বন বাঁচাতে আইনের প্রয়োগ জরুরি

গাজীপুরে শালবন দখল করে পাঁচ হাজারের বেশি বাড়িঘর, দোকানপাটসহ বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা গড়ে উঠেছে। স্থাপনাগুলোর মধ্যে টিনশেড, আধাপাকা ও বহুতল ভবনও রয়েছে। গত বছর গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে বনের জমি দখল শুরু করে এক শ্রেণির ভূমিদস্যু। গত নয় মাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও থেমে নেই বনভূমি জবরদখল। অব্যাহত দখলের কারণে ভাওয়াল বনখ্যাত শালবনের আয়তন ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য, বাস্তুচ্যুত হচ্ছে বন্যপ্রাণী। জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর বনভূমি দখল করে ঘরবাড়ির তৈরি করা শুরু হয়। বেশির ভাগ স্থাপনাই হয়েছে প্রভাবশালীদের মদদে। বন কর্মকর্তাদের অর্থ দিয়েও হয়েছে অনেক স্থাপনা। পরবর্তী সময়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের কঠোর অবস্থানের কারণে জবরদখলকারীদের তালিকা তৈরি শুরু করে বন বিভাগ। প্রতিটি ফরেস্ট বিট থেকে আলাদা তালিকা তৈরি করা হয়। বন বিভাগের একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, ভাওয়াল রেঞ্জের ভবানীপুর ফরেস্ট বিটে বন দখল করে ঘরবাড়ি, দোকানসহ বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে ৭০০টি। বন বিভাগের তালিকায় ওই বিটে বাড়ি নির্মাণের তথ্য রয়েছে ৪৫১টি। ভবানীপুর বিটে কয়েক দফা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হলেও এখনো উচ্ছেদ হয়নি শত শত স্থাপনা। কালিয়াকৈর রেঞ্জের চন্দ্রা বিটের সংরক্ষিত বনে কমপক্ষে আড়াই হাজার ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। তবে এখানে তালিকায় স্থান পেয়েছে এক হাজার ৩২৬টি। দুই দফায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতি এবং বন বিভাগের নিজস্ব উচ্ছেদ অভিযানের পরও চন্দ্রা বিটে এখনো এক হাজারের বেশি স্থাপনা রয়ে গেছে। এ ছাড়া কালিয়াকৈর রেঞ্জের মৌচাক ও বারুইপাড়া বিটে দুই শতাধিক ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। কাচিঘাটা রেঞ্জের কাচিঘাটা সদর, যাথিলা ও খলিশাজানি বিটে পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু জবরদখলের সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি ওই রেঞ্জে। শ্রীপুর রেঞ্জের শ্রীপুর সদর, সাতখামাইর, শিমলাপাড়া, রাথুরা, গোসিংগা, সিংড়াতলী ও কাওরাইদ বিটে জবরদখলকারীদের তালিকা থেকেও অনেক নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জের মনিপুর ও রাজেন্দ্রপুর পূর্ব বিটে নতুন ঘরবাড়ি হয়েছে আড়াইশর মতো। জানা গেছে, জবরদখলকারীদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া ও উচ্ছেদ অভিযান সফল না করার পেছনে রয়েছে কিছু কর্মকর্তার বাণিজ্য। এ ধরনের অভিযোগ করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরাও। তাই বনভূমি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে কার্যকর ও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। শুধু গাজীপুর নয়, দেশের অন্যান্য স্থানেও একইভাবে বনভূমি রক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে।