খুলনায় ফুলের বাজারে বাড়ছে ক্রেতা সমাগমম

ভালোবাসা দিবস ও মাতৃভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে বাড়তি দামের অভিযোগ
মুশফিকুর রহমান মেহেদী ঃ আগামী ১৪ই ফেব্রুয়ারী বুধবার বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও বিশ্বব্যাপী পালন হবে দিনটি। প্রিয় মানুষটিকে শুভেচ্ছা জানাতে এদিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে চায় অনেকেই। ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ কিংবা শুভেচ্ছাজ্ঞাপনে বিনিময় করা হয় ফুল। এ দিনটিতে ফুলের চেয়ে মূল্যবান আর কিছু নেই বললেই চলে। ফেব্রুয়ারী মাসজুড়ে যেন নানা আয়োজন। এ মাসের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিন হলো ২১ শে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতিতে প্রতি বছর শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। জাতি , ধর্ম , বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণী পেশার মানুষ এ দিনে ফুল কিনে শ্রদ্ধা জানায়। তবে সারা বছর এ দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকেন ফুল ব্যবসায়ীগন। সারা বছরের লোকসান পুসিয়ে নেন এ দিনে। ফলে, ফুলের দাম হাকান কয়েন গুন বেশী। এছাড়া গতকাল ৭ই ফেব্রুয়ারী বুধবার ছিল ‘গোলাপ দিবস’। ফুলের রানী গোলাপকে কে না ভালোবাসে। প্রিয় মানুষটিকে ফুল দিয়ে হাসি ফোটাতে ফুলের দোকানের সামনে ভিড় করছেন প্রেমিক ও প্রেমিকাসহ নানা বয়সের মানুষ। সেই সাথে খুলনার শহরের ফুলের দোকানগুলোতে বেড়েছে কেনাবেচার ধুম। উৎসবের রং ধরেছে ফুল ব্যবসায়ীদের মনে। তাই বিশ্ব ভালোবাসা দিবসসহ নানা মহোৎসবকে ঘিরে নগরীর খালিশপুর, দৌলতপুর, ফুল মার্কেট, ফুলের বাজার এখন চাঙ্গা। তবে গত কয়েক বছরের ব্যবধানে এবার ফুলের দাম কয়েকগুন বেশি বলে দাবি করছেন ক্রেতারা। তাই বাড়তি দামে ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটলেও বছরের বিশেষ এই দিনে কিছুটা নারাজ হচ্ছেন ক্রেতারা। প্রতিটি ফুল দোকানের সামনেই ক্রেতাদের নজরকাড়া ভিড়। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলে কোথা থেকে উধাও হওয়া তরুণ-তরুণীরা দরদাম করে নিজ নিজ পছন্দের ফুলটি বেছে নিতে ব্যস্ত রয়েছে তা প্রিয়জনকে দেওয়ার জন্য।
প্রিতম নামক একজন শিক্ষার্থী বলেন, রোজ-ডে তে ৪০ টাকা দিয়ে একটি গোলাপ কিনেছি। যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশী। শায়লা তাবাচ্ছুম নামক শিক্ষার্থী বলেন, ভালোবাসার মানুষের জন্য ফুল কিনতে এসেছি। যে ফুলের দাম ১০ টাকা ছিল ,আজ ৫০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। ক্রেতারা বলছেন, পরিস্থিতির কারনে জীম্মি করেই অনেকটাই কঠোরতা প্রয়োগ করছে ব্যবসায়ীরা। যার কাছ থেকে যে পরিমাণ রাখা সম্ভব সেই দামই রাখছে বিক্রেতারা। এখন থেকে ২১শে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত সকল ফুলের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন ক্রেতাগন। খুলনার অন্যতম ফুলের হাট বসে শান্তিধাম মোড়ের ফুল মার্কেটে। এখানকার ফুল দোকানগুলো থরে থরে ফুলের শোভায় মুখরিত। এর মধ্যে লাল গোলাপ,জারবেরা, রজনীগন্ধা, জুঁই, চামেলি, গাঁদাসহ নানা রং ও বর্ণের ফুল অন্যতম। বেশির ভাগ ফুলই আমদানি করা হয়েছে যশোরের ঝিকড়গাছা গদখালী হতে। তবে, এবছর অতিরিক্ত দামে ফুল কেনা হয়েছে বলে ক্রেতাদের নিকট দাম বেশী ধরা হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। ফুল মার্কেটের একজন কর্মচারী বলেন, প্রতি বছর ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে প্রায় দ্বিগুণ দামে ফুল কিনে আনতে হয়। এ কারণে গদখালীর মালিকরাও ফুলের দাম বেশি রাখছে। পরিবহণ ভাড়াও বেড়েছে। প্রতিটি গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৬০ টাকা, অন্য রঙের গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৮০ টাকা, রজনীগন্ধার স্টিক ৩০-৫০ টাকা, মল্লিকা ৫০ টাকা, ক্যালেনডুলা ৫০ টাকা, জিপসি প্রতি থোঁকা ৫০-৬০ টাকা, জারবেরা প্রতি পিস ৬০ টাকা, গাঁদা প্রতি পিস ৩-৫টাকা, ফুলের তোড়া সর্বনিম্ন সাড়ে চারশ থেকে ছয়শ টাকা, জারবেরা ৬০ থেকে ৭০ টাকা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রাত যত গভীর হবে ততই ফুলের দাম বাড়তে থাকবে। এর মধ্যে তরুণদের পছন্দের শীর্ষে লাল গোলাপ ও জারবেরা রয়েছে বলে জানান। তবে দাম বৃদ্ধির বিষয়ে কৃষি বিপনন কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান জানান, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম বৃদ্ধি করে থাকে। তবে, নিয়মিত বাজার তদারকির মাধ্যমে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।