স্থানীয় সংবাদ

পেঁয়াজের বাজারে অভিযান : ৮০ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

গত দুই দিনে ২১৩ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার, ম্যাজিস্ট্রেট আসতে দেখে ১৮০ টাকা বাড়তি দামে বিক্রয়কারী পেঁয়াজ বিক্রেতা ১১০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে, মূল্য তালিকায় ‘পেঁয়াজ নেই’ লিখে গুদামে পাওয়া গেল ১৩৬ বস্তা

স্টাফ রিপোর্টার ঃ গত দুই দিনে সারাদেশে মোট ২১৩ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ৯ ডিসেম্বর সারাদেশে ১৩৩টি প্রতিষ্ঠানকে ও গতকাল ১০ ডিসেম্বর ৮০ প্রতিষ্ঠানকে মোট ২১৩ প্রতিষ্ঠানকে অবৈধভাবে অস্বাভাবিক মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রির দায়ে জরিমানা করা হয়েছে। এদিকে চট্টগ্রামে ম্যাজিস্ট্রেট আসতে দেখে যে সমস্ত পেঁয়াজ বিক্রেতা গত দুই দিন ধরে ১১০ টাকা কেজির পেঁয়াজ ১৮০ টাকায় বিক্রি করছিল তারা ফের ১১০ টাকা কেজি হাঁকাতে থাকে। এরপর সব জেনে শেষ রক্ষা হয়নি অতি মুনাফালোভী পেঁয়াজ ব্যবসায়িদের। জরিমানা গুণতে হয়েছে সাথে সাথে। পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা কমানো ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে রাজধানীসহ জেলা পর্যায়ে অভিযান চালাচ্ছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। দ্বিতীয় দিনের অভিযানে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রিসহ অনিয়মের অভিযোগে সারা দেশে ৮০টি প্রতিষ্ঠানকে ৩ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেছেন সংস্থাটি কর্মকর্তারা। রোববার (১০ ডিসেম্বর) ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পেঁয়াজের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ঢাকা মহানগরসহ দেশের সব বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে ভোক্তা অধিদপ্তরের বাজার অভিযান পরিচালনা করা হয়। এর মধ্যে রাজধানীতে অধিদপ্তরের ৪টি টিম অভিযান করে। পাশাপাশি অন্যান্য বিভাগীয় শহরসহ দেশের মোট ৪০টি জেলায় একযোগে এ অভিযান পরিচালিত হয়। এসময় সারাদেশে ৮০টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৩ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। ভোক্তা অধিকার রক্ষায় এ কার্যক্রম আগামীকালও অব্যাহত থাকবে বলে জানায় অধিদপ্তর। প্রতিবেশী ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম রাতারাতি বেড়ে যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতিকেজি ভারতের আমদানি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১৯০ থেকে ২০০ টাকা আর বেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়। যেখানে বৃহস্পতিবার আমদানি পেঁয়াজের দাম ছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। এমন পরিস্থিতিতে শনিবারের অভিযানে অনিয়মের অভিযোগে সারা দেশে ১৩৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা জরিমানা করেছিল ভোক্তা অধিদপ্তর। অপরদিকে, পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী ও বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। রোববার (১০ ডিসেম্বর) অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক ফয়েজ উল্লাহর নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে নানা অনিয়মের দায়ে তিনটি দোকানকে ২০ হাজার টাকা করে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সেগুলো হলো– পাহাড়তলীর মেসার্স কালু শাহ এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স বাছামিয়া সওদাগর ও বায়েজিদ বোস্তামীর ছৈয়দ স্টোর। ভোক্তা অধিদপ্তর চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মো. আনিছুর রহমান বলেন, অভিযানে পাহাড়তলী বাজারে গিয়ে দেখা যায়, মেসার্স বাছামিয়া সওদাগরের দোকানে মূল্য তালিকায় লেখা আছে ‘পেঁয়াজ নেই’। কিন্তু দোকানটির গোডাউনে গিয়ে ৩৬ বস্তা পেঁয়াজ পাওয়া যায়। উল্লেখ্য, পেঁয়াজের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক রাখতে (ভারতে) রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ভারত সরকার। গত ৮ ডিসেম্বর থেকে এটি কার্যকর হয়। এর প্রভাবে শনিবার হুট করে বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। আগের দিন শুক্রবার যে পেঁয়াজ ১০০ টাকা ছিল পরদিন শনিবার তা ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়। এমন অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীদের কারসাজিকে দায়ী করছে ভোক্তা অধিকারসহ সংশ্লিষ্টরা। কারণ, ভারত রপ্তানি বন্ধ করলেও দেশের বাজারে এখন যে পেঁয়াজ আছে সেগুলো আগেই কম দামে আমদানি করা। এসব পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি করার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। ভারত থেকে আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলা ৫২ হাজার টন পেঁয়াজ দ্রুত দেশে আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে ভারতে বাংলাদেশ দূতাবাসকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এদিকে দেশে যৌক্তিক মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি নিশ্চিত করতে কঠোর মনিটারিং করার জন্য সব জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রোববার (১০ ডিসেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা হায়দার আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মূলত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতীয় দূতাবাসে চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রাইভেট সেক্টরের ৫২ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির এলসি খোলা আছে। সেগুলো যাতে ছাড়া হয় সে বিষয়ে তাদের অনুরোধ করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে দ্রুতই এসব পেঁয়াজ দেশে আসবে। গত বৃহস্পতিবার ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। তবে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে সেখান থেকে বাংলাদেশে ৫২ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়। এখন এই পেঁয়াজ দ্রুত দেশে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। অন্যদিকে রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ভারত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগেই সেখান থেকে আমদানির জন্য ৫২ হাজার টন পেঁয়াজের এলসি খোলা হয়। এই পেঁয়াজ দ্রুত দেশে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। কীভাবে বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজের আমদানি বাড়ানো যায়, সে চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে টিসিবির মাধ্যমে স্বল্প আয়ের মানুষের মাঝে পেঁয়াজ বিক্রি অব্যাহত থাকবে। দেশের সর্বত্র যৌক্তিক মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রয় নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। দেশের মানুষ কষ্ট পায় এমন কিছু করা ঠিক হবে না- উল্লেখ করে তিনি ব্যবসায়ীদের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানান।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button