জনশক্তি রপ্তানিতে বাধা দূর হোক

১৯৭৬ সালে প্রথম জনশক্তি রপ্তানি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। বাড়তে থাকে রেমিট্যান্স আয়, যা দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অন্যতম প্রভাবক হিসেবে ভূমিকা পালন করতে শুরু করে। বিএমইটির তথ্য মতে, ১৯৭৬ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত বাংলাদেশি অভিবাসীদের পাঠানো মোট বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ ২৩২ বিলিয়ন ডলার। রেমিট্যান্স প্রাপ্তিতে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। তাই দেশের টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত মজবুত করতে অব্যাহত রাখতে হবে রেমিট্যান্স প্রবাহ। যার জন্য প্রয়োজন দক্ষ জনবল প্রস্তুতি, নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধান এবং জনশক্তি রপ্তানি খাতে দালালদের দৌরাত্ম্য কমানো। নতুবা আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে পিছিয়ে পড়বে বাংলাদেশ। মূলত বাংলাদেশ থেকে বিদেশে সিংহভাগ কর্মী যায় বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি বা তাদের মনোনীত দালালের মাধ্যমে। দালালরা অভিবাসন প্রক্রিয়ার তৃণমূল পর্যায়ে অবস্থান করায় বিদেশ গমনেচ্ছুরা তাদের ওপর অনেকটা নির্ভর করে। তাদের কারণেই অভিবাসন ব্যয় ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। শুধু এ দেশে নয়, গন্তব্য দেশটিতেও একটি শক্তিশালী মধ্যস্বত্বভোগী চক্র গড়ে উঠেছে। সব কর্মী বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দুর্বল যোগাযোগ ও ভাষায় অদক্ষতা, আচরণগত সমস্যা, শারীরিক যোগ্যতার অভাব, আধুনিক যন্ত্রপাতি সম্পর্কে অস্পষ্ট ধারণা, অভিবাসী দেশের আইন সম্পর্কে অবগত না থাকা, স্বাস্থ্যবিধি এবং স্যানিটেশন সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণবশত কাজে অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের শ্রমশক্তির মানকে নি¤œ দিকে ধাবিত করে। স্বল্প দক্ষ কর্মীরা কিছুটা কাজ শিখে নেওয়ার চেষ্টা করলেও শ্রম অনুযায়ী পারিশ্রমিক পান না। গ্রামাঞ্চল ও মফস্বলের মধ্যবিত্ত কিংবা নি¤œমধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর অনেকে দালালদের খপ্পরে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির আশায় জীবনের শেষ সম্বল দিয়ে বিদেশে পাড়ি জমান। কিন্তু প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাবে ভিনদেশে পড়ে বিপাকে। দীর্ঘ পরিশ্রমের পরও অধিকাংশই বিনিয়োগকৃত অর্থ তুলতে পারেন না, যা এক দিকে যেমন ব্যক্তিগত ক্ষতি অন্য দিকে কমাচ্ছে আন্তর্জাতিক মানদ-ে বাংলাদেশের কর্মীদের মান। দালালনির্ভরতার কারণে জনশক্তি রপ্তানি খাতের সুনাম দেশে ও প্রবাসে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে। জনশক্তি রপ্তানি প্রক্রিয়ায় লোক সংগ্রহের সিংহভাগই সম্পন্ন হয় দালালদের মাধ্যমে। রিক্রুটিং এজেন্সির নামধাম না জেনেও অনেকে দালালের হাতে তুলে দেয় টাকা। দালালরাই পাসপোর্ট বানিয়ে দেয়, তাদের মাধ্যমে মেডিকেল টেস্টও সম্পন্ন হয়, বিমানের টিকিট সংগ্রহ করা হয়। দালালনির্ভরতার কারণে বিদেশে যেতে বাংলাদেশের কর্মীদের অন্য দেশের কর্মীদের চেয়ে চার থেকে পাঁচগুণ বেশি খরচ হয়। জনশক্তি রপ্তানিতে দালালরাই শেষ কথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দালাল চক্র বিদেশেও বড় ধরনের ফাঁদ পেতে রেখেছে। জনশক্তি রপ্তানি খাতে স্বচ্ছতা আনতে দালালদের হয় বৈধ করতে হবে, নতুবা এ খাতে তারা যাতে কোনো ভূমিকা রাখতে না পারে তা নিশ্চিত করা জরুরি।