সম্পাদকীয়

পদুয়ার বাজারের ইউটার্ন: মারণফাঁদ থেকে রক্ষা মিলবে কবে?

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার পদুয়ার বাজার বিশ^রোড এলাকায় অপরিকল্পিত ইউটার্ন দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে মারণফাঁদে পরিণত হয়েছে। ১১ বছরে এই ইউটার্নের কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় অর্ধশতাধিক প্রাণহানি ঘটেছে, আহত হয়েছেন শত শত মানুষ। এটি কেবল একটি পথঘাট সমস্যা নয়, এটি একটি মানবিক সংকট। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা এবং পরিকল্পনাহীনতার ফলে পদুয়ার বাজারে আজও এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো একে অপরকে দোষারোপ করলেও বাস্তবে কার্যকর সমাধান এখনও অধরা। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবাইয়া খানমের মতে, যদি ভুল ডিজাইনের কারণে বারবার দুর্ঘটনা ঘটে এবং মানুষ প্রাণ হারায়, তবে তার দায় সড়ক ও জনপথ বিভাগকে নিতে হবে। অন্যদিকে, সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে, এই সমস্যার সমাধানে নতুন ইউলুপ নির্মাণ ও মহাসড়ককে ১০ লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে, যা বাস্তবায়ন হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, কাজের ধীরগতির কারণে ভুক্তভোগীরা প্রতিনিয়ত মৃত্যুঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। পদুয়ার বাজার বিশ^রোড দেশের অন্যতম ব্যস্ত মহাসড়কের অংশ, যেখানে চট্টগ্রাম, নোয়াখালীসহ ১১টি জেলার শতাধিক রুটের হাজারো যানবাহন চলাচল করে। মহাসড়কে যানজট কমাতে এবং রেললাইন এড়াতে রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ করা হলেও সেটি যথাযথভাবে পরিকল্পিত হয়নি। ফলে মূল সমস্যার সমাধান না হয়ে বরং নতুন সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এই ওভারপাস যদি শ্রীবল্লভপুর থেকে উত্তর রামপুর পল্লি বিদ্যুৎ অফিস পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হতো, তাহলে চট্টগ্রাম বন্দরসহ ঢাকা-চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম-ফেনী অঞ্চলের যান চলাচলে এতো দুর্ঘটনার শিকার হতে হতো না। একদিকে দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবার কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে না, যা আরও উদ্বেগজনক। স্থানীয় কৃষক সমবায় ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মুহম্মদ আখতার হোসাইন জানিয়েছেন, তিনি ২৩টি পরিবারের তথ্য সংগ্রহ করেছেন, যারা দুর্ঘটনায় প্রিয়জন হারিয়েছে, কিন্তু এখনো ক্ষতিপূরণ পায়নি। এটি নিঃসন্দেহে প্রশাসনিক ব্যর্থতা এবং অসচেতনতার চরম দৃষ্টান্ত। সরকারের পক্ষ থেকে পদুয়ার বাজার বিশ^রোডের ইউটার্ন সমস্যার সমাধানে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। ইউলুপ নির্মাণ দ্রুত সম্পন্ন করা, মহাসড়ককে ১০ লেনে উন্নীত করা এবং দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আধুনিক ট্র্যাফিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। পাশাপাশি, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে, যাতে তারা কিছুটা হলেও স্বস্তি পেতে পারে। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও, কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে এই মৃত্যুর মিছিল থামানো যাবে না। এখনই সময় পদক্ষেপ নেওয়ার, নতুবা এই অনিয়ন্ত্রিত ইউটার্ন আরও অনেক তাজা প্রাণ কেড়ে নেবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button