সম্পাদকীয়

এনআইডি সেবায় হয়রানি বন্ধ করতে হবে

কোন সেবার জন্য কোন ফরম কীভাবে পূরণ করতে হয়, কী তথ্য ও কাগজপত্র জমা দিতে হয় ইত্যাদি অনেকেই না জানার কারণে দালালদের খপ্পরে পড়েন সেবাগ্রহীতারা। জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনে অনিয়ম ও ভোগান্তির অভিযোগ নতুন নয়। নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য সংশোধন, স্মার্ট এনআইডি কার্ড প্রিন্টসহ জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবার নামে কোটি কোটি টাকা ঘুস লেনদেনের নানা চাঞ্চল্যকর তথ্যের কথা এক জাতীয় দৈনিক পত্রিকার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। চক্রের সদস্যদের মাঝে এ ঘুস লেনদেন হয়েছে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের (বিকাশ ও নগদ) মাধ্যমে। এ চক্রে আছেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও বহিরাগত দালাল। হাজার হাজার এনআইডির তথ্য সংশোধনের নেপথ্যে রয়েছে এ চক্রের সম্পৃক্ততা। জানা যায়, ওই নেটওয়ার্কের এক সদস্য, যিনি জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের ১৯ হাজার টাকা বেতনের একজন কর্মচারী, তার ব্যাংক ও বিকাশ অ্যাকাউন্টে বেতনের টাকা ছাড়াই ২ কোটি ১২ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। ওই দুই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকার ভাগ গেছে অন্তত ১১ কর্মচারীর অ্যাকাউন্টে। আরেক কর্মচারীর ব্যাংক ও বিকাশ অ্যাকাউন্টে পাওয়া গেছে অর্ধকোটি টাকা লেনদেনের তথ্য। তিনিও টাকার ভাগ দিয়েছেন এসব কাজে যুক্ত অন্তত ছয়জনকে। একইভাবে আরও কয়েকজনের ব্যাংক হিসাবে বেতন ছাড়াই বড় অঙ্কের লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। বেশ কয়েকজন কর্মচারী ঘুস নেওয়ার কথা স্বীকারও করেছেন। দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় কর্মরত ইসি এবং ইসির প্রকল্প ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) দ্বিতীয় পর্যায়’-এর কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী সেবাপ্রত্যাশীদের কাজ করে দেওয়ার বিনিময়ে টাকা নেওয়ার চুক্তি করেন। রাজধানীর বিভিন্ন কম্পিউটারের দোকানিদের যোগসাজশেও এ ধরনের চুক্তি হয়। ওইসব চুক্তি অনুযায়ী এনআইডি সংশোধনের মূল দায়িত্ব পান ঢাকায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়করা। কাজ হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হাতে হাতে টাকা ভাগবাটোয়ারা হয়। সেবা প্রার্থীদের যথাযথ প্রমাণপত্র থাকা সত্ত্বেও যথাযথ সেবা দেওয়া না দিয়ে নানা ধরনের কৌশল নেওয়া হয় যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এক্ষেত্রে আর্থিক দুর্নীতি, ঘুষ গ্রহণ, নানা অনিয়ম, ছল-চাতুরি, অন্যের নাম ভাঙানো ইত্যাদি অভিযোগ উত্থাপিত হচ্ছে। একজন নাগরিকের জন্য এনআইডির প্রয়োজনীয়তা যেমন অনেক, তেমনি রাষ্ট্রের জন্যও স্পর্শকাতর এ তালিকার গুরুত্ব অপরিসীম। এটির হেফাজতের দায়িত্বও সরকারের। কাজেই এর নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা আছেন, তারা যেন রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে না পারেন, তা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। তাই জননিরাপত্তার স্বার্থে এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button