স্থানীয় সংবাদ

১৪ বছরেও ব্যাবস্থা হয়নি সেতুর, ভেলায় চড়ে বিদ্যালয়ে যায় শিক্ষার্থিরা

রিয়াছাদ আলী, কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি ঃ কত মানুষ এসে দেখে গেছে প্রতিশ্রুতী দিয়েই গেছে কেউ কথা রাখেনি। বছরের পর বছর দুর্ভোগ পোহতে হচ্ছে। যে কোন একটা উপায় হলে বই খাতা নিয়ে কোন আতংকে ছাড়া স্কুলে আসতে পারতাম এমন কথাগুলো বলছিলেন সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রা উপজেলার প্রতাপ স্মারনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাবেয়া খাতুন। রাবেয়া সহ ঐ বিদ্যালযের অনেক ছাত্র-ছাত্রীদের ভেলায় পার হয়ে প্রতি দিন বিদ্যালয় যেতে হয় পাঠদান করতে। কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের মঠবাড়ি গ্রামটিকে দু’ভাগে বিভক্ত করেছে প্রায় তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ২৫০ মিটার চওড়া একটি খাল। ২০০৯ সালে গ্রামের পাশর্^বর্তি শাকবাড়িয়া নদীর বাঁধ ভেঙে জোয়ার-ভাটার প্রবল ¯্রােতে ওই খাল সৃষ্টি হয়। এক বছর পর বাঁধ মেরামত হলেও খালটি ভরাট হয়নি। ফলে গত ১৪ বছর ধরে গ্রামের মানুষ ভেলায় চড়ে ও নৌকার মাধ্যমে খাল পারাপার হচ্ছেন। এতে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছে বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থিরা। গ্রামবাসি জানায়, খালটির পশ্চিম পাড়ে প্রতাপ স্মরণী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মঠবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়া একটি কমিউনিটি ক্লিনিকও রয়েছে সেখানে। প্রথমদিকে খালের অন্যপাড় থেকে বিদ্যালয়গামী ছেলেমেয়েরা ডিঙি নৌকায় পারপার হতো। কিন্তু নৌকা সব সময় পাওয়া যায় না। জেলেরা নৌকা নিয়ে সুন্দরবনে চলে গেলে কলার ভেলায় পার হতে হয় তখন। এতে ঝুঁকি ছিল বেশি। পরে প্লাস্টিকের ড্রামের উপর কাঠের তক্তা দিয়ে স্থায়িভাবে ভেলা বানানো হয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, প্লাস্টিকের ড্রাম চারকোনা করে বেঁধে ওপরে তক্তার পাটাতন বিছিয়ে তৈরি করা হয়েছে বিশেষ এই ভেলা। খালের দুই পাশে একটি লম্বা রশি আড়াআড়িভাবে খুঁটির সঙ্গে টানিয়ে রাখা হয়েছে। লোকজন ভেলায় চড়ে নিজেরাই রশি টেনে পারাপার হচ্ছেন। সেখানকার বাসিন্দাদের উপজেলা সদরে যেতে হয় ভেলায় খাল পেরিয়ে। প্রায় ৫ হাজার জনসংখ্যার বড় এ গ্রামটির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া শাকবাড়িয়া নদী পেরিয়ে সুন্দরবন। রয়েছে একটি বাজার ও ফরেস্ট স্টেশন। খালের পূর্ব পাড়ে সুপেয় পানির সংকট থাকায় বাসিন্দারা ভেলায় খাল পেরিয়ে পশ্চিম পাড় থেকে পানি নিয়ে আসেন। খালের পশ্চিম পাড়ের মঠবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, এ বছরের শুরুতে ছেলে মেয়েরা নতুন বই নিয়ে বাড়ি যাওয়ার সময় একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে এখানে। ভেলায় পার হওয়ার সময় সেটি উল্টে শিক্ষার্থীরা খালে পড়ে যায়। আশেপাশের লোকজন এসে ছোট ছোট শিশুদের উদ্ধার করলেও তাদের নতুন বইগুলো ভিজে গেছে। তবে এ ধরনের দুর্ঘটনা বর্ষাকালে বেশি হয় বলে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, একটি সেতু নির্মান না হলে এখানকার দুর্ভোগ কমবে না। প্রতাপ স্মরণী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক রনজিত কুমার সরকার বলেন, দুই শতাধিক শিক্ষার্থী প্রতিদিন খাল পার হয়ে যাতায়াত করে। অভিভাবকেরা শিক্ষার্থীদের খাল পারাপার নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন। অন্তত শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে মঠবাড়ি গ্রামের খালে একটি সেতু নির্মাণ করে দেওয়া জরুরী। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার, নজরুল ইসলাম, আরিফুজ্জামান, সুভাষ মন্ডলসহ কয়েকজন জানায়, প্রতিদিন ভেলায় খাল পার হয়ে বিদ্যালয়ে আসতে যেতে ভয় লাগে তাদের। ভেলা থেকে পড়ে গেলে বই, খাতা ভিজে যায়। অনেক সময় ভেলায় লোকজন বেশি উঠলে পার হতে পারে না তারা। এজন্য অনেক সময় ক্লাসে উপস্থিত হতে দেরি হয়ে যায়। গ্রামের বাসিন্দা কোহিনুর আলম বলেন, ‘১৪ বছর ধরে শুনতিছি, এ জায়গায় ব্রিজ হবে। আবার শুনি খালের ওপর আড়াআড়ি বাধ হবে। কিন্তু কিছুইতো হয় না। উপায়ন্তর না দেখি স্কুলের বাচ্চাগের পারাপারের জন্যি ড্রামের ভেলা বানাই দিছি। তাতেই এখন গ্রামের সবগুলি মানুষ পার হই।’ স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু সাইদ বলেন, সাড়ে ১৪ বছর আগে তৈরি হওয়া খালটির পাড়ে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পারাপারে ভোগান্তি লাঘবে খালের ওপর একটি সেতু হলে এই এলাকার কয়েক হাজার মানুষ নিরাপদ যোগাযোগের সুযোগ পাবেন। মহারাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের বাজেট দিয়ে এতো বড় খালে সেতু বানানো সম্ভব নয়। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা পরিষদের সমন্বয় কমিটির সভায় আলোচনা করে দেখব। কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের স্কুলে পৌঁছাতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে- এটা দুঃখজনক। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করেছি। আপাতত একটি ভাসমান সেতু নির্মানের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button