আন্তর্জাতিক

বণিজ্য যুদ্ধে বিরতি: ৯০ দিনের জন্য শুল্ক কমালো যুক্তরাষ্ট্র ও চীন

প্রবাহ ডেস্ক: বিশে^র শীর্ষ দুই অর্থনৈতিক পরাশক্তি চীন ও যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে চলা বাণিজ্য উত্তেজনার মধ্যে এবার সাময়িক সমঝোতায় পৌঁছেছে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত দুইদিনব্যাপী এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে উভয় দেশ ৯০ দিনের জন্য একে অপরের পণ্যের ওপর আরোপিত পাল্টাপাল্টি শুল্ক উল্লেখযোগ্য হারে কমাতে সম্মত হয়েছে।
সোমবার (১২ মে) দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক ১৪৫ শতাংশ থেকে নামিয়ে আনবে ৩০ শতাংশে, আর চীন মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়ে ১২৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনবে। এই পদক্ষেপ আগামী তিন মাসের জন্য কার্যকর থাকবে এবং এর উদ্দেশ্য হলো-এই সময়ের মধ্যে উভয় দেশ একটি দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্য সমঝোতায় পৌঁছার পথ প্রশস্ত করা।
এই সমঝোতা মার্কিন ও চীনা কর্মকর্তাদের মধ্যে সাম্প্রতিককালে প্রথম মুখোমুখি আলোচনা। ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদে কঠোর শুল্ক আরোপ এবং চীনের প্রতিক্রিয়ায় শুরু হওয়া এই বাণিজ্য যুদ্ধ বিগত কয়েক বছরে বৈশি^ক সরবরাহ শৃঙ্খলা, প্রযুক্তি শিল্প এবং আর্থিক বাজারে ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছিল।
মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেছেন, “আমরা শুল্ক কমানোর মাধ্যমে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়তে চাই। উচ্চ শুল্ক আরোপ এক ধরনের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞায় পরিণত হচ্ছিল, যা দুই পক্ষের জন্যই ক্ষতিকর।”
চীনও একইভাবে ‘ডি-কাপলিং’ বা অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতার বিপক্ষে অবস্থান জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে পারস্পরিক স্বার্থে বাণিজ্য চালিয়ে যেতে আগ্রহী বেইজিং, বলছেন কর্মকর্তারা।
এ ধরনের সমঝোতা নতুন নয়। ২০১৮ সালেও দুই দেশ বাণিজ্য বিরোধ সাময়িকভাবে স্থগিত করেছিল, তবে তা স্থায়ী হয়নি। পরবর্তীতে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ‘ফেজ ওয়ান’ বা ‘প্রথম ধাপের’ একটি চুক্তি হয়, তবে সেটিও পূর্ণরূপে কার্যকর হয়নি। বিশেষ করে কোভিড মহামারীর সময় চীন তাদের পণ্যের ক্রয়সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়, ফলে ফের উত্তেজনা বাড়ে।
ব্লুমবার্গসহ একাধিক আন্তর্জাতিক বিশ্লেষণ সংস্থা আশঙ্কা করছে, বর্তমান ৯০ দিনের এই শুল্ক হ্রাসও চূড়ান্ত কোনো সমাধানে পৌঁছাবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। তবে বাজার ইতোমধ্যে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে-চীন ও হংকংয়ের শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বগতি, এবং ডলার ও ইউয়ানের মানেও বৃদ্ধি দেখা গেছে।
যদিও শুল্ক হ্রাসের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়নি, তবে মার্কিন অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, ওষুধ, সেমিকন্ডাক্টর ও ইস্পাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে সরবরাহ শৃঙ্খলা পুনর্গঠনের লক্ষ্যে কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখা হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের পদক্ষেপ শুধু দুই দেশের জন্য নয়, বিশ^ অর্থনীতির জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ। তবে চূড়ান্ত সফলতার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা, অর্থনৈতিক সমঝোতা এবং কৌশলগত বোঝাপড়ার ধারাবাহিকতা প্রয়োজন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button