মিয়ানমার সীমান্তের কাছে সামরিক মহড়া শুরু করবে চীন
প্রবাহ ডেস্ক : মিয়ানমারের সঙ্গে যৌথ সামরিক ‘মহড়া’ শুরু করবে চীন। এর আগে চীন থেকে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে পণ্য নিয়ে আসা ট্রাকের একটি বহরে হামলার ঘটনা ঘটে গত বৃহস্পতিবার হামলার পর একটি ট্রাকে আগুন লেগে যায়। স্থানীয় সময় গত শুক্রবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, হামলাটি চালিয়েছে বিদ্রোহীরা। ফলে ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাহীনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ঘটনার পরেই চীন এবার জানিয়েছে, চীনা সামরিক বাহিনী গতকাল শনিবার থেকে মিয়ানমার সীমান্তের পাশে ‘যুদ্ধ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম’ শুরু করবে। ওয়েচ্যাট মেসেজিং অ্যাপে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির পাঁচটির মধ্যে একটি ‘সাউদার্ন থিয়েটার কমান্ড’ জানিয়েছেন, ‘থিয়েটার সৈন্যদের দ্রুত চলাচলের দ্ক্ষতা, সীমান্ত বন্ধ করা এবং লক্ষ্যে আঘাত করার ক্ষমতা পরীক্ষা করা এই যুদ্ধ প্রশিক্ষণের লক্ষ্য।’ তবে সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে সময় বা সৈন্য সংখ্যা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি। মিয়ানমারের থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের আছে তিনটি সদস্য। তারা হলো মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি, দ্য টাআং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি ও দ্য আরাকান আর্মি। জানা যায়, ২৭ অক্টোবর মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের শান রাজ্যে হামলা চালায় তারা। ‘অপারেশন ১০২৭’ নামের এই হামলায় তাদের টার্গেট ছিল ১৩৫টি সামরিক ঘাঁটি। সাম্প্রতিক এ সহিংসতায় ঘরছাড়া হচ্ছে অনেকে। আবার চীনের সঙ্গে সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। হারিয়েছে ভারতের মিজোরাম সীমান্তের কাছে অবস্থিত রিহখাওডর শহরের নিয়ন্ত্রণও। সহিংসতার বাতাস লেগেছে থাইল্যান্ডের কাছে মিয়ানমারের কায়া রাজ্যেও। মিয়ানমারের সীমান্ত অঞ্চলে বিদ্রোহীদের এমন হামলা চীনের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। হামলা গুলোর পরে সীমান্তে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য মিয়ানমারের রাজধানীতে শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করে আলোচনা চালিয়েছেন চীনের দূত। ২০২১ সালের অভ্যুত্থানে মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমার জান্তা। এরপর থেকে বিদ্রোহীদের সবচেয়ে বড় সমন্বিত আক্রমণের সম্মুখীন হয়েছে তারা। বিদ্রোহীদের আক্রমণে সামরিক বাহিনী উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে এবং আরো বেশ কয়েকটি শহর ও সামরিক চৌকির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। এ কারণেই মিউজ শহরে চীনা পণ্যবাহী ট্রাকে হামলার ঘটনা ঘটেছে। হানাহানির ফলে মিয়ানমারের হাজার হাজার মানুষ গত সপ্তাহে আশ্রয় নিয়েছে ভারতের মিজোরামে। আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে সামরিক বাহিনীর সদস্যও ছিলেন। পরে অবশ্য তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়। জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর অন্যতম সশস্ত্র দল আরাকান আর্মি গত সপ্তাহে রাখাইন রাজ্যে সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালায়। এরইমধ্যে দেশটির উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে সমন্বিত হামলার মুখে পড়া জান্তা শাসকের বিরুদ্ধে আরেকটি রণাঙ্গন খুলল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ক্রমেই বেড়ে চলা সংঘাতে প্রায় তিন লাখ ৩৫ হাজার মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। আরাকান আর্মির যোদ্ধারা অল্প সময়ের জন্য উপকূলীয় শহর পাউকতাও দখল করে নেওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার জান্তার সশস্ত্র বাহিনী ২০ হাজার বাসিন্দার শহরটিতে গোলাবর্ষণের জন্য নৌবাহিনীর জাহাজ পাঠায়। পাশাপাশি হেলিকপ্টার থেকেও গুলি ছোঁড়া হয় বলে স্থানীয় বাসিন্দারা। সূত্র: এএফপি, রয়টার্স, ডয়চে ভেলে