীদের উপর নিষ্ঠুর আচরন বন্ধ করতে হবে

আমরা জানি, মানুষ ছাড়াও এই পৃথিবীতে অসংখ্য প্রাণের অস্তিত্ব বিদ্যমান। এইসব প্রাণীর চেতনা থাকলেও বোধশক্তি বা ভালো-মন্দ বোঝার ক্ষমতা বেশির ভাগেরই নেই। এদের আমরা মানবেতর প্রাণী বলে থাকি। মানুষ তাদের নিজেদের প্রয়োজনে এ সমস্ত প্রাণীদের ব্যবহার করে বা তাদের সাথে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক আচরণ করে থাকে যা আসলেই কাম্য নয়। কারণ প্রাণীদেরও অধিকার আছে, মূল্য আছে যেভাবে অন্য সত্তার অধিকার এবং মূল্য রয়েছে। এই অধিকার হলো এক প্রকার দাবি, যে দাবিতে তারা ক্ষতিগ্রস্থহীনভাবে বাঁচার প্রত্যাশা করতে পারে। গণমাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, পর্যটন নগরী রাঙ্গামাটির একমাত্র চিড়িয়াখানার বেহাল দশা। অযত্ম আর অবহেলায় ছাপ সব জায়গায়। এরই মধ্যে মারা গেছে বেশ কয়েকটি প্রাণী। ২০০৬ সালে রাঙ্গামাটি শহরের রাঙ্গাপানি পুলিশ লাইনের পাশে ৩০ একর জায়গার উপর গড়ে তোলা হয় এই চিড়িয়াখানা। প্রতিষ্ঠার পর এখানে রাখা হয় ভাল্লুক, হরিণ, ময়ূর, বানর, অজগরসহ বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি। প্রতিষ্ঠার কয়েক বছর পর থেকেই কর্মচারীর অভাবে অযত্ম অবহেলার শিকার হতে থাকে পশু পাখিগুলো। অর্ধহারে-অনাহারে মারা যায় অনেক প্রাণী। এছাড়া, চিড়িয়াখানার বেশিরভাগ কক্ষের মেঝেই স্যাঁতসেঁতে, ভাঙাচোরা। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ গোটা এলাকায়। আর প্রাণীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় কমছে দর্শনার্থীও। প্রতিটি প্রাণিরই বেহাল দশা। স্বাভাবিক প্রাণচাঞ্চল্য নেই কারও। যা খাবার পায়, তাতে বন্দী প্রাণীগুলোর কোনোমতে টিকে থাকাই দায়। প্রাণীদের দেওয়া খাবার এতটাই অল্প যে খাঁচায় উঁকি দিয়ে কোথাও উচ্ছিষ্ট কিছু দেখা গেল না। এমনিতেই অবহেলিত ছিল রাঙামাটির মিনি চিড়িয়াখানাটি। কিন্তু জুলাই আন্দোলনের সময় থেকে তার অবস্থা আরও বেহাল। প্রাণীদের খাবারের বরাদ্দও বন্ধ হয়ে গেছে। মিলছে না পর্যাপ্ত পানিও। রাঙামাটি জেলা পরিষদের অধীন ২০০২ সালে শহরের সুখী নীলগঞ্জ এলাকায় এ মিনি চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। নাম দেওয়া হয়েছিল বোটানিক্যাল গার্ডেন ও মিনি চিড়িয়াখানা। তবে এই চিড়িয়াখানার জন্য বন্য প্রাণী বিভাগের কোনো অনুমতি ছিল না। তারপরও কিছু প্রাণী থাকায় চিড়িয়াখানাটি রাঙামাটিবাসীর বিনোদনের একটা উপলক্ষ হয়েছিল। কিন্তু এখন অব্যবস্থাপনার কারণে দিন দিন প্রাণীর সংখ্যা কমেছে এখানে। বর্তমানে এখানকার সম্বল একটি মাত্র ভালুক, একটি হরিণ, চারটি বানর, দুটি শজারু, পাঁচটি বন মোরগ ও ছয়টি কচ্ছপ। বিনোদনের নামে এভাবে কিছু প্রাণীকে কষ্ট দেওয়ার তো কোনো মানে হয় না। প্রাণীগুলোকে অন্য চিড়িয়াখানায় পাঠিয়ে দিয়ে সেটি বন্ধ করে দেওয়া হোক। তাতে অন্তত প্রাণীগুলো প্রাণে বাঁচবে। আর তা না হলে প্রাণীগুলোকে সুস্থ সবল রাখতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হোক এটাই কাম্য।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button