দৌলতপুর মুরগী বাজারে দুর্গন্ধে অতিষ্ট ক্রেতারা

নোংরা বর্জ্য ও দুর্গন্ধের কারণে পরিবেশ মারাতœক হুমকির মুখে
মোঃ আশিকুর রহমান ঃ নগরীর ঐতিহ্যবাহী বাজারগুলোতে প্রতিদিনই আশপাশের স্থানীয় এলাকা হতে ক্রেতারা তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয়ের জন্য ছুটে আসে। দিনজুড়ে চলে চাল, ডাল, মাছ, মাংসসহ প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের বেচাকেনা। তাছাড়া শুক্রবারসহ বিভিন্ন উৎসব গুলোতে চলে কেনাবেচার ধুম। দুঃখের বিষয় ঐতিহ্যবাহী এই বাজারটির মুরগী পট্টিতে নোংরা পরিবেশে চলছে বেচাকেনা, নেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বালাই। চারিদিকে নোংরাও দুর্গন্ধ। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মুরগি, হাঁস, কবুতরসহ কোয়েল পাখি। ক্রেতারা তাদের চাহিদা অনুযায়ী মুরগি সংগ্রহ করে প্রস্তুত করে নিয়ে যাচ্ছে বাড়িতে। কিন্তু যে স্থানে মুরগি প্রস্তুত করা হয় সেখানে অত্যন্ত মুরগির রক্ত বর্জ্যরে কারণে নোংরা পরিবেশে মুরগি প্রস্তুত করা হচ্ছে। যে কারণে মুরগী কিনতে আসা ক্রেতারা দুর্গন্ধের কারণে দোকানগুলোর সামনে অবস্থান করতে চরম বেগ পাচ্ছে। যদিও কেউ দাঁড়াচ্ছে তবে নাকে রোমাল বা টিস্যু দিয়ে।
মুরগি বিক্রেতারা এই বিশাল বাজারে প্রতিনিয়ত ব্যবসা চালিয়ে গেলেও, তাদের পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট নজরদারি বা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার চিন্তা মাথায় নেই। তারা নিশ্চিন্তে দিনজুড়ে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন, নেই বিন্দু মাত্র মাথা ব্যাথা। যে কারণে সর্বক্ষণই এ মুরগির বাজারে অত্যন্ত দুর্গন্ধপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করে। যার দরুন ক্রেতারা প্রতিনিয়ত চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে মনে করছেন তারা। দৌলতপুর বাজারে মুরগি কিনতে আসা ক্রেতা মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, আমার বাড়ি সাতক্ষীরাতে আমি দীর্ঘদিন দৌলতপুরে থেকে লেখাপড়ার পাশাপাশি চাকরি করে যাচ্ছি। শুক্রবার ছাড়াও প্রায় প্রতিদিনই বাজার করার উদ্দেশ্যে আমাকে দৌলতপুর বাজার আসতে হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় যখনই মুরগি কেনার উদ্দেশ্যে মুরগি পট্টিতে যাই কোনমতেই দুর্গন্ধে এক মিনিটের জন্য সেখানে দাঁড়ানো যায়না। তাছাড়া মুরগির উচ্ছ্বিষ্ট অংশ অর্থাৎ নাড়িভুঁড়ি যেখানে সেখানে পড়ে থাকে তাছাড়া মুরগি প্রস্তুতকরণের জন্য যে মেশিন মুরগি দেয়া হয় সেখানের পরিবেশ অত্যন্ত নোংরা একই পানির ভিতর ভিজিয়ে একাধিক মুরগি ভিজিয়ে মেশিনে দেয়া হয়। খুব কম দোকানেই দেখা যায় ওই ওই পানি পরিবর্তন করতে। দৌলতপুরে মুরগি কিনতে আসা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকির বলে আমি মনে করি এমন কথা বলেছেন, নদীর ওপার হতে আসা ক্রেতা পথের বাজারের বাসিন্দা মোঃ আনিসুর রহমান। তিনি জানান, দীর্ঘ সময় ধরে দোকানের সামনে দুর্গন্ধের জন্য দাঁড়ানো যায় না। এব্যাপারে কোনো ব্যবসায়ী জীবানুনাশক স্প্রে করে না। দুঃখজনক বিষয়। দৌলতপুর মুহসীন মোড়ের বাসিন্দা মোঃ শাহাদাত হোসেন জিকো বলেন, আমি তেমন বাজারে আসিনা তবে আব্বু মাঝে মধ্যে ব্যস্ত হওয়ার দরুন আমাকে বাজারে আসতে হয়। অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় যখন মুরগি ক্রয় করার উদ্দেশ্যে মুরগি পট্টিতে যাই সেখানে পরিবেশ দেখে আর মুরগি কেনার স্বাদ থাকে না। মনে হয় না নিয়ে চলে যাই। কারণ চোখের সামনে মুরগির উচ্ছ্বিষ্ট অংশ যেখানে সেখানে পড়ে থাকে আর দুর্গন্ধে দাঁড়ানো যায়না। আমি ভেবে অবাক হই যারা মুরগি বিক্রি করে তারা তো একদিনের জন্য ব্যবসা করতে আসেনি সুতরাং যেহেতু ব্যবসাটি দীর্ঘসময়ের তাই সকল ব্যবসায়ী উচিত এখানে পরিবেশের প্রতি যতœবান হওয়া । ব্যবসায়ী নয়ন জানান, সাধ্যমতো চেষ্টা করি দোকান পরিষ্কার-পরিচ্ছন রাখার। তবে বাইরে জীবানুনাশক ছিটায় না। ক্রেতাদের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করে জীবানুনাশক ছেটানো উচিত।
এ ব্যাপারে ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ আলী জানান, মুরগি পট্টির ব্যবসায়ীদের তাদের প্রতিষ্ঠানসহ মুরগির উচ্ছ্বিষ্ট বর্জ্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে যথেষ্ট উদাসীনতা রয়েছে। বর্জ্য গুলো যেন নদীতে না ফেলাসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে কেসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইতোপূর্বে তাদের সর্তক করেছে। তারপরও তারা ওই ব্যাপারে উদাসীন। তাছাড়া মুরগির পট্টি আর খাশির বাজারের মধ্যেকার স্থানে যে বর্জ্য নিষ্কাষনের জন্য ড্রেন আছে সেটি সরাসরি পেঁয়াজ বাজার হয়ে ভৈরব নদে গিয়ে মিশেছে। ড্রেনটির কিছু অংশ ভরাট হওয়ার দরুন পানি নিষ্কাষন ব্যবস্থা দূর্বল হয়ে পড়েছে। তবে ড্রেনের কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু হবে। মুরগী পট্টির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে বাজার বণিক সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। দৌলতপুর বাজার বনিক সমিতির সাঃ সম্পাদক নান্নু মোড়ল জানান, বিষয়টি দুঃখজনক। কারণ ক্রেতাদের অসুবিধা করে কোনো ব্যবসা পরিচালিত হতে পারে না। এব্যাপারে মুরগী ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে মাইকিং করে ব্যবসায়ীদের সর্তক ও সচেতন করবো। এ অভিযোগ শুধু মুষ্টিমেয় কয়েকজনের নয় বরং বাজারে আসা অধিকাংশ ক্রেতাগণের। অচিরেই দৌলতপুর মুরগি বাজারের অস্বাস্থ্যকর এবং দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশ দূর করতে দৌলতপুর বাজার বনিক সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বাজারে আসা সাধারন ক্রেতারা।