স্থানীয় সংবাদ

খুলনায় চোখে মুখে সুপার গ্লু দিয়ে গৃহবধুকে ধর্ষণ ঘটনায় মূল হোতাসহ আটক ৪

খুলনা জেলা পুলিশ সুপারের প্রেস ব্রিফিং

লুন্ঠিত স্বর্ণ ও চেতনাশক ট্যাবলেট, অস্ত্র ও মোবাইল ফোন উদ্ধার, চুকনগর স্বর্ণ পট্টিতে ‘মা জুয়েলার্স’ দোকান মালিক সুমন হাওলাদার আটক, লুণ্ঠিত স্বর্ণ বিক্রির দায়ে ধর্ষণকারীর মা আটক, গৃহবধূকে পরিবার ও পুলিশের জিম্মায় হস্তান্তর

কামরুল হোসেন মনি ঃ খুলনার পাইকগাছায় চোখে মুখে সুপার গ্লু দিয়ে ও হাত-পা বেধে এক গৃহবধূকে (৪২) ধর্ষণের ঘটনায় মূল আসামীসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার দুপুরে খুলনা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার এক সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান। এ মামলায় পুলিশ এ পর্যন্ত চার জনকে গ্রেফতার করেছে। এরা হলেন, ধর্ষণ মামলার মূল হোতা ইমামুল জোয়াদ্দার ওরফে এনামুল, আব্দুস সামাদ, সুমন হালদার ও রাশিদা বেগম। এর আগে বৃহস্পতিবার খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে দুপুরে ওই গৃহবধূকে পরিবার ও পুলিশের জিম্মায় দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে গৃহবধুর স্বামী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ২-৩ জনকে আসামি করে ধর্ষণ ও দস্যুতার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। এর আগে গত সোমবার সকালে চোখ ও মুখের শক্তিশালি আঠা লাগানো এবং অচেতন অবস্থায় এক গৃহবধুকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বজনরা। ঘরের মালামাল লুট ও ওই গৃহবধূকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে চিকিৎসকদের জানিয়েছিলেন তাঁরা। রোববার রাতে প্রতিবেশিরা গৃহবধূকে ঘরের মধ্যে হাত-পা বাঁধা বিবস্ত্র অবস্থায় উদ্ধার করেছিলেন। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আরএমও এবং ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেলের (ওসিসি) সম্বনয়ক ডা: সুমন রায় ( মেডিসিন) গতকাল শুক্রবার দুপুরে এ প্রতিবেদককে বলেন, বৃহস্পতিবার ওই গৃহবধূকে তার মেয়ে ও পুলিশের জিম্মায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি বলেন, ওই গৃহবধূ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতে চিহ্ন পাওয়া গেছে। আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে ভিসেরা রিপোর্ট আসলে সব কিছু জানা যাবে। তবে একটি অসমর্থিত সূত্র মতে, গৃববধুর যৌনাঙ্গে আশ পাশে রক্তজমট দেখা গেছে। এতে বুঝা যাচ্ছে এঘটনায় সাথে আরও অনেকে জড়িত থাকতে পারে। পুলিশের দাবি অনুযায়ি, এনামুল ধর্ষণ ও লুটের সাথে জড়িত। তার মা রাশিদা বেগম লুট করা স্বর্ণ বিক্রি করেছিলেন। সুমন হালদার লুট করা স্বর্নের ক্রেতা। এই তিন জনকে বৃহস্পতিবার রাতে বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া গত বুধবার ভোর রাতে আব্দুস সামাদকে সন্দেহভাজন ব্যক্তি হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পুলিশ তাকে আদালতে হস্তান্তরর করেছে। বাকিদের আদালতে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার বলেন, গত রোববার সন্ধ্যায় ওই গৃহবধুর বাড়ির পাশের বাগানে এনামুল নেশা করতে গিয়েছিলেন। সেখানে গৃহবধুকে একাকি বাড়িতে দেখে ঘরের সানসেট ধরে ছাদের উঠে সিড়ি দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে। পরে খাবারে চেতনানাশক মিশিয়ে দিয়ে চলে যায়। পরবর্তীতে রাত ২ টার দিকে একই ভাবে পুনরায় ঘরে প্রবেশ করে মূল্যবান জিনিসপত্র খোঁজাখুজি শুরু করে। তখন গৃহবধুর ঘুম ভেঙ্গে গেলে সে পকেটে থাকা শক্তিশালি সুপার-গ্লু আঠা বের করে গৃহবধুর চোখে এবং মুখে লাগিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে হাত-পা বেধে বিবস্ত্র করে ধর্ষণ করে। পরে গৃহবধুর গোঙরানিতে পাশের বাড়ি থেকে সাড়া দেওয়ায় সে কানে থেকে কানের দুল ছিঁড়ে ও মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায়। তিনি বলেন, পরবর্তীতে লুট করা কানের দুলটি তার মা রাশিদা বেগমের মাধ্যমে চুকনগর স্বর্ণ পট্টিতে ‘মা জুয়েলার্স’ নামক দোকানে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। যে কারণে এনামুলের মা ও দোকান মালিক সুমন হালদারকেও পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তিনি জানান, এনামুল একজন দুধর্ষ অপরাধী। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় এ পর্যন্ত ৯টি মামলা দায়ের হয়েছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাত ১১ টার দিকে তাকে পাইকগাছা পূর্বকাশিমনগর থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও এক রাউন্ড তাজা গুলিসহ আটক করা হয়ে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে সে ধর্ষণের ঘটনার কথা স্বীকার করেছে। সুশান্ত সরকার বলেন, চূড়ান্ত মেডিকেল রিপোর্টে বোঝা যাবে ওই গৃহবধু গণধর্ষণ হয়েছে না-কি শুধু এনামুল ধর্ষণ করেছে। ধর্ষণ ও লুটের ঘটনায় আরো কেউ জড়িত আছে কি-না সে বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত চলছে। এজাহারে উল্লেখ করা হয় : এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর ওই গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে পাইকগাছা থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলার এজাহারে কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি, ২-৩ জন সবাই অজ্ঞাত আসামি। ওই রাতে বাড়ি থেকে স্বর্ণলাংকার ও টাকা খোয়া যাওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে মামলার এজাহারে। এ মামলায় পুলিশ এ পর্যন্ত চার জনকে গ্রেফতার করেছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button