পাকিস্তানের করাচির কারাগার থেকে পালাল ২১৩ কয়েদি

প্রবাহ ডেস্ক: পাকিস্তানের করাচির মালির জেল থেকে ২১৩ জন কয়েদি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে দেশজুড়ে। ভূমিকম্পজনিত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে গত সোমবার দিবাগত রাতে এই পালানোর ঘটনা ঘটে। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন, জিও নিউজ এবং রয়টার্স-এর খবরে উঠে এসেছে ঘটনার নানা দিক।
জানা গেছে, করাচিতে গত রোববার সকাল থেকে সোমবার রাত পর্যন্ত মোট ১৯ বার ভূমিকম্প অনুভূত হয়, যার মাত্রা ছিল ৩.২ থেকে ৩.৯ এর মধ্যে। এসব ভূমিকম্পের কারণে জেলখানার দেয়ালে ফাটল দেখা দেয় এবং বন্দিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নিরাপত্তার খাতিরে জেল কর্তৃপক্ষ প্রায় ২ হাজার বন্দিকে ব্যারাক থেকে খোলা জায়গায় নিয়ে আসে। সেই সময়ই শুরু হয় বিশৃঙ্খলা।
জানা গেছে, জেলের ৪ ও ৫ নম্বর সার্কেলের কয়েদিরা মূলত এই পরিকল্পিত পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় নেতৃত্ব দেয়। যখন বন্দিদের গণনার জন্য বাইরে আনা হয়, তখন প্রায় ৭০০ থেকে ১০০০ কয়েদি মূল ফটকের সামনে জড়ো হয়। একপর্যায়ে ২১৩ জন কয়েদি ফটক ভেঙে জোরপূর্বক পালিয়ে যায়।
সিন্ধু প্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জিয়া-উল-হাসান লাঞ্জার ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের জানান, এই ঘটনা সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর প্রিজনব্রেক। তিনি আরও বলেন, পুলিশের গুলিতে এক কয়েদি নিহত হয়েছে এবং চারজন কয়েদি ও দুইজন কারারক্ষী আহত হয়েছে।
পাকিস্তানের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক শাখা- যেমন পুলিশ, রেঞ্জার্স, ফ্রন্টিয়ার কোর (এফসি), স্পেশাল সিকিউরিটি ইউনিট ও র্যাপিড রেসপন্স ফোর্স- এরই মধ্যে একযোগে অভিযান শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত ৮০ জন পলাতক কয়েদিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এখনও ১৩০ জনের বেশি পলাতক রয়েছে।
সিন্ধু পুলিশের মহাপরিদর্শক গোলাম নবী মেমন জানান, অধিকাংশ পলাতক কয়েদি ছোটখাটো অপরাধ এবং মাদক সংক্রান্ত মামলায় দ-িত ছিলেন। তিনি আরও বলেন, বন্দিরা জেলের বাইরের দেয়াল ভেঙে নয়, মূল ফটক দিয়েই পালিয়েছে।
ঘটনার পর প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রী মুরাদ আলী শাহ কারা ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করে বলেন, “বন্দিদের রাতে বাইরে আনার সিদ্ধান্ত ছিল এক বড় ভুল।” পালিয়ে যাওয়া কয়েদিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে তিনি হুঁশিয়ার করেন, তারা আত্মসমর্পণ না করলে সন্ত্রাসবাদ আইনে মামলা করা হবে।
অভিযান চলাকালীন এক মায়ের উদ্যোগে তার পালানো ছেলে স্বেচ্ছায় পুলিশের কাছে ফিরে এসেছে, যা মানবিকতার একটি ব্যতিক্রম উদাহরণ হিসেবে আলোচিত হচ্ছে।
ঘটনার তদন্তে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।